ওয়াশিংটন: কোভিড-১৯ মহামারির দাপটে ভয়ঙ্কর অবস্থা উত্তর কোরিয়ায়। কিন্তু, সেদিকে নজর দেওয়ার সময় কোথায় সেই দেশের একচ্ছত্র নেতা কিম জং উনের? শুক্রবারই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথমবার দক্ষিণ কোরিয়া সফরে আসছেন জো বাইডেন। আর কোরিয় উপদ্বীপে তাঁকে স্বাগত জানাতে বিশেষভাবে প্রস্তুত হচ্ছে পিয়ং ইয়ং। সর্বশেষ মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য বলছে, বাইডেনের দক্ষিণ কোরিয়া সফরকালেই একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা আইসিবিএম পরীক্ষা করতে পারে উত্তর কোরিয়া। এমনকি, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের আশেপাশের সময়ে, একটি পারমাণবিক অস্ত্রও পরীক্ষা করতে পারে তারা।
গত ১০ মে, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়েছেন ইউন সুক-ইওল। উত্তর কোরিয়ার ‘উস্কানি’র বিরুদ্ধে, কঠোর অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। বাইডেনের কাছ থেকে আরও বেশি নিরাপত্তা আশ্বাস প্রত্যাশা করছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে প্রথম শীর্ষ সম্মেলন করতেই, সিওলে আসছেন বাইডেন। শুক্রবার তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছবেন। তারপর আছে জাপান সফর। তার আগে বেশ কয়েক ধরে, নয়া দক্ষিণ কোরিয় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর একের পর এক বৈঠক করার কথা।
আলোচনা হওয়ার কথা চিনের আগ্রাসন, দুই দেশের বাণিজ্য এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে। আলোচনা হওয়ার কথা ‘পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আলোচনার অগ্রগতির অভাব’ নিয়েও। কিন্তু, কিমের এই অস্ত্র পরীক্ষা, সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিতে পারে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের পুরো ফোকাস কেড়ে নিতে পারেন কিম জং-উন এবং তাঁর অস্ত্র পরীক্ষা, এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি, গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, দুই কোরিয়ার সীমান্তে, ডিমিলিটারাইজড জোন বা অসামরিকিকৃত এলাকাতেও যেতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পিয়ং ইয়ং যদি আইসিবিএম এবং পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করে, সেই পরিকল্পনাও যেতে পারে বিশ বাঁও জলে। একই সঙ্গে কোভিড মহামারির মোকাবিলা করার জন্য উত্তর কোরিয়ায় আন্তর্জাতিক সহায়তা পাঠানোর কাজও ব্যাহত হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কিম জং-উনের শীর্ষ বৈঠকের পর, ২০১৭ সাল থেকেই পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা এবং ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ রেখেছিল পিয়ং ইয়ং। পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জন্য উত্তর কোরিয়ায় এক পাহাড়ের নিচে বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গ ছিল। কিমের নির্দেশে ২০১৮ সালে সেই সুড়ঙ্গ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে, সেই আলোচনা আর না এগোনোয়, ফের অস্ত্র পরীক্ষা শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কিম। চলতি বছরের মার্চ মাসে উত্তর কোরিয়া ফের আইসিবিএম পরীক্ষা করা শুরু করেছে, তবে পারমানবিক অস্ত্রের পরীক্ষা এখনও স্থগিত রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’-এর সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার জায়গাটিতে গত তিন মাস ধরে জোর কদমে কাজ চলছে। বাণিজ্যিক উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার স্থানটিতে ভূগর্ভস্থ টেস্টিং সুড়ঙ্গগুলির মধ্যে তৃতীয় সুড়ঙ্গটি সংস্কারের করা হচ্ছে। দ্রুতই সপ্তম পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করতে পারে উত্তর কোরিয়া। পাশাপাশি, দীর্ঘদিন ধরে সুপ্ত থাকা একটি পারমাণবিক চুল্লিতেও ফের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এই চুল্লি নির্মাণের কাজ শেষ হলে, উত্তর কোরিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় প্লুটোনিয়ামের উত্পাদন ১০ গুন বেড়ে যাবে। কোভিড-১৯’এর জন্য উত্তর কোরিয়ায় এই অস্ত্র পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ পরীক্ষার সময়টা নির্ভর করে শুধুমাত্র কিম জং উনের সিদ্ধান্তের উপর।