ওয়াশিংটন: ৮ অক্টোবর আমেরিকার নিউ জার্সির ছোট্ট শহরে রবিন্সভিলে, উদ্বোধন হতে চলেছে বাপস (BAPS) স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম মন্দির। আধুনিক যুগে ভারতের বাইরে স্থাপিত সর্ববৃহৎ হিন্দু মন্দিরগুলির অন্যতম হতে চলেছে এই মন্দির। ১২,৫০০-রও বেশি স্বেচ্ছাসেবক ১২ বছর ধরে হাতে খোদাই করে এই মন্দির তৈরি করেছেন। ৮ তারিখ উদ্বোধন হলেও, ৩০ সেপ্টেম্বর মোহান্ত স্বামী মহারাজের উপস্থিতিতে ইতিমধ্য়েই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে। হিন্দু শিল্প ও স্থাপত্যের একটি মাইলফলক বলা হচ্ছে এই মন্দিরকে। মন্দিরটির উদ্বোধনের আগে, শুভকামনা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক।
২৯ সেপ্টেম্বর মন্দির কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি লিখে আসন্ন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে তাঁর আনন্দ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি লিখেছেন, “নিউ জার্সির রবিন্সভিলে অক্ষরধাম মহামন্দিরের উদ্বোধনের খবর জেনে আমি আনন্দিত। বিশ্বব্যাপী অসংখ্য ভক্তদের জন্য এই অনুষ্ঠান গভীর আধ্যাত্মিক তাত্পর্যপূর্ণ। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে হিন্দু মন্দিরগুলি সেবা এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্র। এগুলি শুধুমাত্র ভক্তির কেন্দ্রই নয়, শিল্প, সাহিত্য, স্থাপত্যের জ্ঞান ও অভিব্যক্তি প্রকাশের প্ল্যাটফর্মও বটে।” তাঁর মতে, ভারতীয় স্থাপত্যকলার শ্রেষ্ঠত্ব, ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে নিউ জার্সির অক্ষরধাম মন্দির। বাপস স্বামীনারায়ণ সংস্থার সকলকে তিনি শুভকামনা জানিয়েছেন।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই অক্ষরধাম মন্দিরের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর। ২০১৭ সালে, তিনি গুজরাটের গান্ধীনগরে অবস্থিত অক্ষরধাম মন্দির পরিদর্শন করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলকে মন্দিরে স্বাগত জানিয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে, জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য গত সেপ্টেম্বরে নয়া দিল্লিতে এসে, সেখানকার অক্ষরধাম মন্দিরে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। সেই সময় সুনক বলেন, “এই মন্দিরের সৌন্দর্য এবং এর শান্তি, সম্প্রীতি এবং ভালো মানুষ হয়ে ওঠার সার্বজনীন বার্তা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি। এটা শুধুমাত্র একটি উপাসনালয়ই নয়, এটি ভারতের মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতির এক মাইলফলক এবং বিশ্বে ভারতের অবদানকে তুলে ধরে।”
প্রথম অক্ষরধাম মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল ১৯৯২ সালে, গুজরাটের গান্ধীনগরে। এরপর ২০০৫ সলে নয়া দিল্লিতে দ্বিতীয় অক্ষরধাম মন্দিরটির উদ্বোধন হয়েছিল। এবার নিউ জার্সিতে হতে চলেছে তৃতীয় মন্দিরটির উদ্বোধন। এই মন্দিরে সব মিলিয়ে ১০,০০০ ভাস্কর্য এবং মূর্তি, বিভিন্ন ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র এবং নাচের ধরন খোদাই করা আছে। প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, প্রাচীন ভারতীয় সাংস্কৃতিক নকশা মেনে এই মন্দির তৈরি করা হয়েছে। প্রধান উপাসনালয় ছাড়াও এই মন্দির কতমপ্লেক্সে আরও ১২টি ছোট মন্দির থাকছে। মন্দির তৈরির জন্য চার ধরনের পাথর ব্যবহার করা হয়েছে – মার্বেল, গ্রানাইট, গোলাপী বেলেপাথর এবং চুনাপাথর। চার ধরনের পাথরই কঠোর তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। নয়টি শিখর (সদৃশ কাঠামো), এবং নয়টি পিরামিডাল শিখরগুলি স্বতন্ত্র হিন্দু মন্দিরের নকশা তৈরি করে। ঐতিহ্যবাহী পাথরের নির্মাণে নির্মিত সবচেয়ে বড় উপবৃত্তাকার গম্বুজটি পাওয়া যায় অক্ষরধামে। এই মন্দির কয়েক সহস্রাব্দ টিকে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।