প্যারিস: কোভিড মহামারির সময়ে এবং তার পরবর্তী সময়ে ভারতের ডিজিট্যাল পেমেন্ট সিস্টেম ‘ইউপিআই’ নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে বিশ্বের বহু দেশ। রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক ফোরাম ভারতের এই অর্থ প্রদান ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। এবার, ফ্রান্সেও ব্যবহার করা হবে এই পেমেন্ট সিস্টেম। বৃহস্পতিবার, প্যারিসে প্রবাসী ভারতীয় সম্প্রদায়ের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে, এই কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ফ্রান্সে ইউপিআই ব্যবহারের বিষয়ে সম্মত হয়েছে ভারত এবং ফ্রান্স। আগামী দিনে, আইফেল টাওয়ারেও ইউপিআই ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ, ভারতীয় পর্যটকরা এখন ফ্রান্সে ভারতীয় মুদ্রাতেই অর্থ প্রদান করতে সক্ষম হবেন।” ফ্রান্সে ইউপিআই ব্যবহার করা গেলে, ভারতীয় মুদ্রাকে ইউরোয় বদলে নেওয়ার ঝামেলা থাকবে না। পর্যটকদের নগদ বহনের প্রয়োজনও ফুরোবে।
ইউপিআই পেমেন্ট সিস্টেমে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেই একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে আর্থিক লেনদেন করা যায়। তহবিল স্থানান্তর, মার্চেন্ট পেমেন্টের মতো ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি একটি অ্যাপের মধ্য়েই পাওয়া যায়। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া বা এনসিপিআই, তার সদস্য ব্যাঙ্কগুলিকে নিয়ে একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই ব্যবস্থাটি চালু করেছিল। তারপর থেকে, ব্যাপকভাবে এই পেমেন্ট ব্যবর ব্যবহার বেড়েছে। এমনকি, এক কাপ চা খেয়েও মানুষ তার দাম মেটাচ্ছে ইউপিআই-এর মাধ্যমে।
২০২২-এ ফ্রান্সের দ্রুত এবং নিরাপদ অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম, ‘লিরা’র (Lyra) সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল এনসিপিআই। চলতি বছরেই সিঙ্গাপুরের পেনাও (PayNow)-এর সঙ্গে একই ধরনের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইউপিআই। ফলে, উভয় দুই দেশের মানুষ, তাদের নিজ নিজ পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন। ইতিমধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ভুটান এবং নেপালে ইউপিআই পেমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি এবং পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে ইউপিআই পরিষেবাকে সম্প্রসারিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সঙ্গে আলোচনা করছে এনসিপিআই। এরই মধ্যে ফ্রান্সে ইউপিআই চালুর খবর এল।
বৃহস্পতিবারই নয়া দিল্লি থেকে প্যারিসে উড়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাঁকে ফ্রান্সে স্বাগত জানান, ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বোর্ন এবং ফরাসি সেনেটের প্রেসিডেন্ট জেরার্ড লার্চারের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। দুটি বৈঠকই যথেষ্ট ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদিন, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান, ‘লিজিয়ন অব অনার’ কেতাবে ভূষিত করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ। শুক্রবার, ফ্রান্সের বাস্তিল দিবস। এই অনুষ্ঠানের মূল অতিথি প্রধানমন্ত্রী মোদী। বাস্তিল দিবসের অনুষ্ঠানের পর, ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন প্রধানমন্ত্রী। এই বৈঠকের পর, প্রতিরক্ষা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত-ফ্রান্সের অংশিদারিত্বের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।