অ্যাডিলেড: তার দিয়ে বেঁধে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছিল ২১ বছরের ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছাত্রী জেসমিন কওরকে। অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার রেঞ্জে নার্সিং-এর ছাত্রী ছিলেন তিনি। প্রেমে প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারেনি তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক তারিকজোৎ সিং। বুধবার (৫ জুলাই), এমনটাই জানিয়েছে সেখানকার এক আদালত। ২০২১ সালের মার্চে সে জেসমিনকে অপহরণ করেছিল এবং তারপর নৃশংসভাবে তাঁকে হত্যা করেছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জেসমিন হত্যার দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালতে অজি পুলিশ জানিয়েছে, একটি অগভীর কবরে থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল জেসমিনের দেহ। শুনানির সময় জানা যায়, তারিকজোতের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছিলেন জেসমিন। কিন্তু, তা মেনে নিতে পারেনি সে। আর সেই কারণেই জেসমিনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। আদালতে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।
জেসমিন কওরের মা রশপল কওর জানিয়েছেন, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরও, তাঁর মেয়ের প্রতি আচ্ছন্ন ছিল তারিকজোৎ। জেসমিন অন্তত একশ বার তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু, সে মানতেই চায়নি। অ্যাডিলেডের এক হাসপাতালে কাজ করতেন জেসমিন। সেখান থেকেই তাঁকে অপহরণ করেছিল তারিকজোৎ। তারপর, জেসমিনকে একটি গাড়ির ডিকিতে বন্ধ করে, ওই অবস্থায় প্রায় চার ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়েছিল। ফ্লিন্ডার রেঞ্জে পৌঁছে জেসমিনের চোখ বেঁধে, তার এবং ডাক্ট টেপ দিয়ে তাঁর হাত-পা বেঁধে একটি অগভীর কবর খুঁড়ে জীবন্ত অবস্থাতেই কবর দিয়েছিল। আদালতে পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, সচেতনভাবে তা অনুভব করতে হয়েছিল জেসমিনকে। শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করলে নাকে-মুখে ঢুকে গিয়েছে মাটি। এইভাবে হত্যাকে ‘চরম সন্ত্রাস’ বলেছে অস্ট্রেলীয় আদালত।
তাঁর মেয়েকে শেষ মুহুর্তে যে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে, তা তিনি ভাবতেই পারেন না বলে জানিয়েছেন জেসমিনের মা। শুনানি চলাকালীন যে বিষয়গুলি উঠে এসেছে, সেই ঘটনার ভয়াবহতায় তিনি বিস্মিত বলে জানিয়েছেন রশপল। তিনি বলেছেন, “ও যে কী মারাত্মক বিপদের মধ্যে পড়েছিল, তা ভেবেই আমি শিউরে উঠছি। ওকে উদ্ধার করার জন্য কেউ ছিল না। পৃথিবীতে ওর শেষ ঘন্টায় মানবতার সবথেকে খারাপ রূপের পরিচয় পেয়েছিল ও। জেসমিন চলে যাওয়ায় আমার মন ভেঙে গিয়েছে। ও খুব ভাল ছোট্ট একটা মেয়ে ছিল। আমার মেয়ের সঙ্গে তারিকজোৎ যা করেছে, আমি ওকে কখনই ক্ষমা করব না। ওর কড়া সাজা হোক, এটাই আমি চাই।”