নয়া দিল্লি এবং মালে: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপ সফরকে কটাক্ষ করে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন মলদ্বীপের জনৈক মন্ত্রী মরিয়ম শিউনা। আর এই নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে চলছে জোর বিতর্ক। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপে মলদ্বীপের পর্যটন ধাক্কা খাবে, এই আশঙ্কাতেই এই কটাক্ষ করেছেন দ্বীপরাষ্ট্রটির ওই মন্ত্রী। রবিবার, এই বিষয়ে মলদ্বীপ সরকারের কাছে সরকারিভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। মলদ্বীপ সরকারও জানিয়েছে, মন্ত্রীর মন্তব্য তাদের সরকারি নীতির সঙ্গে মানানসই নয়। তবে, তার আগেই যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মলদ্বীপ ভ্রমণ বয়কট করার ডাক দিয়েছেন ভারতীয়রা।
ভারতীয়দের কাছে সমুদ্র সৈকত হিসেবে মলদ্বীপ অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। কথায় কথায় বলিউড সেলেবরা মলদ্বীপে যান ছুটি কাটাতে। শুধু সেলিব্রিটিরাই নন, সাধারণ ভারতীয়রাও প্রতি বছর দলে দলে ভিড় জমান মলদ্বীপে। মলদ্বীপ সরকারের হিসেব বলছে, ২০২৩ সালে সেই দেশে যত পর্যটক এসেছেন, তার সিংহভাগই ছিলেন ভারতীয়। কিন্তু, পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে মলদ্বীপের মন্ত্রীর ওই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট। তবে, শুধু মরিয়ম শিউনা একাই নন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর লাক্ষাদ্বীপের পর্যটনে উৎসাহ দেওয়াকে কটাক্ষ করেছেন সেই দেশের আরও বেশ কয়েকজন সরকারি কর্তা। আর তাতেই, মলদ্বীপ বয়কটের ডাক দিয়েছেন ভারতীয়রা।
অনেকেই আগে থেকে মলদ্বীপ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের অনেকেই বিমানের টিকিট এবং হোটেল বুকিং বাতিল করার স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড করছে বয়কট মলদ্বীপ (#BoycottMaldives)। নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলেছেন, লাক্ষাদ্বীপে ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট-ভিসা কিছু লাগে না। তা সত্ত্বেও যে দেশের সরকার এবং জনগণ ভারতীয়গের ঘৃণা করে, সেই দেশে কেন যাব? লাক্ষাদ্বীপকে ভারতের লুকানো রত্ন বলছেন তাঁরা। লাক্ষাদ্বীপে ভ্রমণ করলে, দেশিয় পর্যটনের উন্নতি হবে এবং ভারত আরও দ্রুত বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতিতে পরিণত হবে।
আসলে, শুধু প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মলদ্বীপের মন্ত্রীর অবমাননাকর মন্তব্যই নয়, মলদ্বীপ বয়কটের ডাকের পিছনে গত কয়েক মাস ধরে ভারত ও মলদ্বীপের সম্পর্কের অবনতি আসল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে নয়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন মহম্মদ মুইজু। ‘ইন্ডিয়া আউট’, অর্থাৎ, মলদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতায় এসেছেন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে, হাইড্রোগ্রাফিক চুক্তি পুনর্নবীকরণ না করা-সহ একের পর এক ভারত-বিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ বৈদেশিক নীতি থেকে সরে এসে, চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন তিনি। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর, প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরেই ৮ জানুয়ারি চিন সফরে যাচ্ছেন তিনি।