ঢাকা: আন্তঃসীমান্ত নদীর জল বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার বসার জন্য শীঘ্রই পদক্ষেপ করবে বাংলাদেশ। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এমনটাই জানিয়েছেন সেই দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলসম্পদ উপদেষ্টা, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময়, তিস্তার জল বণ্টনের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত ছিল ভারত ও বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজ্যে জলের ঘাটতির কথা জানিয়ে, সেই চুক্তিকে সমর্থন করেননি। তাই চুক্তিটি সেখানেই থমকে গিয়েছিল। এর আগেই সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছিলেন, ওই চুক্তি থেকেই তিস্তার জল বন্টনের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে চায় ইউনুস সরকার।
বুধবার বাংলাদেশের পানি ভবনে ‘অভিন্ন নদীতে বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যা’ নামে এক সেমিনার হয়। সেখানেই সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, উজানের দেশ এবং ভাটার দেশের মধ্যে যাতে জলের সুষম বণ্টন হয়, তা নিশ্চিত করতে সার্ক এবং আসিয়ান দেশগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ চায় নয়া বাংলাদেশ সরকার। তিনি আরও জানান, বৃষ্টির ফলে নদীর জলস্তর বাড়লে, রীতি অনুযায়ী সেই তথ্য প্রতিবেশি দেশকে জানাতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত তা না করে, বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে দেখেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, “ভারতের সঙ্গে এই প্রশ্নে সমঝোতা থাকা জরুরি। সাম্প্রতিক বন্যায় ভারী বৃষ্টির তথ্য আগে পাওয়া গেলে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যেত। দিল্লির কাছে এই সব বিষয় জোরালো ও স্পষ্টভাবে উত্থাপন করতে হবে।”
বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অংশে বন্যার জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে বারবার নয়া দিল্লির দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। তবে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশকে জানিয়েই জল ছাড়া হয়েছিল। তিনি জানান, “এটা তো প্রতি বছরই হয়। বর্ষায় জলস্তর এমনিই বেড়ে যায়। ফরাক্কা তো ড্যাম নয়, ব্যারাজ। নির্দিষ্ট স্তরের পর জল তো বয়ে যাবেই। প্রোটোকল মেনে জয়েন্ট রিভার কমিশনের বাংলাদেশের আধিকারিকের সঙ্গে তথ্যও ভাগ করা হয়। এবারও তার অন্যথা হয়নি।”
হাসিনা সরকারের পতনের আগে, এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে নয়া দিল্লি সফরে এসেছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। মোদী সরকারের সঙ্গে হাসিনা সরকারের জল বন্টন নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। তার বদলে এই নদীগুলিতে কীভাবে জল বাড়ানো যায়, সেই বিষয়ে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে একটি সমীক্ষা চালানো হবে বলে ঠিক হয়েছিল। ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের যাওয়ার কথা ছিল ঢাকায়। তবে হাসিনা সরকারের সেই সকল সিদ্ধান্তর এখন আর কোনও মূল্য নেই বাংলাদেশে।