নিকুচি করেছে আধুনিকতা! স্বেচ্ছায় অন্ধকারে থাকতে ভালবাসেন ওঁরা

TV9 Bangla Digital | Edited By: Shubhendu Debnath

Dec 17, 2021 | 5:23 PM

Baduy Tribe Prohibited Electricity: বেশ কিছু বছর আগে ইন্দোনেশিয়ার সরকার তাংতুদের গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাংতুরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে। এর ফলে আজও পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলি বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত থাকলেও তাংতুরা তার ছোঁয়া থেকে স্বেচ্ছায় নিজেদের বঞ্চিত করে রেখেছে।

নিকুচি করেছে আধুনিকতা! স্বেচ্ছায় অন্ধকারে থাকতে ভালবাসেন ওঁরা
ফাইল চিত্র

Follow Us

সভ্যতার ধর্ম সময় যত এগোবে তত নিত্য নতুন প্রযুক্তি এসে হাজির হবে। অবশ্যই তা গ্রহণ করার বাছবিচার থাকবে মানুষের কাছে। বিজ্ঞানের পথ কেবলমাত্র সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু এই ২০২১-এ দাঁড়িয়ে তথাকথিত সভ্য হয়েও এশিয়া মহাদেশে এমন একটি জনগোষ্ঠী আছে যারা যাবতীয় আধুনিক প্রযুক্তি বর্জন করে চলে। এমনকি আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়াচ এড়িয়ে চলবে বলে এই জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজ পর্যন্ত কোন‌ও গাড়িতে ওঠেনি!

এই বিশেষ জনগোষ্ঠী বাদুই নামে পরিচিত। এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভাগ আছে আর তারা সকলেই যে আধুনিক প্রযুক্তি এড়িয়ে চলে তা নয়। কেবলমাত্র অতি রক্ষণশীল তাংতু বাদুইরা এই কঠোর সংযমের সঙ্গে আজও জীবন যাপন করে চলেছে।

ইন্দোনেশিয়ার বানতেন প্রদেশের লিবাক রিজেন্সিতে বাদুই আদিবাসী গোষ্ঠী বসবাস করে। বাইরের দুনিয়ায় এদের বাদুই নামে ডেকে থাকলেও এরা নিজেদের কেনিকিস নামে পরিচয় দেয়। এদের মূল তিনটি ভাগ হলো তাংতু, পানামপিং এবং ডাংকা। এরমধ্যে তাংতু গোষ্ঠীটি লিবাক রিজেন্সির জঙ্গলের একেবারে মধ্যস্থলে বসবাস করে। এরা কাঠের তৈরি বাড়িতে থাকে এবং মূলত সাদা ও নীল রঙের পোশাক পড়ে এবং মাথায় সাদা রঙের পাগড়ি বাঁধে।

পানামপিং বাদুইরা তুলনায় অনেকটা কম রক্ষণশীল। তারা তাংতুদের আশেপাশের গ্রামগুলিতে থাকে। এদেরকে অতি রক্ষণশীল তাংতুরা অনেক সময় বাদুই বলে মনে করতে চায় না। তবে অতীতে নিষিদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তাংতু ও পানামপিংদের মধ্যে বিবাহের প্রচলন ঘটেছে। ডাংকা বাদুইরা আসলে বাদুই নয়। তারা অন্য আদিবাসী গোষ্ঠী। কিন্তু এই অঞ্চলে এসে দীর্ঘদিন যাবৎ তাংতু ও পানামপিংদের সংস্পর্শে থাকার ফলে বাদুই সংস্কৃতির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। ডাংকা’রা নিজেদের বাদুই বলে পরিচয় দিলেও তাংতু ও পানামপিংরা তাদেরকে বাদুই বলে মনে করে না।

স্বেচ্ছায় অন্ধকারে থাকতে ভালবাসেন বাদুই জনগোষ্ঠীর মানুষ

এই আদিবাসী গোষ্ঠীর সর্বোচ্চ নেতাকে ‘পুন’ বলে ডাকা হয়। তাকে তিন গোষ্ঠীর বাদুইরাই মান্য করে চলে। মূলত তাংতু বাদুইদের থেকেই পুন নির্বাচিত হন। বাদুইদের ধর্মের নাম ‘সুন্দা উইউইটান’। তাদের মতে, প্রাচীনকালে এক দেবতা তাঁর নিজের জীবন দিয়ে তাদেরকে রক্ষা করেছিল। তাই সমস্তরকম ধর্মীয় আচার, অনুষ্ঠানের আগে তারা ওই দেবতাকে স্মরণ করে থাকে। তাংতু বাদুইরা মনে করেন, সেই দেবতা নিজের হাতে তাদের এই বাসস্থান গড়ে তুলেছিলেন, তাই তারা জঙ্গলের মধ্যবর্তী অঞ্চল ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চায় না। এই আদিবাসী গোষ্ঠীটি মনে করে জীবিতকালে যা কিছু ঘটছে সব‌ই পূর্বনির্ধারিত। তাদের ধারণা প্রকৃতির কোন‌ও কিছুই পরিবর্তন করা হল অনৈতিক কাজ। সেই জন্যই তারা বিদ্যুৎ, আধুনিক ইন্টারনেট, যানবাহন এগুলির কিছুই ব্যবহার করে না।

বেশ কিছু বছর আগে ইন্দোনেশিয়ার সরকার তাংতুদের গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাংতুরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে। এর ফলে আজও পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলি বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত থাকলেও তাংতুরা তার ছোঁয়া থেকে স্বেচ্ছায় নিজেদের বঞ্চিত করে রেখেছে। কিন্তু পানামপিংরা বিদ্যুৎ এর পাশাপাশি মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, টেলিভিশন সব‌ই ব্যবহার করে। এমনকি অনেক পানামপিং বর্তমানে পুরানো লোকায়ত ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে।

আরও পড়ুন: ঘরে বসে বসেই মেয়েরা আস্ত একটি ভাষা তৈরি করে ফেলেন, যা পুরুষের বোঝার বাইরে

Next Article