In Depth Story on Growing Korean Culture in India: এত দেশ থাকতে কোরিয়ার প্রেমেই কেন পড়ল বাঙালি?

ঈপ্সা চ্যাটার্জী |

Sep 26, 2024 | 3:28 PM

Korean Culture in India: শুধু খাবার নয়, গান, সিনেমা থেকে সাজ-সজ্জা, পোশাক-সবই যেন রাতারাতি বদলে গিয়েছে। পছন্দের ঘুরতে যাওয়ার তালিকায় আগে যেখানে আমেরিকা বা ফ্রান্স, ইটালি থাকত, সেখানেই এখন ট্রাভেল বাকেট লিস্টে সবার আগেই থাকে দক্ষিণ কোরিয়া। এক কথায় বলা চলে, কোরিয়ান-জ্বরে কাঁপছে বাঙালি। কিন্তু এই জ্বর কি একদিনে বাঁধল? নাকি ঘুষঘুষে জ্বরটা অনেকদিন আগে থেকেই ছিল?

In Depth Story on Growing Korean Culture in India: এত দেশ থাকতে কোরিয়ার প্রেমেই কেন পড়ল বাঙালি?
কীভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠল কোরিয়ান সংস্কৃতি?
Image Credit source: TV9 বাংলা

Follow Us

আদর্শ প্রেমের জায়গা বলতে আগে সবার মনে আসত গঙ্গার পাড়। রাতারাতি সেই পছন্দের জায়গাই বলতে গেল হান রিভারে। শিউলির গন্ধ নয়, এখন চোখ দেখতে চায় চেরি ব্লসমের সৌন্দর্য্য।  কার গান শুনতে ভাল লাগে? বিটিএস। প্রিয় খাবার কী? রামেন বা কর্ন ডগ। ত্বক চর্চাতে চোখ বুজে ভরসা কোরিয়ান স্কিন কেয়ারেই। কলকাতার স্ট্রিটফুডে এখন মার্কিন, লেবানিজ বা চাইনিজের থেকে বেশি রমরমা কোরিয়ান খাবারেরই। হঠাৎ করে বাঙালির খাদ্যরস বদলে গেল কী করে? আর শুধু তো খাবার নয়, গান, সিনেমা থেকে সাজ-সজ্জা, পোশাক-সবই যেন রাতারাতি বদলে গিয়েছে। পছন্দের ঘুরতে যাওয়ার তালিকায় আগে যেখানে আমেরিকা বা ফ্রান্স, ইটালি থাকত, সেখানেই এখন ট্রাভেল বাকেট লিস্টে সবার আগেই থাকে দক্ষিণ কোরিয়া। এক কথায় বলা চলে, কোরিয়ান-জ্বরে কাঁপছে বাঙালি। কিন্তু এই জ্বর কি একদিনে বাঁধল? নাকি ঘুষঘুষে জ্বরটা অনেকদিন আগে থেকেই ছিল?

BTS পরিচয় করাল কোরিয়ান সংস্কৃতির সঙ্গে? 

ভারতে অনেকদিন আগেই ঢুকে পড়েছিল পাশ্চাত্য সংস্কৃতি। মার্কিনবাসীদের মতো খাওয়া-দাওয়া, বোল-চাল, সবই আপন করে নিয়েছিল ভারতীয়রা। হাল ফ্যাশনের জামাও আমেরিকার সংস্কৃতি থেকেই উঠে আসত। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে সেই চল ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে। সালটা ২০১৭-১৮। ব্যাপক জনপ্রিয় হতে থাকে কে-পপ বা কোরিয়ান মিউজিক। সৌজন্যে বিটিএস (BTS )। ৭ যুবকের বয় ব্যান্ড,  ব্যাঙ্গটান সোনিয়েনদান (Bangtan Sonyeondan) হাতের মুঠোয় নিয়ে নিল গোটা বিশ্বকে। ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে ১০ বছর পূরণ করেছে বিটিএস। এখন বিশ্বজুড়ে বিটিএস-র ফ্যান কোটির গণ্ডি পার করেছে। তাদের আবার পোশাকি নামও রয়েছে, ‘বিটিএস আর্মি’ (BTS ARMY)। বিটিএসের কোনও গান মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার শ্রোতার সংখ্যা কয়েক কোটি পার করে যায়। এমনকী, বিটিএসের সদস্যদের উইভার্সে (WeVerse) লাইভের দর্শকও গ্রামি অনুষ্ঠানের বেশি!

