জেরুজালেম: এক সংঘর্ষ কেড়ে নিয়েছিল ছেলেকে। ২৩ বছর পরও সেই ক্ষত দগদগে। আবার আরেক যুদ্ধই কেড়ে নিল বাকি পরিবারকেও। চোখের সামনেই যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। আর এই নির্মম সত্যের সাক্ষী থাকতে হল জামাল আল-দুরাহকে। ২৩ বছর আগে সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন জামাল। ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের সংঘর্ষের মাঝে আটকে পড়েছিলেন গাজার বাসিন্দা। ইজরায়েলি সেনার গুলি থেকে বাঁচাতে পারেননি ছেলেকে। ২৩ বছর পর ফের একবার দুই দেশের সংঘর্ষে প্রিয়জনকে খোয়ালেন জামাল। মৃত্যু হল দুই ভাই সহ তাঁর গোটা পরিবারের।
২০০০ সালে ইজরায়েল যখন গাজা স্ট্রিক, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করতে অভিযান চালাচ্ছিল, তখন গাজায় প্যালেস্তানীয় নাগরিকদের কাছে ‘দ্বিতীয় ইন্তেফাদা’র প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন জামাল আল-দুরাহ। ইজরায়েলি সেনার গুলি থেকে ছেলেকে বাঁচানোর যে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন তিনি, তার ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন ফ্রান্সের এক সাংবাদিক। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। আইডিএফের গুলিতেই জামালের কোলে ঢলে পড়েছিল তাঁর ১১ বছরের ফুটফুটে ছেলে, মহম্মদ আল-দুরাহ। জামালের কাহিনি সমস্ত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে ঠাই পেয়েছিল।
৩০ সেপ্টেম্বর দিনটি ভয়াবহ একটি দিন হিসাবেই জামালের মনে গেঁথে গিয়েছে। সদ্যই ছেলের ২৩ তম মৃত্যু বর্ষপূর্তি পূরণ হয়েছে, তার মধ্যেই আবার নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয় ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে। এবারও দুই পক্ষের যুদ্ধের মাঝে আটকে পড়েন জামালের পরিবার। আকাশ থেকে নেমে আসে ইজরায়েলের মিসাইল। জামালের দুই ভাই, ভ্রাতৃবধূ ও ভাইঝি প্রাণ হারায় ওই এয়ারস্ট্রাইকে। সেই সময় বাড়ি না থাকায় কপাল জোরে বেঁচে যান জামাল। কিন্তু এই জীবন থেকেও বা কী লাভ? এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন বৃদ্ধ।
তিনি জানান, ইজরায়েলের রকেট হামলায় শুধু তাঁর পরিবারই নয়, প্রতিবেশীদেরও মৃত্য়ু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। মৃতদেহের স্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে জামাল বলেন, “ইজরায়েল হত্যা করেছিল আমার ছেলে মহম্মদ আল-দুরাহকে, ওর রক্ত এখনও গাজা স্ট্রিপ দিয়ে বইছে। স্বর্গে তোমাদের মাঝে আমার জন্য একটু জায়গা রেখ।”
জামাল আরও বলেন, “ওদের (ইজরায়েল) পেশাই হল শিশুদের হত্যা করা। প্রতিদিন শিশুদের মারছে ওরা। ২৩ বছর পর মহম্মদের হত্যা র দৃশ্যের আবারও পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। ইজরায়েল কোনও সামরিক বস্তুকে নিশানা করে না। পশ্চিমী দুনিয়ার অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করে।”