দেশের অন্দরে উত্তেজনায় ভারতকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে পাক সরকার

পাকিস্তানে উত্তপ্ত পরিস্থিতির পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ পাক অধিকৃত গিলগিট-বাল্টিস্তানের নির্বাচন। ভারত বরাবরই কাশ্মীরের এই অংশকে নিজেদের বলে দাবি করে এসেছে, পাকিস্তান সেই দাবি নাকজ করেছে বারংবার।

দেশের অন্দরে উত্তেজনায় ভারতকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে পাক সরকার
উত্তপ্ত ইসলামাবাদ। ছবি সৌজন্যে: গুগল
Follow Us:
| Updated on: Nov 27, 2020 | 2:19 PM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: একদিকে গিলগিট-বাল্টিস্তানে নির্বাচনে (Gilgit-Baltistan Election)জালিয়াতির অভিযোগ, অন্যদিকে তেহরিক-ই-লাবাবিক পাকিস্তানের সমর্থকদের ফরাসি দূতাবাস (French Embassy) আক্রমণের হুমকি-দুই মিলিয়ে চরম উত্তেজনা পাকিস্তানে (Pakistan)। তবে নিজেদের গা বাঁচাতে প্রতিবারের মতোই এইবারও ভারত (India)-কেই উত্তেজনা ছড়ানোর পিছনে দায়ী করছে পাক সরকার।

সম্প্রতি ফ্রান্সে মহম্মদের কার্টুন দেখানোয় চোখ রাঙিয়েছিল সন্ত্রাসবাদীরা। তারপর থেকেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি। এরই মাঝে তেহরিক-ই-লাবাবিক পাকিস্তান (Tehreek-e-Labbaik Pakistan)-র সমর্থকরা ফরাসি রাষ্ট্রদূত (French ambassador)-কে পদচ্যুত করার দাবিতে সরব হয়েছে। ইসলামাবাদে অবস্থিত ফরাসি দূতাবাস ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে তারা। সোমবার ফৌজাবাদে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে সংঘর্ষ বাধে পুলিস ও প্রতিবাদীদের মধ্যে। পাকিস্তানি সাংবাদিক অম্বর রহিম শামসি টুইট করে লেখেন,”ফরাসি রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগের দাবিতে হাজার হাজার টিএলপি (TLP) সমর্থকরা ইসলামাবাদে (Islamabad) প্রবেশপথ আটক করে রেখেছে। অথচ সংবাদমাধ্য়মগুলিতে দেখানো হচ্ছে কেবল গিলগিট-বাল্টিস্তান নির্বাচন ও ক্রিকেট।”

অন্যদিকে উত্তর ওয়াজিরিস্তানেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে পাশতুনদের গণহত্যার প্রতিবাদে পাশতুন তহফুজ আন্দোলনের (Pashtun Tahafuz Movement) সমর্থকরা মিরান শাহে জমা হয়, তাদের মুখে একটাই স্লোগান,”ইয়ে যো দেহসদগর্দি হ্যায়, ইসকে পিছে উর্দি হ্যায় (এই সন্ত্রাসবাদের পিছনে উর্দিধারীদের হাত রয়েছে)”। পিটিএম (PTM) নেতা মনজুর পশতিন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পাক সরকারের মদত রয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন,”কিছু মানুষ জিজ্ঞাসা করছিল যে পিটিএমের কী হল এবং কোথায় গেল তারা? তাদের বলে দিন পিটিএম এখানে। যারা পিটিএমকে নিকেষ করতে চায়, তাদের শেষদিন অবধি অপেক্ষা করতে হবে।”

তবে পাকিস্তানে উত্তপ্ত পরিস্থিতির পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ পাক অধিকৃত গিলগিট-বাল্টিস্তানের নির্বাচন। ভারত বরাবরই কাশ্মীরের এই অংশকে নিজেদের বলে দাবি করে এসেছে, পাকিস্তান সেই দাবি নাকজ করেছে বারংবার। বিশেষ তকমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে রবিবার ২৩টি আসনের এই নির্বাচনে এগিয়ে রয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (Imran Khan)-র দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (Pakistan Tehreek-i-Insaf)। কেবল ভারত নয়, পাকিস্তানের বাসিন্দাদের মতেও এই নির্বাচন চোখে ধুলো দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। পাকিস্তান পিপলস পার্টি (Pakistan People’s Party)-র চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি জানান, তিনিও শীঘ্রই গিলগিট-বাল্টিস্তান আন্দোলনে যোগ দেবেন।

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের এক সক্রিয় কর্মী আমজাদ আয়ুব মির্জা এই বিষয়ে বলেন,”পাকিস্তানের প্রশাসনিক শাসন এক বিরাট সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, যার প্রত্যক্ষ ফলাফল হিসাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের মতো ঘটনা দেখা যাচ্ছে। চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে সংসদ ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিরোধের ফলেই দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি প্রভাবিত ও স্থগিত হয়ে গিয়েছে।”

বিশ্বের নজর থেকে দেশের মধ্যে অন্তর্কলহ লুকোতেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রীপরিষদকে ভারতের বিরুদ্ধে ভুয়ো প্রচার চালাতে নিয়োগ করেছেন বলে অধিযোগ একাংশের। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি সম্প্রতি ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে পাকিস্তানের শান্তির পথে বাধা সৃষ্টি করছে ভারত। রেলমন্ত্রী শেখ রসিদও অভিযোগ তুলে বলেন, দেশের বেশকিছু উল্লেখযোগ্য রাজনীতিবিদদের লক্ষ্য করছে ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং(RAW)। কয়েক সপ্তাহ আগেই পাক সরকারের তরফ থেকে ১১টি বিরোধী দলের মিলিত হয়ে পাকিস্তান ডেমোক্রাটিক মুভমেন্টের (Pakistan Democratic Movement) পদযাত্রাগুলিতে ভারতের সপক্ষে প্রচারের অভিযোগ তোলা হয়।

এই বিষয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব (Anurag Srivastava) বলেন,”পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যে তথাকথিত প্রমাণগুলি জোগাড় করেছে তার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই এবং স্পষ্টই বোঝা যায় তা অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। ভারতকে দোষী প্রমাণের এই প্রচেষ্টায় গুটিকয়েকজনই বিশ্বাস করবে কারণ আন্তর্জাতিক মন্ডলী পাকিস্তানের এইধরনের কৌশল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। পাকিস্তান সরকার যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে মদত দেয়, তা সেই দেশের প্রধানরাই স্বীকার করে নিয়েছে। সমগ্র বিশ্বের কাছে সন্ত্রাসের মুখ হিসাবে পরিচিত ওসামা বিন লাদেনের খোঁজ পাকিস্তানেই পাওয়া গিয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সংসদকক্ষে দাঁড়িয়েই তাঁকে শহিদ হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।পুলওয়ামা হামলায় পাকিস্তানের যোগ ও সাফল্য সম্পর্কে স্বীকার করে নিয়েছিলেন ওই দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রীও। বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটা সন্ত্রাসবাদী হামলার যোগ পাওয়া গিয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গেই। ভুয়ো বিবৃতি ও তথ্যের বিকৃতি ঘটিয়ে নিজেদের দোষ ঝেড়ে ফেলতে পারবে না পাকিস্তান। আমরা নিশ্চিত যে সমগ্র বিশ্বই বিষয়টির উপর নজর রাখবে।”