Malcom X: মিথ্য়া মামলায় দুই দশকের কারাবাস, বর্ণবিদ্বেষের ক্ষতে ৩ কোটি ৬০ লক্ষ ডলারের প্রলেপ দিল নিউইয়র্ক

TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Nov 01, 2022 | 9:23 AM

Malcom X: অন্যায়ভাবে দোষী সাব্যস্ত হয়ে প্রায় দুই দশক জেলে ছিলেন মহম্মদ আজিজ ও খলিল ইসলাম। এই মামলা মার্কিন ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে তেতো প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল।

Malcom X: মিথ্য়া মামলায় দুই দশকের কারাবাস, বর্ণবিদ্বেষের ক্ষতে ৩ কোটি ৬০ লক্ষ ডলারের প্রলেপ দিল নিউইয়র্ক
ম্যালকম এক্স (ফাইল চিত্র)

Follow Us

ওয়াশিংটন: গত বছর কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার কর্মী ম্যালকম এক্স-এর হত্যাকাণ্ডের দায় মুক্ত হয়েছিলেন ৮৪ বছরের মহম্মদ আজিজ। তাঁরই সঙ্গে এই অভিযোগের কলঙ্ক থেকে মুক্ত হয়েছিলেন খলিল ইসলামও। যদিও, ২০০৯ সলেই ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছিল খলিলের। দুজনেই তার আগে দুই দশকেরও বেশি সময় কারাগারে বন্দি ছিলেন। দুই ব্যক্তিকেই ৩ কোটি ৬০ লক্ষ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে মার্কিন সরকার। ভুলভাবে দোষী সাব্যস্ত এই দুই ব্যক্তির পক্ষ থেকে ৪ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ৩ কোটি ৬০ লক্ষতেই রফা হয়েছে। ২ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার দেবে নিউইয়র্ক শহর কর্তৃপক্ষ, আর বাকি ১ কোটি ডলার দেবে মার্কিন ফেডেরাল সরকার। তবে, এই হাই প্রোফাইল মামলা, মার্কিন ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে তেতো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

তাঁদের আইনজীবী জানিয়েছেন, “মহম্মদ আজিজ, খলিল ইসলাম এবং তাঁদের পরিবার যে কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছেন, তাতে এটা তাঁদের প্রাপ্য। একজন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতাকে হত্যার অভিযোগে ভুলভাবে অভিযুক্ত হওয়ার তারা আজীবন কষ্ট পেয়েছে।” নিউইয়র্ক সিটির আইন বিভাগের মুখপাত্র নিক পাওলুচি বলেছেন, “তাঁরা কয়েক দশক ধরে কারাগারে কাটিয়েছেন এবং একজন আইকনিক ব্যক্তিত্বকে হত্যার মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার কলঙ্ক বহন করেছেন। এই মীমাংসা তাঁদের জন্য কিছুটা হলেও ন্যায়বিচার।”

গত শতকের ছয়ের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে নাগরিক অধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই উত্তাল সময় জন্ম দিয়েছিল বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের। তাঁদের অন্যতম ছিলেন ম্যালকম এক্স। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের বিপরীতে, নাগরিক অধিকার অর্জনের জন্য তিনি হিংসার পথ গ্রহণের পক্ষে ছিলেন। পাঁচের দশকে ইসলাম ও কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদের সমন্বয়ে আমেরিকায় ‘নেশন অব ইসলাম’ নামে একটি আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। সেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ম্যালকম এক্স। কিন্তু, এর পরের দশকে ম্যালকমের দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে বদলে যায়। ‘নেশন অব ইসলাম’-এর শ্বেতাঙ্গ-বিরোধী মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৯৬৪ সালে তিনি ওই সংগঠনের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলেন। এই বিচ্ছেদের কারণে, ‘নেশন অব ইসলাম’-এর অনেক নেতাই তাঁর উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলে মনে করেছিলেন। ম্যালকম এক্স নিজেই আশঙ্কা করেছিলেন, তাঁর উপর প্রাণঘাতী হামলা হতে পারে।

১৯৬৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী তাঁর আশঙ্কা সত্যি হয়েছিল। ম্যানহাটনের এক জায়গায় বক্তৃতা দেওয়ার সময়, ৩৯ বছর বয়সী ম্যালকমের উপর গুলি চালিয়েছিল কয়েকজন বন্দুকধারী। ম্যালকমের এক দেহরক্ষী, হালিম নামে এক বন্দুকধারীকে গুলি করতে পেরেছিলেন। মহম্মদ আজিজকে ঘটনার পাঁচ দিন পর এবং খলিল ইসলাম আরও পাঁচ দিন পরে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এর এক সপ্তাহের মধ্যে, ‘নেশন অব ইসলাম’-এর এই তিন সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। বিচার চলাকালীন হালিম তাঁর অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছিল। তবে সে বাকি দুই ব্যক্তি নির্দোষ বলে দাবি করেছিল। তা সত্ত্বেও, তিনজনকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

তবে, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য না থাকায়, তাদের অপরাধের বিষয়ে বরাবরই সন্দেহ ছিল। বিভিন্ন অপেশাদার তদন্তকারী, সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ, জীবনীকার বছরের পর বছর ধরে খলিল ও মহম্মদ আজিজ নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। ম্যানহাটন জেলার অ্যাটর্নি অফিস এবং ওই দুজনের ব্যক্তিগত আইনজীবীরা যৌথভাবে ২২ মাস ধরে তদন্ত করেছিলেন। অবশেষে গত বছর, সেই তদন্তের শেষে ওই দুজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এবার কিছুটা হলেও ন্যায়বিচার পেলেন খলিল ও মহম্মদ।

Next Article