জেনেভা: করোনাভাইরাস অতিমারির আকার ধারণ করার পর প্রায় দেড় বছর কেটে গিয়েছে। ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখনও আতঙ্ক কাটেনি। অনেক দেশেই নতুন করে মারণ আকার নিচ্ছে সেই ভাইরাস। উদ্বেগের বিষয় হল, প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে সেই ভাইরাসের চেহারা। এবার আরও এক নতুন রূপ নিয়ে মাথাব্যাথা বাড়ছে বিশেষজ্ঞদের। কলম্বিয়ায় প্রথমবার ধরা পড়েছে করোনার ‘এমইউ’ ভ্যারিয়েন্ট। ভ্যাকসিনের প্রাচীর এই ভ্যারিয়েন্ট ভেদ করতে পারে এমনই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আরও বেশি গবেষণা চলছে।
এই ভ্যারিয়েন্টের বৈজ্ঞানিক নাম B.1.621। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এটি ভাইরাসের এমন একটি রূপ, যা ভ্যাকসিনেও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না হয়ত। তবে আসল বৈশিষ্ট্য জানতে আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে ‘হু’। ডেল্টার পর এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এই ভ্যারিয়েন্টের জেরে নতুন করে মহামারীর আকার নিতে পারে করোনা। এমইউ ছাড়াও ইটা, লোওটা, কাপা, ল্যাম্বডা স্ট্রেনও সমান উদ্বেগ রয়েছে। সে দিকেও কড়া নজর রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
কলম্বিয়ার প্রথম এই ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত ভারতে এই ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান মেলেনি। এমইউ দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশেও পা রেখেছে ইতিমধ্যেই। পা রেখেছে ইউরোপেও। বর্তমানে কলম্বিয়ার মোট করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৩৯ শতাংশ এমইউ-র শিকার বলে জানা যাচ্ছে। এ দিকে নতুন করে উদ্বেগ বাড়াতে শুরু করেছে করোনার সি.১.২ ভ্যারিয়েন্টও। সেই স্ট্রেন প্রথম শনাক্ত হয় মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার এমপুমালাঙ্গা এবং গুটাং প্রদেশে। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকার ছয় প্রদেশে পা রেখেছে এটি। আর তাতেও বেড়েছে উদ্বেগ।
বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্টরা জানাচ্ছেন, বারবার অভিযোজনের ফলে করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন বহুবার নিজেকে বদলে ফেলেছে। ফলে পৌনে দু’বছর আগে চিনের উহানে করোনার যে ধরনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, তার সঙ্গে করোনার সাম্প্রতিক প্রজাতির স্পাইক প্রোটিনের মধ্যে বিপুল ফারাক রয়েছে। যার দরুণ ভাইরাসের এই নতুন প্রজাতি সহজেই ভ্যাকসিনের দেওয়া সুরক্ষার দেওয়ালও ভেঙে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। অর্থাৎ যে সময় করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কা এবং সম্ভাবনার দোলাচলে মানুষ ভুগছেন, সেই সময় যেন এই ভ্যারিয়েন্ট উদ্বেগ আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিল।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী, এই ভাইরাস নিজের প্রতিলিপি বা অনুলিপি তৈরি করে, যা একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এই পরিবর্তনকেই মিউটেশন বলে। একটি ভাইরাসের এক বা একাধিক মিউটেশনকে মূল ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট বলা হয়। SARs-COV-2-এর বহুবার মিউটেশন হয়েছে। বহু স্ট্রেনে ভেঙে গিয়েছে। গবেষকদের দাবি, আজ পর্যন্ত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই সবথেকে বেশি শক্তিশালী। আরও পড়ুন: ‘লক্ষীর ভাণ্ডারের’ জেরে বদলে যাচ্ছে ব্যাঙ্ক খোলা থাকার সময়