ওয়াশিংটন: আজ তিনি আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট। ছুঁয়েছেন একের পর এক মাইলফলক। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ, প্রথম মহিলা হিসেবে গড়েছেন ইতিহাস। তবে ভারতের সঙ্গে তাঁর যে নাড়ির যোগ, সে কথা আজও ভোলেননি তিনি। মার্কিন মুলুকে শৈশব কাটলেও ভারতে কাটানো সময়গুলো আজও তাঁর কাছে যেন ছবির মতো স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফরকালে সেই স্মৃতিচারণ করলেন হ্যারিস। মোদীর জন্য হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছিলেন কমলা হ্যারিস ও আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সেখানেই ছেলেবেলার সেই গল্প শুনিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে মোদীর নেতৃত্বের প্রশংসাও করেছেন তিনি।
কমলা হ্যারিস উল্লেখ করেন, ভারতের প্রভাব তাঁর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের ইতিহাস, শিক্ষা তাঁকে কতটা প্রভাবিত করেছিল, সে কথাও বলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘ভারতের ইতিহাস, দর্শন গোটা বিশ্বকে এক আলাদা মাত্রা দিয়েছে। অনুপ্রাণিত করেছে বহু মানুষকে।’
কমলা হ্যারিস জানান, ছেলেবেলায় নিয়ম করে প্রতি বছর তাঁর মা তাঁকে ও তাঁর বোনকে ভারতে নিয়ে যেতেন। কোথায় তাঁর মায়ের জন্ম, সেটা বোঝাতে চাইতেন সন্তানদের। তৎকালীন মাদ্রাজের সেই বাড়িতে আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা হওয়া, বিশেষত দাদুর সঙ্গে কাটানো সময়গুলো যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে কথাই উল্লেখ করেছেন কমলা হ্যারিস। তাঁর কথায়, সেই দিনগুলোর জন্যই আজ এই জায়গায় তিনি পৌঁছেছেন।
কথা বলতে বলতে এদিন শৈশবে ফিরে যান কমলা। তিনি বলেন, “আমি নাতি-নাতনিদের মধ্যে সবথেকে বড় ছিলাম। আপনারা জানেন ভারতীয় সংস্কৃতিতে বাড়ির বড় হওয়ার একটা আলাদা তাৎপর্য আছে। আর দাদুর কাছে আমরা নাতি-নাতনিরা খুবই আদরের ছিলাম। তবে আমি ছিলাম পরিবারের একমাত্র সদস্য যাঁকে দাদু সকালে হাঁটার সঙ্গী করতেন।”
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট এদিন কার্যত নস্টালজিয়ায় ভাসেন। তিনি উল্লেখ করেন, অবসরপ্রাপ্ত দাদু তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে সমুদ্র সৈকতে হাঁটতেন, কথা বলতেন নানা বিষয়ে। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিয়ে হত আলোচনা। আর সে সব মন দিয়ে শুনতেন নাতনি কমলা। ছেলেবেলায় খুব বেশি না বুঝলেও, আজও তাঁর মনে সে সব গল্প একেবারে স্পষ্ট বলেই জানান তিনি।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা বলেন, “সে দিন আমার দাদু পি ভি গোপালনের কাছ থেকে যা শিখেছিলাম, মায়ের কাছ থেকে যে নিষ্ঠার পাঠ নিয়েছিলাম, সেটাই আমাকে আজ এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। সে কারণেই আজ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।”
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের প্রশংসাও করেন কমলা। মহাকাশ গবেষণা, স্যাটেলাইট বা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভারত-আমেরিকা যৌথভাবে কাজ করে যে নতুন দিশা দেখাবে, তেমনটাই মত ভাইস প্রেসিডেন্টের।