কাবুল: রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। এই কথাটাই এখন ধ্রুব সত্য কাবুলবাসীদের জন্য। কারণ ক্ষমতা বদলের পরই খাবার বা ওষুধের মতো নিত্য় প্রয়োজনীয় সামগ্রী জোগাড় করতেও কালঘাম ছুটছে বাসিন্দাদের। কাবুল দখলের একমাসের মধ্যেই সেখানে নিত্য়প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় চরম সঙ্কটে পড়েছেন আফগানবাসী।
রাশিয়ার টাস সংবাদ সংস্থার তথ্য় অনুযায়ী, কাবুল সহ গোটা আফগানিস্তান জুড়েই একদিকে যেমন দেখা দিয়েছে প্রবল অর্থ সঙ্কট, তেমনই আবার খাদ্যবস্তু সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি হওয়ায় দুবেলা খাবার জোগাতেও হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
দেশের অন্দরে চরম খাদ্য়সঙ্কট দেখা দেওয়ায় আপাতত পাকিস্তান ও ইরান থেকেই অল্পমাত্রায় খাদ্যসানগ্রী আমদানি করা হচ্ছে। এর প্রভাবে খাবারের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, আটা-ময়দার দাম কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বেড়েছে, ফল-সবজির দামও ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ওষুধের আমদানি প্রায় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোনও প্রয়োজনীয় ওষুধই পাওয়া যাচ্ছে না।
শুধু খাবারের দামই নয়, বেড়েছে জ্বালানির দামও। অগস্টের শুরু থেকে এখনও অবধি কাবুলে জ্বালানির দাম ২০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কাবুলের এক ট্যাক্সি চালক বলেন, “আমাদের মতো যারা ছোট গাড়ি বা বাস চালান, তাদের হাত প্রায় ফাঁকা। জ্বালানি তেলের খরচ জোগাতেই উপার্জিত অর্থের প্রায় সম্পূর্ণ অংশটাই খরচ হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের ভরণপোষণের জন্য টাকাই থাকছে না। তার উপরে প্রয়োজনীয় সামগ্রীরও দাম বেড়েছে। ফলে আরও কষ্টকর হয়ে উঠেছে জীবনযাত্রা।”
তালিবান বাহিনী আফগানিস্তান দখলের পরই আমেরিকা ও সঙ্গী সাতটি দেশ মিলিতভাবে আফগানিস্তানের অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধ করে সিদ্ধান্ত নেয়। আফগানিস্তান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদ পড়ে রয়েছে বিভিন্ন দেশে। ইতিমধ্যেই ওয়াশিংটনের তরফে আফগানিস্তানের অর্থভাণ্ডারে তালিবান যাতে হাত লাগাতে না পারে, তার জন্য অ্যাকউন্টের গতিবিধি বন্ধ করে দিয়েছে। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ দ্বারাই এতদিন আফগানিস্তানের অর্থভাণ্ডার নিয়ন্ত্রিত হত। আন্তর্জাতিক মনিটরি ফান্ডের তরফেও ৪ কোটি ৪০ লক্ষ ডলারের তহবিলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তালিবানি অপব্যবহার রুখতে।
এরফলে দেশে যে চরম আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তার জেরে ব্যাঙ্ক ও এটিএম থেকে টাকা তোলার সর্বোচ্চ সীমাও বেধে দিয়েছে তালিব সরকার। নয়া নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে ২০ হাজার আফগানি বা ২০০ মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ ব্যাঙ্ক থেকে তোলা যাবে না। দাম কমে গিয়েছে আফগান মুদ্রারও।
গত ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (UNDP) এক বার্তায় জানানো হয়েছে, এ ভাবে চলতে থাকলে ২০২২ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়বেন অন্তত ৯৭ শতাংশ আফগানবাসী। দেশ জুড়ে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে, সেই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।