টোকিয়ো: নববর্ষের প্রথম দিনেই ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত জাপান। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি), জাপানের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার সব মিলিয়ে সেই দেশে মোট ১৫৫টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। অধিকাংশই ৩ মাত্রার আশাপাশের হলেও, এর মধ্যে দুটি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। রিখটার স্কেলে একটির মাত্রা ছিল ৭.৬, অন্যটির ৬। মঙ্গলবার ভোরেও ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েছে সেই দেশে। তবে শুধু ভূমিকম্পই নয়, কম্পনের থেকে তৈরি হওয়া অন্তত এক মিটার উঁচু সুনামি তরঙ্গও আছড়ে পড়েছিল মধ্য জাপানে। আর সুনামি থেকে তৈরি হয়েছিল এক বিশাল অগ্নিকাণ্ড। বিপর্যয়ের এই ত্রহ্যস্পর্শে রাতারাতি ধ্বংসযজ্ঞের সম্মুখীন হয়েছে মধ্য জাপান। এখনও পর্যন্ত ৪৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে, অনেকেই এখনও ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কাজেই মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ভূমিকম্প-সুনামি এবং অগ্নিকাণ্ডের ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে। সংবাদ প্রতিবেদনে বন্দরে বন্দরে ডুবে যাওয়া নৌকো, বহুতল ভবনের ধ্বংসাবশেষের ছবি সামনে এসেছে। মধ্য জাপানে পুড়ে গিয়েছে প্রায় ১০০টি ভবন। হিমাঙ্কের নীচে থাকা তাপমাত্রায় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য বাড়ি। প্রায় ১২০ জন বাসিন্দা এখনও বিপর্যয়ধ্বস্ত এলাকাগুলিতে আটকে রয়েছে। তাঁদের দ্রুত উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। জাপানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইশিকাওয়া দ্বীপ এবং নিগাতা দ্বীপে মোট ৯৫৫ টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৫৭,৩৬০ জন উপদ্রুত এলাকাগুলি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রায় ১,০০০ মানুষকে এক সামরিক ঘাঁটিতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
ঘন ঘন ভূমিকম্পের মধ্যে টোকিয়োয় স্থগিত রাখা হয়েছে বুলেট ট্রেন পরিষেবা। রাজধানীতে বেশ কয়েকটি প্রধান রাস্তাও বন্ধ রাখা হয়েছে। জাপানের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে আরও ভূমিকম্প হতে পারে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা জানিয়েছেন, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীদের তিনি যত দ্রুত সম্ভব উপদ্রুত এলাকাগুলিতে পৌঁছতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, জাপানে এখন প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়েছে। তাই বিমানে বা জাহাজে করে জল, খাবার, কম্বল, পেট্রল এবং জ্বালানী মতো প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের জেরে রাস্তা ভেঙে গিয়ে অনেক জায়গায় সড়কপথে পৌঁছনো যাচ্ছে না। সেই সব এলাকাগুলিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া, পুলিশ, দমকল, কোস্ট গার্ডরাও আছেন।