রিও ডি জেনেইরো: ব্রাজিলে ক্ষমতায় ফিরছে বামপন্থীরা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডানপন্থী নেতা জেইর বোলসোনারোকে পরাজিত করে জয়ী হলেন বামপন্থী নেতা লুলা দ্য সিলভা। তবে, নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। ব্রাজিলের সুপ্রিম ইলোক্টোরাল কোর্ট জানিয়েছে, লুলা ৫০.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। আর বোলসোনারো পেয়েছেন ৪৯.১ শতাংশ। তবে, বোলসোনারো এখনও তাঁর পরাজয় স্বীকার করে নেননি। ১ জানুয়ারি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন লুলা। নির্বাচনে জয়ের জন্য ব্রাজিলের ভাবি প্রেসিডেন্ট লুলাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এর আগে ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন লুলা। ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন থেকে প্রেসিডেন্ট পদে উঠে এসেছিলেন তিনি। তাঁর সময়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ অভিযান ব্যাপক সফল হয়েছিল। এইবারের নির্বাচনের প্রচার পর্বে সেই সাফল্যকেই তুলে ধরেছিলেন লুলা। গতবারের নির্বাচনে তুমুল সাফল্য পেয়ে বামপন্থী সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করেছিলেন বোলসোনারো। তবে কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে মাত্রা ছাড়া মৃত্যু এবং তার পরবর্তী সময়ে তীব্র অর্থনৈতিক মন্দার জেরে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন বোলসোনারো। সেই প্রেক্ষিতে মনে করা হয়েছিল, নির্বাচনে সহজ জয় পাবে বামপন্থীরা।
তবে, রক্ষণশীল মূল্যবোধকে রক্ষা করার আওয়াজ তুলেছিলেন হোলসোনারো। তাঁর স্লোগান ছিল, “ঈশ্বর, পরিবার এবং দেশ”। এই স্লোগান যে কাজে এসেছে, তা নির্বাচনের ফলেই প্রমাণিত। বলা যেতে পারে গোটা ব্রাজিলকে এই নির্বাচন দুইভাগে ভাগ করে দিয়েছে। লুলা যেখানে পেয়েছেন ৬ কোটি ৩ লক্ষের কিছু বেশি ভোট, বোলসোনারো পেয়েছেন ৫ কোটি৮২ লক্ষের কিছু বেশি। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতোই নির্বাচনে পরাজয় মানতে চাইছেন না বোলসোনারো। আগেই তিনি ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতিতে কারচুপি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। বোলসোনারো ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার নাগাদ তিনি নির্বাচনের বিষয়ে প্রথম বিবৃতি দেবেন।
২০০৩ থেকে ২০১০ – লুলার প্রথম মেয়াদের সময় বিশ্ব অর্থনীতি ক্রমশ সম্বৃদ্ধ হচ্ছিল। তারই সুফল ঘরে তুলেছিলেন লুলা। তবে, এইবাব় তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জটা অত্যন্ত বড়। প্রচার পর্বে, লুলা বলেছিলেন শুধুমাত্র বামপন্থীদেরই নয়, মধ্যপন্থী এবং এমনকী ডানপন্থীদের নিয়েও তিনি সরকার চালাতে চান। দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়াই তাঁর লক্ষ্য। তার পরও, তীব্র রাজনৈতিকভাবে মেরুকৃত নির্বাচনের সাক্ষী হল ব্রাজিল। দুই প্রার্থীর মধ্যে ফারাক গড়ে দিয়েছেন মাত্র ২০ লক্ষ মানুষ। এই মেরুকৃত সমাজকে সামলানোই লুলার সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিষয়েই নয়, ব্রাজিলে বর্তমানে এই মেরুকরণ দেখা যাচ্ছে সামাজিক মূল্যবোধ, পরিচয়, মতামত – সব ক্ষেত্রে। কাজেই ব্রাজিলে লাল ফিরলেও হাল ফিরবে কি না, সেটা অত্যন্ত বড় প্রশ্ন।
Congratulations to @LulaOficial on winning the Presidential elections in Brazil. I look forward to working closely together to further deepen and widen our bilateral relations, as also our cooperation on global issues: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) October 31, 2022
এদিন ব্রাজিলের সুপ্রিম ইলোক্টোরাল কোর্ট লুলাকে জয়ী বলে ঘোষণা করার পরই তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানিয়েছেন, ভারত-ব্রাজিল সম্পর্ক আরও গভীর করতে এবং এর পরিসর আরও বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে টুইট করে জানানো হয়েছে, বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয়েও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্যও উন্মুখ প্রধানমন্ত্রী। শুধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই নন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে বহু রাষ্ট্রনেতাই ফের ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন লুলা দ্য সিলভাকে।