ফেসবুক (Facebook) হীন রাতে কি আপনি সত্যিই শান্তিতে ঘুমলেন? নাকি বারবার জেগে গিয়ে পেজ রিফ্রেশ করে দেখলেন সে এল কিনা? তারপর যখন ভোরবেলা দেখলেন মার্ক জুকারবার্গ (Mark Zuckerberg) ‘সরি’ লিখেছেন তখন পড়ল স্বস্তির নিঃশ্বাস। ‘যাক বাবা এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম’, ভাবখানা যেন অনেকটা এরকম। গতকাল রাতে যখন দুম করে বন্ধ হয়ে গেল ফেসবুক, তখন যেন গেল গেল রব উঠেছিল নেট দুনিয়ায়। আর রবই বা তুলবেন কোথায়, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ (Whatsapp) সবই তো বন্ধ। অগত্যা রাতবিরেতে টুইটারকে (Twitter) মনে পড়লে অনেকের। কেউ কেউ আবার তড়িঘড়ি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুললেন। আর রাত জুড়ে যে ফেসবুক কর্তাকে শাপ শাপান্ত করেছেন, সকালবেলা তার ‘সরি’ দেখে মন গলে গেল। অনেকেই রাতভর জমে থাকা সেই ক্ষোভ হতাশা উগরে দিলেন মার্ক জুকারবার্গের কমেন্ট বক্সে।
রাগ কিংবা হতাশাকে নিছক মজায় বদলে ফেলায় নেট নাগরিকদের জুড়ি মেলা ভার। তাই গতকাল রাতে কেউ কেউ ভেবে ফেললেন মার্ক জুকারবার্গ হয়তো স্ক্রু ড্রাইভার নিয়ে মিটার বক্স খুলে তার ঠিক করছেন, কেউ কেউ আবার ভেবে নিলেন এক গলা তারের মধ্যে ডুবে জুকারবার্গ হয়তো জড়াজড়ি করে মরছেন। তবে হ্যাঁ ফেসবুক বন্ধ থাকায় এসব মিম সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা সম্ভব হয়নি। সকাল হতেই মার্ক জুকারবার্গ নিজেই করে দিলেন সেই সুযোগ।
ভারতীয় সময় অনুযায়ী ভোরের দিকে ফেসবুকে একখানা পোষ্ট করেন জুকারবার্গ। ফেসবুক স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য যাওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। পাশাপাশি জানিয়ে দেন যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ সব একেবারে আগের মত হয়ে গিয়েছে। ব্যাস আর যায় কোথায়! যার যত মিম বানানো ছিল সব ফেলে দিলেন জুকারবার্গের কমেন্ট বক্সে। কেউ কেউ লিখলেন ‘বাহ আপনার কি দায়িত্ববোধ’, আবার কেউ কেউ যা লিখলেন তার বাংলা মানে করলে দাঁড়ায়, ‘বড় বড় সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন ছোট ছোট ঘটনা হয়েই থাকে’। কেউ কেউ বললেন বটে, ‘একটা রাত অন্তত শান্তির ঘুম ঘুমোলাম।’ কিন্তু কতটা শান্তি পেলেন তা তো সকাল হতেই বোঝা গেল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
যারা হয়তো পাশের বাড়ির কাছে মুখ চোরা বলে পরিচিত, সেই হয়তো ফেসবুক এর সৌজন্যে যারপরনাই বাক্যবাগীশ। সাত চড়ে রা কাটে না, এমন লোকজনও নেটদুনিয়ায় দারুন এক্সপ্রেসিভ। কিন্তু ফেসবুক বন্ধ হয়ে গেলে তাদের সেই এক্সপ্রেশন যাবে কোথায়? সোমবার রাতে ফেসবুক বন্ধ না হয়ে গেলে হয়তো তারা মনেই করতে পারত না যে এমন একটা বিকল্প আছে। ফেসবুক বন্ধ, ইনস্টাগ্রাম বন্ধ, এমন সময় মনে পড়ল টুইটারের কথা। মোটামুটি সেলিব্রিটি বা বিদ্বজনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা টুইটারেও কাল দেখা গেল আপামর নেট নাগরিকদের ছড়াছড়ি। সেখানেই সবাই নিজেদের চিন্তা ভাবনা প্রকাশ করতে শুরু করলেন। এত বেশি টুইট-রিটুইটের দাপাদাপি বেড়ে গেল, যে সেই সুযোগে ব্যবসা করে নিল কোনও কোনও সংস্থা। টুইটারে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালানোর জন্য ওই কয়েক ঘন্টাকেই বেছে নিল বেশ কিছু সংস্থা।
লোকাল ট্রেনে যে হকাররা ওঠে তা তাদের একটা সিগনেচার টিউন আছে। নিত্যদিনের যাতায়াতে তাদের কন্ঠ না শুনলে মনে হয় ট্রেনে ওঠাটাই বৃথা। ঠিক তেমনই ঘুমোনোর আগে দু’চারটে ভিডিয়ো না দেখলে মনে হয় রাতটাই বৃথা। সবই যে প্রয়োজনের তেমনটা নয়, বেশিরভাগই অপ্রয়োজনের। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ খুললেই কিছু কিছু চেনা স্বর শোনা যায়, ‘হাই গাইজ.. আমি চলে এসেছি’, ‘আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন? ‘ সোমবার রাতে আচমকা সে সব বন্ধ। যেন এক অদ্ভূত এক নৈঃশব্দ্য। ওই শীতকালের সিলিং ফ্যান হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেলে যেরকম অস্বস্তি হয় সেরকমই ব্যাপার।
তবে সবটাই যে অপ্রয়োজনীয় তা নয়। অনেকেই অপ্রয়োজনে ব্যবহার করেন ফেসবুক। বিশেষত এই লকডাউনের জমানায় রোজগারের পথ গিসেবে অনেকেই ফেসবুককে বেছে নিয়েছেন। কেউ জিনিস বিক্রি করছেন, কেউ গান গাইছেন, কেই মজাদার ভিডিয়ো বানাচ্ছেন। এমন অনেকেই ভয় পেয়ে বসেছিলেন। এ পথটাও কি তবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে! তবে সকাল সকাল অবশ্য কাটল সে ভয়। তবে এসবের মাঝে কয়েকশ কোটি টাকা খুইয়ে বসলেন জুকারবার্গ নিজে।