খুলেছেন চাকরি খাওয়ার মন্ত্রক, ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে আমার-আপনার চাকরিও কেড়ে নেবে?

ঈপ্সা চ্যাটার্জী |

Nov 21, 2024 | 6:19 AM

Donald Trump: আমেরিকাকে আবার গ্রেট করে তুলতে ট্রাম্পের নীতি হল বাইরের জিনিস দেশে ঢুকতে দেব না। সবকিছু আমাদের দেশে তৈরি হবে। বিভিন্ন আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। আর তাহলে প্রথমেই যেটা হবে ভারতের বস্ত্র ও ওষুধ শিল্প এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণকারী সংস্থাগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে।

খুলেছেন চাকরি খাওয়ার মন্ত্রক, ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে আমার-আপনার চাকরিও কেড়ে নেবে?
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
Image Credit source: PTI

Follow Us

ওয়াশিংটন: মার্কিন প্রশাসন যখন চিনকে নিয়ে চিন্তায়, তখন আমেরিকার আম-জনতার একটা অংশ তাঁদের নতুন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে চিন্তায়। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, চিন্তার কারণ আছে বইকী।  নিশ্চয় মনে আছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প চাকরি খাওয়ার মন্ত্রক খুলছেন, যার নাম দিয়েছেন ডিপার্টমেন্ট অফ গর্ভনমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা ডজ। এ খবর অনেকের জানা। তবে জানেন কী, শুধু মার্কিনিদের নয়, আমার-আপনার চাকরিটাও খেয়ে ফেলতে পারেন তিনি।

সহজ কথায় বলতে গেলে, ট্রাম্পের নীতি বা পলিসির জেরে ভারতীয়দেরও চাকরি যেতে পারে। এবং সেটা বিভিন্ন সেক্টরে। বিষয়টি খুলে বলা যাক। দুনিয়ার তাবড় অর্থনীতিবিদরা যে ভবিষ্যতের আশঙ্কা করছেন। ব্যাখ্যাটা খুব সহজ। পরপর সাজিয়ে নিয়ে দেখলেই সব জলের মত পরিষ্কার হয়ে যাবে। ভোটের প্রচারে ট্রাম্পের মূল দুটো স্লোগান ছিল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ আর ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’।

আমেরিকাকে আবার গ্রেট করে তুলতে ট্রাম্পের নীতি হল বাইরের জিনিস দেশে ঢুকতে দেব না। সবকিছু আমাদের দেশে তৈরি হবে। বিভিন্ন আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। আর তাহলে প্রথমেই যেটা হবে ভারতের বস্ত্র ও ওষুধ শিল্প এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণকারী সংস্থাগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে। প্রতিযোগী দামে বা কম্পিটিটিভ প্রাইসে তারা আমেরিকায় জিনিস রফতানি করতে পারবে না। পরিণাম, আমাদের দেশে জব কাট।

এছাড়া এইচ ১-বি ভিসার নিয়মেও কড়াকড়ি আনতে পারেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যা আমাদের দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে লোকসানের মুখে ফেলতে পারে। এই পর্যন্ত শুনে আপনারা হয়ত ভাবছেন, আমি বা আমার পরিবারের কেউ এইসব সেক্টরে চাকরি করি না। তাহলে খামোখা ভাবতে যাবো কেন। কেন ভাবতে হবে, সেটা এবার জানুন।

ট্রাম্প তো কলমের একটা খোঁচায় ইমপোর্ট ডিউটি বাড়িয়ে দেবেন। কিন্তু, মার্কিন মুলুকেই সব পণ্য তৈরি করার কাজটা এত তাড়াতাড়ি হবে না। ফলে আমেরিকায় জিনিসের দাম বাড়বে। আমেরিকার পণ্য যারা আমদানি করে, তারাও বসে থাকবে না। তারাও মার্কিন পণ্যের ওপর চড়া শুল্ক বসিয়ে দেবে। তাতে আমেরিকার এক্সপোর্ট সেক্টর মার খাবে। দুনিয়াজুড়ে ট্যারিফ ওয়ার শুরু হয়ে গেলে গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে ধাক্কা নেমে আসবে। তছনছ হয়ে যাবে অর্থনীতির স্বাভাবিক ছন্দ। দেশে দেশে জিনিসের দাম বাড়বে। আমেরিকায় জিনিসের দাম বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি কমাতে ও দেশের ফেডারাল ব্যাঙ্ক সুদের হার বাড়িয়ে দেবে।

বিগ কর্পোরেটের হাত মাথায় নিয়ে ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেছেন। বলেছেন গদিতে বসেই তিনি কর্পোরেট ট্যাক্সে ঢালাও ছাড় দেবেন। যার মানে ওয়াশিংটনের কোষাগারে টান পড়বে। মার্কিন সরকার তখন ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে খোলা বাজার থেকে ধার নেওয়া বাড়াতে বাধ্য হবে। এর ফলে ফের একদফা সুদ বাড়বে। সুদ বাড়া মানে নতুন লগ্নি আসবে না। বেসরকারি সংস্থাগুলোর ব্যবসা চালানোর খরচ বেড়ে যাবে। আস্তে আস্তে মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হবে। যা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করবে সারা দুনিয়াতেই।

আর মন্দা আনবে ছাঁটাই। ছাঁটাই আনবে চাহিদার অভাব। চাহিদার অভাব আবার আনবে মন্দা। তৈরি হবে একটা ভয়ঙ্কর চক্র। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে কেন বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের নীতিতে আমার-আপনার চাকরি যেতে পারে।

মার্কিন অর্থনীতিবিদদের একাংশ তো সরাসরিই বলছেন আমেরিকাকে গ্রেট বানাতে গিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট দেশকে ডুবিয়ে ছাড়বেন। সঙ্গে ডোবাবেন বাকি দুনিয়াকেও। এখানেই শেষ নয়। মার্কিন মুলুকে ট্রাম্প বিরোধীরা বলছেন যে আজীবন হোয়াইট হাউসে থাকার প্ল্যানও নাকি তৈরি করে ফেলতে চাইছেন তিনি। আর সেটা বাস্তবায়িত হলে গণতন্ত্র নিয়ে গর্ব করাটাও ঘুচে যাবে আমেরিকার।

Next Article