তবে তার অনেক আগেই, ২০১২ সালে বিশ্ব কাঁপিয়েছিল ‘গ্যাংনাম স্টাইল’। ইউটিউবে এখনও সবথেকে বেশি শোনা গানের তালিকায় প্রথমে কোরিয়ান গায়ক ‘সাই’ (PSY)-র এই গানই রয়েছে। শুধু তো বিটিএস নয়, ব্ল্যাকপিঙ্ক,  ২ পিএম, গার্লস জেনারেশন, এক্সো, স্ট্রে কিডসের মতো কে-পপ ব্যান্ডের ফ্যানও বাড়ছে দিনে দিনে।

এই খবরটিও পড়ুন

এরপর এল করোনাকাল। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের কারণে লকডাউন বিশ্বজুড়ে। মাসের পর মাস ঘরবন্দি হয়ে থাকা, এত সময় কাটবে কী করে? বলিউড, হলিউড সব গুলে খেয়ে নিল ওটিটি-প্রেমীরা। এবার চাই নতুন বিনোদন। তখনই পরিচয় হল কে-ড্রামার সঙ্গে। অদ্ভুতভাবে কে-ড্রামার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে যুব প্রজন্ম। যেখানে সিনেমা হলে বসে দুই ঘণ্টার সিনেমা দেখার ধৈর্য্য় নেই, সেখানেই এক ঘণ্টার ১৬ থেকে ২০ এপিসোডও এক-দুদিনেই শেষ করে ফেলে কে-ড্রামা প্রেমীরা।

কে-ড্রামার প্রতি এত ভালবাসা কেন?

যারা কে-ড্রামা বা কোরিয়ান ড্রামা দেখেন, তাদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে কেন কে-ড্রামা ভাল লাগে? তবে তারা বলবেন, কনটেন্টের জন্য। মনগ্রাহী বিষয়বস্তু, আকর্ষণীয় দৃশ্যপট, কে-ড্রামায় যা চাইবেন, তাই পাবেন। অনেকেই বলতে পারেন, বাংলা সিনেমা বা বলিউডের সিনেমায় কী গল্প থাকে না? সেখানেও তো প্রেম, মারপিট, রহস্য- সবই থাকে। তাহলে কে-ড্রামায় আলাদা কী আছে? কে-ড্রামার গল্পে থাকে নতুনত্বের মোড়ক। একই প্রেমের গল্প হলেও. তা এমনভাবে তুলে ধরা হয় যা আমার-আপনার মতো সাধারণ মানুষ মিল পাবে। কে-ড্রামায় কাহিনি, বিনোদনের সঙ্গে প্রতি পরতে মিশে থাকে বাস্তবতার ছোঁয়া। রোজনামচার জীবনও কতটা অসাধারণভাবে তুলে ধরা যেতে পারে, তার জন্য ‘রিপ্লাই ১৯৮৮’-র মতো কে-ড্রামা দেখা যেতে পারে, প্রতিশোধের কাহিনি দেখতে হলে ‘দ্য গ্লোরি’ বা ‘রিভেঞ্জ অব আদার্স’ যেমন রয়েছে, আবার গদগদ প্রেমের কাহিনি দেখতে ‘ক্র্যাশ ল্যান্ডিং অন ইউ’, ‘ডিসেনডেন্ট অব সান’ বা হালের ‘লাভ নেক্সট ডোর’ দেখলেই বোঝা যাবে সাধারণ কাহিনিও কীভাবে অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে।

কে-ড্রামা।

শুধু তো কে-ড্রামা নয়, কোরিয়ান সিনেমাও উপেক্ষা করা যায় না। অস্কার এনে দিয়েছিল ‘প্যারাসাইট’। জম্বি মুভি বললেই অনেকের মনে প্রথমেই ‘ট্রেন টু বুসান’ সিনেমার কথাই মনে পড়ে। কোরিয়ান সিনেমার ক্ষেত্রেও গল্পটা এক। নায়ক-নায়িকার থেকেও বেশি জোর দেওয়া হয় চিত্রনাট্যে। বাস্তবতার ছোঁয়া তো থাকেই, তার পাশাপাশি থাকে টানটান চিত্রনাট্য। সেই কারণেই দ্রুত জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। চাহিদা এতটাই যে ভারতীয় সিনেমাও এখন কোরিয়ান সিনেমার অনুকরণে তৈরি হচ্ছে, যেমন সলমন খানের ‘ভারত’, যা কোরিয়ান সিনেমা ‘ওড টু মাই ফাদার’-র অনুকরণ বা জন আব্রাহামের রকি হ্য়ান্ডসাম, যা ‘দ্য ম্যান ফ্রম নোওয়্যার’-র অনুকরণে তৈরি।

