বাংলাদেশের পরিস্থিতি আগামীদিনে কোন দিকে যাবে তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর যে বেশ কিছুটা নির্ভর করছে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে, ট্রাম্পের আমলে আমেরিকার পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে? প্রশ্ন তোলার জন্য আর পাঁচটা বিষয় তো আছেই। কিন্তু এখন যেন বেশি কথা হচ্ছে ডজ নিয়ে। একদিন যদি শোনেন আমেরিকা থেকে শিক্ষা মন্ত্রক উঠে গেল, তাহলেও অবাক হবেন না। কারণ সেই সম্ভাবনা নিয়ে নানা মহলেই এখন নানা চর্চা। তবে সেই সঙ্গে আরও অনেক কিছুই হতে পারে। বহু লোকের চাকরি যেতে পারে। এমনকি মার্কিন প্রশাসনে আমলাতন্ত্রের যে কাঠামো, তার খোল-নলচে বদলে যেতে পারে। এ সবটাই এই ডজের সৌজন্যে হতে চলেছে বলে আমেরিকার মানুষের একাংশের মনে আশঙ্কা তৈরিহয়েছে। কিন্তু কী এই ডজ?
ডজ হল ডিওজিই। ডিপার্টমেন্ট অফ গর্ভনমেন্ট এফিসিয়েন্সি। ভোটের প্রচারে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে ফেডারাল সরকারের খরচ কমাবেন। তো খরচ কমাতে নতুন একটা মিনিস্ট্রি তৈরি করার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। সেটাই হল ডিপার্টমেন্ট অফ গর্ভনমেন্ট এফিসিয়েন্সি, ডজ। মার্কিন মুলুকে আশঙ্কা এই ডজের সুপারিশে প্রায় ১ লক্ষ সরকারি কর্মীর চাকরি যাবে। তাই লোকে একে বলতে শুরু করেছে, চাকরি খাওয়ার মন্ত্রক।
ভয়টা কোথায়?
ভয়টা আরও বেড়েছে ডজের মাথায় ট্রাম্প যে দু-জনকে বসিয়েছেন তাঁদের দেখে। ভোটের প্রচারে ট্রাম্পকে ছপ্পর ফুঁড়ে টাকা দেন ইলন মাস্ক। ট্রাম্পের সমর্থনে সভাও করেন। মাস্ক প্রতিদান পেয়েছেন। ডজের মাথায় ট্রাম্প তাঁকে বসিয়ে দিয়েছেন। মাস্ক টুইটার হাতে নেওয়ার পরই হাজার হাজার কর্মীকে গলাধাক্কা দিয়েছিলেন। চাকরি খাওয়া নিয়ে বেশ সুনাম আছে তাঁর। ফলে, আশঙ্কা বেড়েছে মার্কিন মুলুকে। আর, ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন উদ্যোগপতি বিবেক রামস্বামী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ট্রাম্পকে জায়গা ছেড়ে দেন। ডজের মাথায় বসিয়ে তাঁকেও পুরস্কার দিয়েছেন ট্রাম্প।
রামস্বামী রিপাবলিকান পার্টির প্রচারে সরকারি খরচ বাড়ার জন্য বাইডেন প্রশাসনকেই দায়ী করেছেন। সঙ্গে, এও বলেছেন যে আমেরিকায় শিক্ষামন্ত্রক এবং ফেডারাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন, এফবিআই রাখারই দরকার নেই। অনেক সরকারি দফতর তুলে দিলেও কিছু যাবে আসবে না। তাতে বরং লাভ হবে। সরকারের খরচ বাঁচবে। নানা দফতরে পঁচাত্তর শতাংশ লোক কমানোর কথাও শোনা গেছে রামস্বামীর মুখে। তাই, এই দু-জনকে দেখে আমেরিকায় অনেকেরই ঘুম উড়েছে। মাস্ক ও রামস্বামীকে নিয়োগের পর নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সরকারের বাড়তি খরচ কমাতে, আমলাতন্ত্রকে ভাঙতে, নিয়মকানুন কমাতে ও ফেডারেল সংস্থাগুলোর পুনর্গঠন করতেই ডজ তৈরি করা হচ্ছে।
এ যুগের ম্যানহাটন প্রজেক্ট?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পরমাণু বোমা তৈরির জন্য আমেরিকার গোপন প্রকল্পের নাম ছিল ম্যানহাটন প্রজেক্ট। ডজ-কে ট্রাম্প বলেছেন, এ যুগের ম্যানহাটন প্রজেক্ট। ফলে, বুঝতেই পারছেন ছুরি-কাঁচি ভালই চলবে। ২০২৬ সালের ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতার আড়াইশো বছর পূর্তি। তার আগেই সরকারি কর্মীদের চাকরি খাওয়ার কাজ শেষ করা হতে পারে বলে রিপাবলিকান শিবিরের খবর। আমেরিকার আইনে প্রেসিডেন্ট চাইলেই নতুন কোনও মিনিস্ট্রি তৈরি করতে পারেন না। ফলে, মনে করা হচ্ছে, সরকারের বাইরে থেকে একটা উপদেষ্টা কমিশন হিসাবে কাজ করবে ডজ। মানে, সরকারের অংশ না হয়েও সরকারের ওপর ছড়ি ঘোরাবেন দুই ব্যবসায়ী। তাতে, কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট তৈরি হবে কিনা এনিয়েও এখন আমেরিকায় নানারকম লেখালেখি হচ্ছে। ইলন মাস্কের নানা সংস্থার ওপর এখন আমেরিকার একাধিক সরকারি এজেন্সি নজরদারি চালায়। হাতে ক্ষমতা পেয়ে মাস্ক নিজেই সেসব তুলে দেবেন বলেও মার্কিন মুলুকে তৈরি হয়েছে জল্পনা।