Iran Israel War: ইরানের নাগরিকদের ধরে ধরে ফোন করছে ইজরায়েল? যুদ্ধের নয়া কৌশল!
ইরানে অশরীরীর হানা। ভূতেরা চেনাজানা। আচ্ছা, এটাও কী একটা নতুন যুদ্ধকৌশল নাকি সত্যিই ভূতের দল ইরানে হানা দিয়েছে?

ফোন করলেই ভেসে আসছে রহস্যময় গলা। কর্কশ এবং বিরক্ত গলায় কেউ একজন বলছে, কে বলছেন? এই সময় কেন ফোন করেছেন? আপনি কে বুঝতে পারছি না। এমন কেউ একজন কথা বলছে, যাঁর গলা আপনি কখনও শোনেননি। ব্যাপারটা একবার ভেবে দেখুন তো। ধরুন আপনি বিদেশে। বাড়িতে, পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা হয়। তো একদিন ফোন করার পর অচেনা, কর্কশ গলাটা শুনলেন। এবং শুনলেন, যিনি ফোন ধরেছেন, তিনি আপনাকে চিনতেই পারছেন না। এবং আপনিও তাকে চেনেন না। কেমন লাগবে ভাবুন। বিশ্বাস হোক বা নাই হোক, ইরানে এখন এটাই ঘটছে। প্রবাসী ইরানিরা বিদেশ থেকে নিজের বাড়িতে ফোন করলেই কর্কশ, অচেনা গলা শোনা যাচ্ছে। প্রশ্ন করলে, ছোট ছোট উত্তরও আসছে। ইরানে অ্যাসোসিয়েটড প্রেস এবং রয়টার্সের প্রতিনিধি এরকম বেশ কিছু ফোন রেকর্ডিং খতিয়ে দেখেছেন।
ইরান থেকে ব্রিটেনে পিএইচডি করতে গিয়েছেন ইরানের আভাজ শহরের তরুণী এলালি। সংবাদ সংস্থা এপি-র কাছে এলালির দাবি, আমি বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন করতেই একটা অদ্ভুত গলা শোনা গেল। অ্যালো, অ্যালো। হু ইজ কলিং? আমি নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলাম, তুমি কে? ওদিকে ব্যক্তিটি বললেন, আমি তোমার কথা শুনতে পাচ্ছি না। আর কোনও সাড়াশব্দ পেলাম না। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, হ্যালো, কে তুমি? আমার বাবা-মা কোথায়? তখন উত্তর এল, আমি অ্যালিসা। আমি এখানেই থাকি। তুমি কি আমাকে চেন? আমি তোমাকে চিনি বলে মনে করতে পাচ্ছি না। আমি কী ভুল বলছি? এলালি জানিয়েছেন, এরপরই ফোন কেটে যায়। তারপর প্রায় এক ঘণ্টা তিনি বাড়ির ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি। পরে বাবা-মায়ের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি। বাবা-মা আমার কথা শুনে চমকে গিয়েছিলেন। প্রথমে তো ওদের বিশ্বাসই হয়নি। আমার বাড়ির ফোনে অপরিচিত একজন কীভাবেই বা আসবে? কেনই বা আসবে? এলালি বাদেও আরও অন্তত ১০ জনও একই অভিযোগ করেছেন।
ইরানে বাড়ির ল্যান্ডলাইন, মোবাইলে অপরিচিত কেউ হাজির হয়ে বলেছেন, তিনি ওই পরিবারের সদস্য এবং যিনি ফোন করেছেন, তাকে তিনি চেনেন না। আমেরিকা থেকে তেহরানে নিজের বাড়িতে ফোন করে একই অভিজ্ঞতা হয়েছে এক চিকিত্সকের। ফোনে এক মহিলা তাকে বলেছেন, আমাকে ফোন করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা কেউই, একে অন্যকে চিনি না। কিন্তু আমাদের মধ্যে যোগাযোগ হল। এটা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এটাই নির্ধারিত ছিল। এবং তাই আমাদের মধ্যে কথা হল। আপনি অবশ্যই একদিন আমার বাড়িতে শামে আসবেন। ফার্সিতে শাম মানে ডিনার। অচেনা একজন কেউ আমার বাড়িতে বসে আমাকেই ডিনারে ডাকছে, ব্যাপারটা আমার-আপনার সঙ্গে হলে কেমন লাগবে? আমার তো মাথাটাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হবে। মজার কথা হল, এরকম ঘটনা একবারের বেশি কারও সঙ্গেই হয়নি। তবে কম করেও দুশো- আড়াইশো প্রবাসী ইরানির সঙ্গে হয়েছে। এলালি মজা করে একটা কথা বলেছেন।
বাংলা করলে বলতে হয়, ইরানে অশরীরীর হানা। ভূতেরা চেনাজানা। আচ্ছা, এটাও কী একটা নতুন যুদ্ধকৌশল নাকি সত্যিই ভূতের দল ইরানে হানা দিয়েছে? সংঘাত শুরুর ঠিক আগে আন্তর্জাতিক কলের উপর প্রচুর বিধিনিষেধ চাপায় আলি খোমেইনি প্রশাসন। তাই প্রবাসী ইরানিদের একটা অংশ বলছেন, এটা ইরান সরকারেরই ষড়যন্ত্র। বিদেশ থেকে যাতে কেউ সহজে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই এই ফোন-ফোন খেলা। যদিও অন্য একটি অংশের আশঙ্কা, এর পিছনে ইজরায়েলের হাত আছেই-আছে। কয়েক মাস আগে লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের কথা মনে করাচ্ছেন তাঁরা। তাদের অভিযোগ, মোসাদের মতো এজেন্সি ইরানের ফোন নেটওয়ার্কের দখল নিয়েছে। বা ফোনে কোনও একটা রেকর্ডিং ডিভাইস ঢুকিয়ে দিয়েছে। ইরানে বসে কে, কী কথা বলছেন, সবটাই ইজরায়েলের হাতে চলে যাচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল লাইনে আড়ি পাতা সহজ নয় বুঝেই ফেক ভয়েস মেসেজের ব্যবহার। যদি এই অভিযোগ সত্যি হয়, তা হলে বলতেই হবে, দুর্ধর্ষ প্ল্যানিং। ইরানে বিদেশে থাকা লোকজনের সম্পর্কে তথ্য জোগাড়, সেদেশের কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক হ্যাক করা বিশাল ব্যাপার। তবে ইজরায়েল যে সেটা করতে পারে, সেটা বারেবারেই দেখা গিয়েছে।
