কাবুল: সোশ্যাল মিডিয়ায় মঙ্গলবার থেকেই ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিয়ো। যেখানে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকার একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার কান্দাহারের উপর ঘুরছে। হেলিকপ্টারের থেকেও যে বিষয়টি বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা হল- হেলিকপ্টারে দড়ি বেঁধে ঝুলছেন কোনও একজন মানুষ। মার্কিন বাহিনী দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মনে করা হয় যে তালিবানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ওই কপ্টারটি। ওঠে সমালোচনার ঝড়ও। তবে একদিন কাটতেই জানা গেল সেই ভয়াবহ দৃশ্যের পিছনে আসল কাহিনী।
তালিবানদের স্বীকৃত অ্যাকাউন্ট তালিব টাইমস থেকেই শেয়ার করা হয়েছিল ওই ভিডিয়োটি। ক্যাপশনে লেখা হয়েছিল, “আমাদের বায়ুসেনাকে দেখুন! ইসলামিক এমরেটসের বায়ুসেনা কান্দাহারের উপর আকাশপথে নজরদারি চালাচ্ছে”। ভিডিয়োয় এক ব্যক্তিকে হেলিকপ্টারের সঙ্গে দড়ি বেঁধে ঝুলতে দেখেই বিতর্কের ঝড় ওঠে। তালিবান বাহিনী ওই ব্যক্তিকে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করা হয়।
If this is what it looks like… the Taliban hanging somebody from an American Blackhawk… I could vomit. Joe Biden is responsible.
— Liz Wheeler (@Liz_Wheeler) August 30, 2021
তবে কিছুক্ষণ বাদেই ওই ভিডিয়ো ঘিরে একাধিক প্রশ্ন ওঠে। ওই ভিডিয়োটি আদৌই মঙ্গলবারের কিনা, তালিবানই এই হেলিকপ্টারটি ওড়াচ্ছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। কারণ প্রথমত, তালিবানদের কাছে দক্ষ কোনও পাইলট নেই। দ্বিতীয়ত, ওই ব্যক্তিকে হেলিকপ্টার থেকে ঝুলতে দেখা গেলেও, সেটি যে মৃতদেহ, তা নিয়ে নিশ্চিতভাবে বোঝা যাচ্ছে না।
ইতিমধ্যেই একাধিক তত্ত্ব উড়ে এসেছে ওই ভাইরাল ভিডিয়ো ঘিরে। প্রথম তত্ত্ব হল, ইন্টারনেটে গতকাল থেকে যে কথাটি প্রচার হয়ে এসেছে যে, নিজেদের আধিপত্য ও ক্ষমতা প্রদর্শন করতেই কোনও এক ব্যক্তিকে মেরে হেলিকপ্টারে ঝুলিয়ে কান্দাহারের উপর দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
দ্বিতীয় তত্ত্বটি হল, হেলিকপ্টারে ঝুললেও ওই ব্যক্তি মৃত নন। মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ছাড়ার পরই তালিবানি ওই সদস্য কান্দাহারের মানুষদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছিলেন। তাঁর কোমড়ের সঙ্গে হার্নেস বাধা ছিল।
তৃতীয় তত্ত্ব হল, মার্কিন বাহিনীর ফেলে যাওয়া বিমান, হেলিকপ্টার যে বর্তমানে তাদের দখলে চলে এসেছে এবং প্রতিটি প্রদেশের উপর আকাশপথেও নজরদারি রাখা হবে। যদিও এক্ষেত্রে প্রশ্ন রয়েছে, তালিবানের দাবি মেনে নজরদারির তত্ত্ব মেনে নিলেও সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি হেলিকপ্টার থেকে ঝুলছিলেন কেন, তিনি তো কপ্টারের ভিতরে বসেই নজরদারি চালাতে পারতেন!
চতুর্থ তথা শেষ তত্ত্বটি হল, ওই তালিবানি সদস্য পতাকা ঠিক করার জন্য় কোমড়ে দড়ি বেঁধে হেলিকপ্টার থেকে ঝুলছিলেন। কান্দাহারের গভর্নরের অফিসের উপর ওই হেলিকপ্টারটিকে উড়তে দেখা গিয়েছিল, তাই মনে করা হচ্ছে যে আশেপাশেই কোথাো হয়তো তালিবানি পতাকা লাগানো ছিল। সেটি কোনও কারণে বেঁকে যাওয়ায়, তা ঠিক করতেই ওই ব্যক্তিকে আকাশে ঝুলছিলেন, যদিও তিনি সেই কাজটি করতে পারেননি।
রয়টার্সের তরফেও জানানো হয়, ভিডিয়োটিকে ভাল করে খতিয়ে দেখলে বোঝা যাচ্ছে, ওই ব্যক্তি জীবিতই রয়েছেন। তবে প্রশ্ন উঠছে, মার্কিন বাহিনী জানিয়েছিল যে আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার আগে যে সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র, সামরিক বিমান, হেলিকপ্টার ফেলে রেখে যেতে হয়েছে, সেগুলি সমস্ত কিছুই বিকল করে দেওয়া হয়েছে, যাতে তালিবানরা ব্যববার করতে না পারে। যদি সেই দাবিই সত্যি হয়, তবে ব্ল্যাক হক মার্কিন কপ্টার কীভাবে তাদের হাতে গেল এবং সেটি উড়লই বা কী করে? আরও পড়ুন: মুখে মুচকি হাসি, হাত মেলাচ্ছেন পথ চলতি মানুষদের সঙ্গে! বিমানবন্দর দখল নিতেই ভিন্ন রূপ তালিবানের