কলম্বো: চরম সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka)। করোনাকালে দেশের বাণিজ্য, শিল্প সহ একাধিক ক্ষেত্র থমকে দাঁড়ানোয় বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ভারতের প্রতিবেশী দেশ। তাই উপরে চিনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদের বোঝায় আরও ডুবে গিয়েছে অর্থনীতি। এমনই ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে দেশের ডিজেল ভাণ্ডার শেষ হয়ে গিয়েছে। ফুরিয়ে এসেছে খাদ্যশস্য সহ অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল ভারত (India)। ১০ কোটি ডলারের ক্রেডিট লাইনে ৪০ হাজার টন ডিজেল (Diesel) পাঠানো হল শ্রীলঙ্কায়। আজ সকালেই ভারতীয় জাহাজটি শ্রীলঙ্কায় গিয়ে পৌঁছয়। বিকেল থেকে ডিজেল বিতরণ শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে সবথেকে বড় আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে রাবণের দেশ। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য কেনা বা আমদানির জন্যও বিদেশি মুদ্রা নেই সে দেশের সরকারের কাছে। বাস থেকে শুরু করে সমস্ত গণপরিবহনেই প্রায় ডিজেল ব্যবহার করা হয় শ্রীলঙ্কায়। কিন্তু গোটা দেশেই আর এক ফোঁটা ডিজেল নেই। খালি হয়ে গিয়েছে সবকটি পাম্পই। বেসরকারি বাস চলাচল ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই ভারতের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। সেই ডাকেই সাড়া দিয়ে শ্রীলঙ্কায় ৪০ হাজার টন ডিজেল পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছে কোনও টাকা না থাকায় ১০ কোটি টাকার ক্রেডিট লাইনে এই তেল সরবরাহ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, শুক্রবারই শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ গোটা দেশে জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেছেন। এরফলে দেশের নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বিনা বিচারেই কাউকে গ্রেফতার ও দীর্ঘ সময় বন্দি করে রাখার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে। দেশের আর্থিক সঙ্কটের কারণে বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্টের বাড়ির বাইরে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা যে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তার জেরেই এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
গতকাল রাতেও গল, মাতারা ও মোরাতুয়া সহ একাধিক জায়গায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। দেশের উত্তর ও মধ্যবর্তী অংশেও একাধিক জায়গায় অশান্তির আঁচ ছড়িয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পেট্রোল-ডিজেল না থাকায় গোটা দেশের ট্রাফিক ব্য়বস্থা থমকে দাঁড়িয়েছে। মাঝরাস্তাতেই অনেক গাড়ি থেমে যাওয়ায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার আয়ের অন্য়তম পথ ছিল পর্যটনই। করোনা সংক্রমণের কারণে সেই শিল্পই থমকে দাঁড়ায়। একইসঙ্গে প্রশাসনের ভুল সিদ্ধান্ত ও একের পর এক ঋণ গ্রহণকেও আর্থিক মন্দার অন্যতম কারণ হিসাবে মনে করছেন অনেকে। শুক্রবারের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে শ্রীলঙ্কার মুদ্রাস্ফীতি ১৮.৭ শতাংশে বেড়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে খাদ্যশস্যের দামও প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।