Bangladesh Newspaper: নিজের হাতের লেখা পত্রিকায় সর্বহারাদের কথা শোনান ‘সর্বহারা’ পারভেজ

TV9 Bangla Digital | Edited By: জয়দীপ দাস

May 14, 2022 | 11:47 PM

Bangladesh Newspaper: দিনমজুর পারভেজের হাতে লেখা পত্রিকাই যেন সমাজের প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর। সীমাহীন দারিদ্রতের সঙ্গে অসম লড়াই করে সাংবাদিকতার দুনিয়ায় নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করছেন বাংলাদেশের হাসান পারভেজ।

Bangladesh Newspaper: নিজের হাতের লেখা পত্রিকায় সর্বহারাদের কথা শোনান সর্বহারা পারভেজ
ছবি - হাতে লিখে বের করেন পত্রিকা, শোনান প্রান্তিক মানুষের দুর্দশার কথা, দিনমজুর পারভেজের সাংবাদিকতায় পড়েছে সাড়া

Follow Us

ঢাকা: একদিকে করছেন দিনমজুরির কাজ, অন্যদিকে চলছে কলম। যে হাতে কোদাল ধরেন, সেই হাতেই লিখছেন কবিতা, করছেন সংবাদিকতা, চালাচ্ছেন একটা আস্ত সংবাদপত্র। যা শুধু বলে সমাজের প্রান্তিক মানুষের কথা। বাংলাদেশের পটুয়াখালির কলাপাড়া উপজেলায় আন্ধারমানিক নদীর তীরের ছোট্ট গ্রাম পশ্চিম সোনাতলায় বাস হাসান পারভেজের। তিনিই নিত্য করে চলেছেন এই অসাধ্য সাধন। তিনি পেশায় দিনমজুর, কিন্তু নেশায় সাংবাদিক। তাঁর হাত ধরেই চলছে আন্ধারমানিক পত্রিকা। প্রতিমাসে যার একটি করে সংখ্যা দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা পৌঁছে যায় মূল স্রোতে থাকা মানুষের ঘরে ঘরে। তবে গোটা পত্রিকাটি লেখা হয় হাতেই।  

পারভেজের জীবন সংগ্রামের এই কাহিনী বাংলাদেশের প্রথমসারির একাধিক দৈনিকে প্রকাশ হতেই তা সাড়া ফেলেছে এপার বাংলাতেও। করোনাকালে গোটা বিশ্বের পাশাপাশি মন্দার করাল গ্রাসে জড়িয়ে গিয়েছে বাংলাদেশও। গোটা দেশজুড়েই বেড়েছে বেকারত্বের হার। কর্মহীন হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। রুটি-রুজির অভাবে সবথেকে খারাপ অবস্থা হয়েছে সমাজের নিম্নবর্গের মানুষদের। সেখানে যেন সমাজের প্রান্তির মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে সদর্পে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে পারভেজের আন্ধারমানিক পত্রিকা। তবে এই পত্রিকায় খবর প্রকাশের ধরন খানিক আলাদা। মূল স্রোতের খবরের বদলে সমাজের নীচু তলার মানুষের কথাই এখানে সবার আগে প্রধান্য পায়। 

পারভেজের হাত ধরে পথ চলা শুরু হলেও ধীরে ধীরে আন্ধারমানিকের কথা বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন পারভেজের আরও ১৫ সহযোদ্ধা। সমাজের দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের দুরাবস্থা, বঞ্চনার কথা শোনা মাত্রই সেখানে ছুটে যায় আন্ধারমানিকের সাংবাদিকের দল। তুলে আনে পাদপ্রদীপের নীচে কালির মতো জমে থাকা সেই অসহায় মানুষ গুলোর দুরাবস্থার কথা।  গর্জে ওঠে পারভেজদের কলম। এভাবেই একদিন তৃতীয় শ্রেণির রুবিনার দুঃখ-কষ্টের কথা লিখেছিলেন পারভেজ। ছোট্ট রুবিনার মানসিক প্রতিবন্ধী মাকে শিকল দিয়ে বেঁধে বৃদ্ধা ঠাকুমা যেতেন খাবারের খোঁজে। সেই সময় মাকে পাহারা দিত রুবিনাই। এই খবর পাওয়া মাত্রই, তা জায়গা পায় আন্ধারমানিকের পাতায়। ঝলসে ওঠে পারভেজের কলম। বিখ্যাত জসীমউদ্দীনের ‘আসমানী’ কবিতা অবলম্বনে পারভেজ লেখেন, ‘রুবিনাকে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, তৈয়বআলীর ছোট্ট বাড়ি হোসেনপুরে যাও’। তাঁর এই কবিতা ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। নতুন করে সাড়া ফেলে দেয় আন্ধারমানিক পত্রিকা। 

এদিকে জন্মের পর থেকেই সীমাহীন দারিদ্রের সঙ্গে অসম লড়াই করেই বড় হয়েছেন পারভেজ। ১৯৯৬ সালে বসার কথা ছিল এসএসসি পরীক্ষায়। কিন্তু অর্থকষ্টের জেরে সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় সেই সময়। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র নন পারভেজ। অবশেষে, বয়স বাড়লেও শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে ফের পরীক্ষায় বসেন পারভেজ। পাশও করেন ভালো নম্বর পেয়ে। বর্তমানে পড়ছেন কলেজে। সঙ্গে চলছে পত্রিকার কাজ।

Next Article