নিউ ইয়র্ক: ২০ বছর পেরলেও অভিশপ্ত ১১ সেপ্টেম্বরের (9/11 Attack) সেই দৃশ্য আজও চোখে ভাসে গোটা বিশ্বের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিমানের ধাক্কায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল আমেরিকার দুই গুরুত্বপূর্ণ ভবন। পেন্টাগন (Pentagon) আর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের (World Trade Centre) মতো দুটি টাওয়ার ধুলিষ্যাৎ হয়ে যায়। ২০০১-এর সেই হামলার পর ২০ বছর কেটে গেলেও এখনও নিজেকে প্রতিনিয়ত দোষ দেন ভগান অ্যালেক্স। বিমানবন্দরে দুই হাইজ্যাকার প্রবেশ করার সময় তিনি ছিলেন টিকিট এজেন্ট। ১১ সেপ্টেম্বর ওই দু’জনে লাগেজ পরীক্ষা হয় তাঁর তত্ত্বাবধানেই। দুই যাত্রীর দেরি হওয়া সত্ত্বেও তাদের বিমানে ওঠার ব্যবস্থা করে দেন অ্যালেক্স। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় টুইন টাওয়ার। পরের দিন সকালে যখন এফবিআই-এর তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তখনই তিনি জানতে পারেনম কত বড় ভুল তিনি করে ফেলেছেন।
ডুলাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টিকিট এজেন্ট ছিলেন ভগান অ্যালেক্স। সেই দিনটা এখনও ভুলতে পারেন না তিনি। দুই হাইজ্যাকার সালেম ও নাওয়া আল হাজমি যখন বিমানবন্দরে প্রবেশ করছে, তখন তিনি ছিলেন কর্তব্যরত। অ্যালেক্সের কাউন্টারেই এসে হাজির হয় তারা। ফ্লাইট ৭৭ ধরার কথা ছিল তাদের। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের তুলনায় বেশ কিছুটা দেরি করে ফেলেছিল তারা। কিন্তু তাদের কাছে ছিল ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট। তাই যাত্রীদের সুবিধার স্বার্থেই তাঁদের বিমান ধরার ব্যবস্থা করে দেন আ্যালেক্স। কিছুক্ষণ পরই পেন্টাগনের পশ্চিম দিকে ভেঙে পড়ে সেই বিমান, ফ্লাইট ৭৭।
অ্যালেক্স জানান, তিনি চাইলেই পারতেন ওই দুজনকে বিমান ধরার অনুমতি না দিতে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি এখনও নিজেকে দোষ দিই। আজও মনে হয় সে দিন ওদের প্রবেশ করতে না দিতাম, যদি আমি এজেন্টদের বলে দিতাম যে এই দু’জনের দেরি হয়ে গিয়েছে অনেক, তাই এদের পরের বিমান ধরতে হবে। এটুকু করা তো আমার কাছে কোনও ব্যাপারই ছিল না।’ দুপুরে বিমান ধরতে বলতেই পারতেন তিনি।
ওই দু’জন এখনও অ্যালেক্সের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। তিনি জানান, দু’জনকেই একটু অদ্ভু লেগেছিল তাঁর। একজন ছিল একটু কড়া ধাতের। অন্যজন আর একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল, তার মুখ-চোখ কোনও এক অজানা খুশিতে জ্বলজ্বল করছিল। সে কার্যত নাচতে শুরু করেছিল বিমানবন্দরেই। অ্যালেক্স দেকে ভেবেছিলেন প্রথমবার বিমানে ওঠার খুশিতে বোধহয় নাচছে ছেলেটি। এমন অদ্ভুত আচরণ করেছিল বলেই মনে আছে অ্যালেক্সের। তিনি আরও জানিয়েছেন, দ্বিতীয়জনকে কিছু জিজ্ঞেস করা হলেও সে বিশেষ কোনও উত্তর দেয়নি, শুধু হেসে চলে গিয়েছিল।
এর কয়েক ঘণ্টা পরই ভয়াবহ হামলার কেঁপে ওঠে গোটা বিশ্ব। আমেরিকা জুড়ে তখন স্বজন হারানোর কান্না। অ্যালেক্সের মাথাতেও আসেনি যে এতে তাঁর কোনও ভূমিকা থাকতে পারে। পরের দিন দুপুরে এফবিআই থেকে ফোন আসে তাঁর কাছে। তাঁকে নিয়ে গিয়ে হাইজ্যাকারদের যে ছবি দেখানো হয়, তা দেখেই চিনতে পারেন অ্যালেক্স। ওই বিমানের সব ক্রুদেরও চিনতেন তিনি। ৯/১১ কমিশনের রিপোর্টেও ছিল অ্যালেক্সের নাম। পরে ২০০৮ সালে আমেরিকান এয়ারলাইনসের আজ থেকে অবসর নেন তিনি।
১১ সেপ্টেম্বরের ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৯৭৭ জন। আফগানিস্তানে বসে আল-কায়েদা জঙ্গিরা পরিকল্পনা করে চালিয়েছিল সেই হামলা। আর তাতেই ধ্বংস হয়ে যায় আমেরিকার টুইন টাওয়ার। মোট ৪টি বিমান সে দিন হাইজ্যা করেছিল আত্মঘাতী জঙ্গিরা।
আরও পড়ুন: Afghan Situation: ইসলামাবাদে বৈঠকে হাজির চিন-রাশিয়া, কাবুল থেকে ফিরে কী বার্তা দিলেন আইএসআই প্রধান?