দৌলতে ওটিটি-

কোরিয়ান সিনেমা ও ড্রামা জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম আরেকটি কারণ হল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। নেটফ্লিক্স থেকে শুরু করে অ্যামাজন প্রাইম, হটস্টার প্লাস- এখন কমবেশি সমস্ত ওটিটি-তেই কোরিয়ান বিনোদনের ছড়াছড়ি। যারা কে-ড্রামার ফ্যান, তাদের ফোনে ভিকি, হুলু বা আইকিউওয়াই-র মতো অ্যাপও পাওয়া যাবে।

কোরিয়ান খাবারের জনপ্রিয়তা-

পুরনো দিনের হিন্দি সিনেমায় যেমন ঘুষোঘুষি বা মন্দিরে গিয়ে ভগবানের কাছে প্রাণভিক্ষা করতে দেখা যেত, একইভাবে কে-ড্রামায় অন্তত এক-দুবার নায়ক নায়িকাদের রামেন (পড়ুন রামেয়ন) বা টকবকি খেতে দেখা যাবেই। জাপানি সুশির সঙ্গে আগে পরিচয় হলেও, কোরিয়ান বিবিমবাপ বা গিমবাপের সঙ্গে পরিচিতি কিন্তু কে-ড্রামার দৌলতেই হয়েছে।

কোরিয়ান খাবার-দাবার।

কোরিয়ান বারবিকিউ দেখে এত খাওয়ার শখ যে বিভিন্ন রেস্তোরাঁতেই এখন আলাদা গ্রিল সেকশন খোলা হয়েছে কোরিয়ান খাদ্যপ্রেমীদের জন্য। কলকাতার যাদবপুর থেকে নিউটাউন- ইতিউতি গজিয়ে উঠেছে কোরিয়ান ফুড ট্রাক। সেখানে দেদার বিক্রি হচ্ছে কর্নডগ, রামেন। অনলাইনেও এখন ডেলিভারি অ্যাপগুলি খুললে দেখা যায়, কোরিয়ান নুডলের জন্য আলাদা একটি সেকশন। এতেই বোঝা যায় যে বিগত কয়েক বছরে কতটা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে কোরিয়ান সংস্কৃতি ও খাবার-দাবার।

কোরিয়ান রূপচর্চাতেই ভরসা-

শুধু তো সিনেমা বা খাওয়া-দাওয়া নয়, কোরিয়ান রূপচর্চাও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে বিগত কয়েক বছরে। কোরিয়ান হিরো-হিরোইনদের দেখে এখন সকলেরই চাই গ্লাস স্কিন। তার জন্য কোরিয়ান স্কিন কেয়ারেই ঝুঁকেছে যুব প্রজন্ম। কোরিয়ানদের মতো ১০ ধাপের ত্বক-চর্চা করা সম্ভব না হলেও, টোনার-ময়েশ্চারাইজার বা সানস্ক্রিনের গুরুত্ব বুঝেছে বাচ্চা থেকে বুড়ো।

মন কাড়ছে কোরিয়ান রূপচর্চা।

ভোলবদল চেহারাতেও-

কোরিয়ান হিরো-হিরোইনদের চেহারা দেখে, এখন যুব প্রজন্মও চায় সাইজ জিরো চেহারা। এবারের পুজোয় চুলের ছাঁটে সবথেকে বেশি ডিমান্ড ‘বাটারফ্লাই কাট’ বা ‘উলফ কাটে’র। এগুলোরও আমদানি সেই দক্ষিণ কোরিয়া থেকেই। পোশাকের ক্ষেত্রে আগে যেমন আমেরিকানদের শর্টস স্কার্ট, জিনসের বেশি জনপ্রিয় ছিল, সেখানেই এখন বাজার ছেয়ে গিয়েছে কোরিয়ান ব্যাগি টি-শার্ট-ট্রাউজার বা ম্যাক্সি ড্রেস। স্ট্রিট স্টাইলে কোরিয়ান সংস্কৃতির ছাপ স্পষ্ট। কয়েক বছর আগে যেখানে স্মোকি আইজস, চড়া হাইলাইটারই মেকআপ ছিল, এখন কোরিয়ান প্রীতির দৌলতে লাইট মেকআপ, গ্লিটার আইজ বা হালকা পিঙ্ক ব্লাশ জনপ্রিয়। বলিউডের নায়িকারাও এই ট্রেন্ড ফলো করছেন।

Next Article