ওয়েলিংটন: বিগত ৫,০০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে সবথেকে বড় অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের মহা-আগ্নেয়গিরি তাউপো। তবে, প্রায় ১,৮০০ বছর ধরে এই আগ্নেয়গিরিতে অগ্নুৎপাত হয়নি। কিন্তু, সম্প্রতি ভূবিজ্ঞানীরা আগ্নেয়গিরিটির কার্যকলাপে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। ১৯৯৪ সালে প্রথমবার আগ্নেয়গিরির বিপদের ঝুঁকির মাত্রা পরিমাপ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। বিপদের সম্ভাবনা অনুযায়ী মোট ছয়টি মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এতদিন পর্যন্ত এই আগ্নেয়গিরিটির ঝুঁকির মাত্রা ছিল ০। সম্প্রতি তা ১-এ উন্নীত হয়েছে।
চলতি বছরের মে থেকে তাউপো আগ্নেয়গিরি সংলগ্ন অঞ্চলে প্রায় ৭০০টি ভূমিকম্প হয়েছে। সেগুলি মাত্রা অবশ্য এতটাই কম ছিল যে, অনেকগুলি ভূপৃষ্ঠে অনুভূতই হয়নি। সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয়েছে গত ১০ সেপ্টেম্বর, রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৪.৫। এই ধারাবাহিক ভূমিকম্পের জেরেই ভূতাত্ত্বিক সংস্থা ‘জিওনেট’ তাউপো সুপার আগ্নেয়গিরির হুমকির মাত্রা বাড়াতে বাধ্য করেছে। সৌভাগ্যবশত, ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলছেন যে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা এখনও “খুব কম”। প্রসঙ্গত ১৮৭০ সাল থেকে, তাউপো অন্তত ১৭বার অগ্নুৎপাতের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কিন্তু সতর্কতা ব্যবস্থার দ্বিতীয় স্তরের থেকে বেশি হুমকি কোনওবারই দেখ যায়নি।
গত কয়েক মাসে, বেশিরভাগ ভূমিকম্প এবং স্থল বিকৃতি রেকর্ড করা হয়েছে তাউপো হ্রদের হোরোমাটাঙ্গি রিফ এলাকায়। তাই বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, আগ্নেয়গিরিটির ম্যাগম্যাটিক সিস্টেমটি এখানেই অবস্থিত। জিওনেট সংস্থা বলেছে: “আমরা আগ্নেয়গিরির ভিতরে লাভা এবং হাইড্রোথার্মাল তরলগুলির চলাচলের কারণে ভূমির উত্থান এবং ভূমিকম্পের কার্যকলাপ ব্যাখ্যা করি। ভূমিকম্প এবং ভূমি উত্থানের সময় কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। সেই পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা হ্রদের চারপাশে অবস্থিত প্রস্রবণ এবং গ্যাস ভেন্টগুলি থেকেও নমুনা সংগ্রহ করেছি।”
জিওনেট আরও জানিয়েছে, আগ্নেয়গিরির সতর্কতা স্তরগুলি আগ্নেয়গিরিটির অস্থিরতা বা কার্যকলাপের বর্তমান স্তরকে প্রতিফলিত করে। এর থেকে ভবিষ্যত কার্যকলাপের পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। তারা বলেছে, “তাউপোর মতো আগ্নেয়গিরিতে কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর ধরে অস্থিরতা চলতে পারে। তবে এর ফলে অগ্নুৎপাত ঘটবেই তার কোনও মানে নেই।”
তবে এরপরও বিপদের সম্ভাবনা দূর হচ্ছে না। ১৮০০ বছর আগে যখন তাউপো আগ্নেয়গিরিতে অগ্নুৎপাত ঘটেছিল, তখন শিলা এবং পাইরোক্লাস্টিক প্রবাহের কারণে তাউপো হ্রদের গভীরতা কয়েক ডজন ফুট বেড়ে গিয়েছিল। উত্তরাংশের দ্বীপটির বেশিরভাগ অঞ্চল কমপক্ষে ১ সেন্টিমিটার পুরু ছাইয়ে ঢেকে গিয়েছিল। কাজেই বিজ্ঞানীদের আশ্বাসের পরও ভয় যাচ্ছে না।