TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী
Jul 23, 2022 | 9:20 AM
জীবন সব সময়ই অনিশ্চিত। অনেকটা ক্রিকেট খেলার মতো। একটা বলে আউট হয়ে গেলেই হল। আর সুযোগ মিলবে না। তবে, তার মধ্যেও স্বাস্থ্য বীমা গ্রহণ করা বা আরো বিভিন্নভাবে জীবনে কিছুটা নিশ্চয়তা আনা র চেষ্টা করি আমরা। কিন্তু, কোভিড-১৯ মহামারির মতো বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় সেই আস্থাটুকু নড়িয়ে দিয়েছে। তার উপর চোখের সামনে ঘটছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। কালো মেঘ ঘনাচ্ছে পরমাণু অস্ত্রের। চোখের সামনে দ্রুত বদলে যাচ্ছে জলবায়ুও। তাও বেশ ভালভাবেই টের পাওয়া যাচ্ছে। তবে কি পৃথিবীর শেষ আসন্ন? তা কেই বা বলতে পারে? তবে, বিশ্বব্যাপী কী কী বিপর্যয় নেমে আসলে সভ্যতার সমাপ্তি ঘটতে পারে, তার একটা তালিকা তৈরি করেছে 'গ্লোবাল চ্যালেঞ্জেস ফাউন্ডেশন'। কী কী চ্যালেঞ্জ নেমে আসতে পারে মানব সভ্যতার সামনে? আসুন দেখে নেওয়া যাত সংস্থার বার্ষিক মূল্যায়নে কোন নয়টি বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
মানুষের তৈরি গণবিধ্বংসী অস্ত্র - ইতিহাসে প্রথমবার পৃথিবী ধ্বংস হতে পারে মানুষের কারণে। মানুষের হাতে এখন রয়েছে একাধিক ব্রহ্মাস্ত্র। পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ থেকে রয়েছে। নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির পরও পারমাণবিক অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যাচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে। বিপদ আরও বাড়িয়েছে জৈব এবং রাসায়নিক যুদ্ধের সম্ভাবনা।
জলবায়ু পরিবর্তন - জলবায়ু পরিবর্তন এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত সমস্যা। তবে এখনও অনেকেই মনে করেন, বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় ঘটানোর মতো বিপজ্জনক সমস্যা এটা নয়। তবে, গ্লোবাল চ্যালেঞ্জেস ফাউন্ডেশনের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ক্রমে বাড়ছে। তাদের অনুমান, মানুষের কাজকর্মে প্রাকৃতিক কারণের তুলনায় পৃথিবীর জলবায়ু ১৭০ গুণ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। যা বিশ্বউষ্ণায়ন এবং তার সঙ্গে সঙ্গে দেশত্যাগ, খাদ্য নিরাপত্তার হুমকির পাশাপাশি ব্যাপক হারে প্রাণী ও উদ্ভিত প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটাতে পারে। বাস্তুতন্ত্রে যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
বাস্তুতন্ত্রের পতন - মানব জীবনের মূল ভিত্তিই হল পরিবেশের বাস্তুতন্ত্র। বাস্তুতন্ত্রই আমাদের প্রয়োজনীয় বায়ু, জল, খাদ্য, আশ্রয় এবং শক্তি সরবরাহ করে। এই বাস্তুতন্ত্রের উপর মানুষের অত্যাচার ক্রমেই বাড়ছে। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের পর, গুরুতর ব্যাঘাত ঘটলে কিন্তু সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্রই ভেঙে পড়তে পারে। মাটির গুণমান, মিষ্টি জলেরল উৎস বদলে গিয়ে মারাত্মকভাবে হ্রাস হতে পারে জীববৈচিত্র্য। কমে য়েতে পারে কৃষি উৎপাদনশীলতা। যার অবধারিত ফল ভোগ করতে হবে মানব সভ্যতাকে।
মহামারি - কোভিড-১৯ মহামারির আগে বিশ্বব্যাপী মহামারি স্রেফ কল্পনার জগতেই ছিল। তবে, মানুষ এখন জানে, একটি অত্যন্ত প্রাণঘাতী অসুস্থতা কীভাবে গোটা বিশ্বকে অচল করে দিতে পারে। এর আগে প্লেগ, গুটিবসন্তের মতো মহামারি আটকানো গিয়েছিল। তবে, যত দিন যাচ্ছে ততই জনসংখ্যা, নগরায়নের ক্রমবৃদ্ধি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্রমে উন্নত হওয়ায় মহামারির বিপদও বাড়ছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা - মানব জীবকে আরও উন্নত করার লক্ষ্য়েই আবিষ্কার করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের। মানুষের ভাবনার ক্ষমতা যেখানে ফুরায়, সেখানেই শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। মানব সভ্যতা নতুন উন্নতির স্তরে নিয়ে যাবে এআই, এমনটাই আশা করা হয়। তবে, বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানব সভ্যতার অবলুপ্তিও ঘটাতে পারে। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই বর্তমানে দ্রুত মানুষের জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এরকম উন্নত এআই প্রোগ্রাম খারাপ লোকের হাতে পড়লে তা খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতে পারে। যার প্রভাবে সমাপ্তি ঘটতে পারে পুরো সভ্যতারই।
সুপারভলক্যানো বিস্ফোরণ - সুপারভলক্যানো অর্থাৎ একটি বৃহৎ-আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে অন্তত ৪০০ ঘনকিমি উপাদান নিক্ষিপ্ত হয় বলে মনে করা হয়। এই ধরনের বৃহৎ অগ্ন্যুৎপাত যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে এবং পৃথিবী ব্যাপী বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আনুমানিক ৭৪,০০০ বছর আগে, ইন্দোনেশিয়ার টোবা সুপার আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল। যার থেকে বের হওয়া ধুলো এবং সালফার ডাই অক্সাইড ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বব্যাপী। ঢেকে গিয়েছিল সূর্য। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা হঠাৎ ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কমে গিয়েছিল। যার প্রভাবে বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটেছিল। বিজ্ঞানীদের অনুমান, গড়ে প্রতি ১৭,০০০ বছরে এমন একটি বৃহৎ অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। সর্বশেষ সুপারভলক্যানিক অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল নিউজিল্যান্ডে, ২৬,৫০০ বছর আগে।
গ্রহাণুর ধাক্কা - গ্রহাণুর ধাক্কায় বিলুপ্ত হয়েছিল ডাইনোসরকূল। তাদের ভয়াবহ পরিণতির কথা ভোলা অসম্ভব। আমাদেরও একই পরিণতি ঘটতে পারে। ১ কিমি ব্যাসের একটি গ্রহাণু পৃথিবীর কাছাকাছি এসে পড়লেই মানব সভ্যতা মুছে যেতে পারে। ১৪০ মিটার থেকে এক কিমি ব্যাসের ছোট গ্রহাণুগুলিও একটা গোটা মহাদেশে বিপর্যয় ডেক আনার ক্ষমতা রাখে। ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত থোট-বড় মিলিয়ে মোট ২৬,০০০ টিরও বেশি গ্রহাণু অবিষ্কার করা হয়েছে, যাদের পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷
সোলার জিওইঞ্জিনিয়ারিং - জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে দুটি প্রযুক্তির কথা ভেবেছেন বিজ্ঞানীরা - কার্বন অপসারণ এবং সৌর জিও ইঞ্জিনিারিং। সম্মিলিতভাবে দুটি পদ্ধতিকে জিওইঞ্জিনিয়ারিং বলে। কার্বন অপসারণ পদ্ধতি, বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। সৌর জিওইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতির লক্ষ্য হল সূর্যালোক এবং সৌর তাপকে মহাকাশে প্রতিফলিত করে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানো। তবে, এই দুই পদ্ধতির নিজস্ব বিপদ রয়েছে। প্রথমত, এতে স্থানীয় এবং বৈশ্বিক জলবায়ুকে অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে মানুষ এখনো খুবই কম জানে। সেগুলি নিয়ে নাড়াচাড়া করলে কী ফল হতে পারে, তাও অজানা।
ভবিষ্যতের অজানা ঝুঁকি - ভবিষ্যৎ একেবারে অনিশ্চিত। গ্লোবাল চ্যালেঞ্জেস ফাউন্ডেশন সংস্থা বলেছে, অন্যান্য অনেক বিপদ রয়েছে যা পৃথিবীর পক্ষে বিপর্যয়কর হয়ে উঠতে পারে। ন্যানো-প্রযুক্তি, সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের মতো অজানা বিপদে শেষ হয়ে যেতে পারে মানব সভ্যতা। পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ, কোভিড মহামারির মতো বিপদের কথাই বা কে আগে ভাবতে পেরেছিল?