গাজা সিটি: বাকি পাঁচটা দিনের থেকে আলাদা ছিল ৭ অক্টোবর। কারণ ওই দিনটি ইহুদিদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র দিন। ধর্মীয় আচার পালন করতে যখন ব্যস্ত ছিল সবাই, সেই সময়ই আকাশ থেকে নেমে এসেছিল মিসাইল। একটা বা দুটো নয়, ইজরায়েলের বুকে হাজারে হাজারে মিসাইল বর্ষণ করেছিল হামাস। ব্যস, পাল্টা বদলা নিতে শুরু করল ইজরায়েলও। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে যুদ্ধের দ্বিতীয় দিন থেকেই পাঞ্জা শক্ত করেছে ইজরায়েল সেনা। বিগত দুই সপ্তাহে হামাসের বেশ কয়েকজন কমান্ডারকে খতমও করা হয়েছে এয়ারস্ট্রাইক চালিয়ে। কিন্তু ইজরায়েলি সেনা আইডিএফের হিটলিস্টে রয়েছে পাঁচজনের নাম। এদের নির্মূল না করা পর্যন্ত শান্তি নেই আইডিএফের। দাবি, ইজরায়েলে ভয়ঙ্কর হামলার পিছনে হাত রয়েছে এই পাঁচ মাথারই। কারা তাঁরা, যারা এক লহমায় ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিল?
৭ অক্টোবর হামাসের প্রথম হামলার পর থেকেই পাঁচজন চরম শত্রুর মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে ঘুরছে ইজরায়েলি সেনা।
ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, যতক্ষণ না তাঁরা এই পাঁচ ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’কে নির্মূল না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্বস্তির শ্বাস নেবেন না। এরা হলেন-
এবার প্রশ্নটা হল, কেন এই পাঁচ কুখ্যাত কমান্ডারের পিছনে পড়ে আছে ইজরায়েলি সেনা? কেন এদের সন্ধানে গাজার আকাশ-পাতাল তোলপাড় করে ফেলছে? তা জানার জন্য এই কমান্ডারদের অতীতের কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে হবে।
ইজরায়েল প্রথম যাকে খুঁজছে, তিনি হলেন হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার পর ইয়াহিয়া সিনওয়ার দ্বিতীয় শক্তিশালী নেতা। ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হামাসের ‘ওসামা বিন লাদেন’ও বলা হয়। ২০১৫ সালে আমেরিকা সিনওয়ারকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করে। ইজরায়েল বাহিনীও সিনওয়ারকে বেশ কয়েকবার গ্রেফতারও করে। মোট ২৪ বছর জেলে কাটিয়েছেন সিনওয়ার।
৬০-এর দশকে গাজার একটি শরণার্থী শিবিরে জন্মেছিলেন হামাসের সেকেন্ড ইন কমান্ড। হামাস প্রতিষ্ঠায় ইয়াহিয়া সিনওয়ারের বড় ভূমিকা ছিল। ইজরায়েলে হামলা এবং ইজরায়েলি সেনাদের হত্যার জন্য ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নাম নেতানিয়াহু সরকারের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে রয়েছে। জল্পনা, ৭ অক্টোবর রাতে ইজরায়েলের উপরে হামলার পরিকল্পনা সিনওয়ারের মাথা থেকেই এসেছে।
ইয়াহিয়া সিনওয়ারের পর, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় টার্গেট মহম্মদ দেইফ। ইজরায়েলের গোয়েন্দাদের ধারণা, ইজরায়েলের বিখ্যাত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমকে ব্যর্থ করা এবং দেশে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর পরিকল্পনা করেছিল মহম্মদ দেইফ-ই। মহম্মদ দেইফ হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসামের প্রধান। ২০০২ সাল থেকে এই দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। দেইফের আসল নাম মহম্মদ দিয়াব ইব্রাহিম আল-মাসরি। ৭ বার দেইফকে হত্যার জন্য চেষ্টা করেছে ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, কিন্তু প্রতিবারই চোখে ধুলো দিয়ে পালায় মহম্মদ দেইফ।
গত ৫০ বছরে ইজরায়েলে সবথেকে বড় হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেইফকেই কাঠগড়ায় তুলেছে নেতানিয়াহু সরকার। গাজায় হামাসের সুড়ঙ্গের জাল তৈরির পিছনেও দেইফের মাথা করেছে বলে মনে করা হয়। দেইফ নিজেও হয়তো সুড়ঙ্গেই লুকিয়ে রয়েছেন।দেইফের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে হামাস জেহাদিরা।
দেইফ এবং সিনওয়ার ছাড়াও ইজরায়েলের হিট লিস্টে আরও অনেক কুখ্যাত নাম রয়েছে যাদের ষড়যন্ত্র ও কাজকর্ম ইজরায়েলের গোয়েন্দাদের নাকানিচোবানি খাইয়েছে। তেমনই একজন মারওয়ান ইসা। ইজরায়েলি সেনার তৃতীয় টার্গেট মারওয়ান, হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের ডেপুটি চিফ। ইসাকে হামাসের সবথেকে নিষ্ঠুর সদস্য বলেই মনে করা হয়। হামলার সময় নিরস্ত্র ও শিশু-মহিলাদেরও রেহাই দেন না ইসা।
ইজরায়েল সেনার টার্গেটে চার নম্বরে রয়েছে জিয়াদ আল-নাখলাহ। প্যালেস্তাইন ইসলামিক জিহাদ বা পিআইজে-র প্রধান জিয়াদ আল-নাখলাহ। পিআইজে একটি চরমপন্থী দল, যারা ইসলামিক প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও ইজরায়েলকে নির্মূল করতে চায়। লেবাননের জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল্লার মদতপুষ্ট এই পিআইজে।
ইসরায়েলের পঞ্চম লক্ষ্য হল ইসমাইল কানি। আল-কুদস ব্রিগেডের প্রধান। ইরানের শীর্ষ কমান্ডার কাসিম সুলেমানি মারা যাওয়ার পর, ইসমাইল কানি কুদস ফোর্সের শীর্ষ কমান্ডার হয়ে ওঠে।