সিওল: মার্কিন গোয়েন্দাদের আশঙ্কা প্রায় সত্যি করলেন কিম জং উন। ‘কোয়াড’ শীর্ষ বৈঠক সেড়ে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এশিয়া ত্যাগ করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই উত্তর কোরিয়া অন্তত তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে বলে দাবি করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এর মধ্যে একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা আইসিবিএম বলে দাবি সিওলের। দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়ায় রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের সুনান এলাকা থেকে এক ঘন্টারও কম সময়ে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে’। প্রসঙ্গত, আগেই মার্কিন গোয়েন্দারা সতর্ক করে জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাপান সফরের মধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে পারে পিয়ংইয়ং।
দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, বুধবার পিয়ংইয়ং থেকে উৎক্ষেপিত প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটিই আইসিবিএম ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয় যে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয়েছিল, সেটি কোন প্রকৃতির তা জানা যায়নি। সিওলের দাবি, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়। উৎক্ষেপণের কিছু পড়েই পড়ে যায় সেটি। তৃতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি ছিল একটি স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা এসআরবিএম। দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি জাপানও দাবি করেছে, উত্তর কোরিয়া থেকে বুধবার ভোরে অন্তত দুটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
গত ১০ মে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন ইউন সুক-ইওল। উত্তর কোরিয়ায় সাম্প্রতিক এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জেরে তিনি এদিন প্রথমবারের মতো জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকেন। কোয়াড বৈঠক চলার মধ্যেই এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে তিনি ‘গুরুতর উস্কানি’ বলেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই ক্রমাগত উস্কানি দক্ষিণ কোরিয়া-মার্কিন সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। এর ফলে উত্তর কোরিয়া বাকি বিশ্ব থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। হোয়াইট হাউসের এক আধিকারিক বলেছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই জাপান ত্যাগ করেছিলেন বাইডেন। তাঁকে, পিয়ংইয়ং-এর ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে জানানো হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরই দক্ষিণ কোরিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যৌথ মহড়া শুরু করেছে। একটি ভূমি থেকে ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয় সেনাবাহিনী।
U.S. Forces Korea has released footage showing joint U.S.-ROK launches of a South Korean Hyunmoo-II missile and a surface-to-surface missile from the U.S. Army Tactical Missile System (ATACMS), carried out in response to North Korea’s test of three missiles earlier Wednesday. pic.twitter.com/DBCwtpXJKb
— NK NEWS (@nknewsorg) May 25, 2022
২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কিম জং-উনের শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল। তারপর, থেকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ রেখেছিল পিয়ংইয়ং। তবে চলতি বছরের মার্চ থেকে উত্তর কোরিয়া ফের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা শুরু করেছে। এর মধ্যে হাইপারসনিক অস্ত্র পরীক্ষা যেমন ছিল, ছিল উত্তর কোরিয়ায় সবথেকে বড় মাপের আইসিবিএম-এর পরীক্ষাও। কোয়াড বৈঠকের আগে মার্কিন গোয়েন্দারা জানিয়েছিলেন, বাইডেন এশিয়ায় থাকাকালীনই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করতে পারে উত্তর কোরিয়া। এমনকী, দীর্ঘ দিন বন্ধ রাখার পর, ফের পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষাও শুরু করতে পারে, তারা এমন সতর্কতাও ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, উত্তর কোরিয়ায় পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার জায়গাটিতে গত তিন মাস ধরে জোর কদমে কাজ চলছে।