সিডনি: ২০১৪ সালের পর ফের একবার অস্ট্রেলিয়া (Australia) সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। মঙ্গলবার রাতে সিডনির (Sydney) অলিম্পিক পার্কে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টলি আলবানিজ়ের সঙ্গে যৌথ বক্তব্য রাখবেন তিনি। কাতারে কাতারে প্রবাসী ভারতীয়রা ইতিমধ্যেই সিডনির দিকে রওনা দিয়েছেন নমোকে সামনা সামনি দেখার জন্য। আগামিকাল সিডনির অলিম্পিক পার্কে নমোকে দেখার জন্য প্রায় ২০ হাজার মানুষের ভিড় জমতে পারে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে। এবারের সফরে ভারত-অস্ট্রেলিয়া বন্ধুত্বকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান মোদী। সিডনিতে পা রাখার আগে ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’কে সেই কথাই জানালেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে চান তিনি।
‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আলবানিজ়কে ‘প্রিয় বন্ধু’ হিসেবেও সম্বোধন করেন তিনি। বললেন, ‘আমি সহজে সন্তুষ্ট হওয়ার লোক নই। আমি দেখেছি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ়ও আমার মতোই মানসিকতার। তাই, সিডনিতে যখন আমাদের আবার দেখা হবে, তখন দুই দেশের সম্পর্ককে কীভাবে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই বিষয়টি আমরা পর্যালোচনা করতে পারব বলে আমি মনে করি।’ প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথায়, ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে এই সুন্দর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নেপথ্য প্রবাসী ভারতীয়দের ভূমিকা অনেকটা। দুই দেশের মধ্যে একটি সেতুবন্ধনের কাজ করেন তাঁরা। দুই দেশেরই যে ক্রিকেটের জন্য একই ধরনের উন্মাদনা রয়েছে, সেই দিকটিও উঠে আসে নমোর কথায়।
দুই দেশের বার্ষিক সম্মেলন, ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ট্রেড এগ্রিমেন্ট, কম্প্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ… এসবের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। মোদীর মতে, ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর শেষ সফরের পর, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এক ‘মৌলিক পরিবর্তন’ দেখা গিয়েছে। প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বিনিয়োগ, শিক্ষা, জল, জলবায়ু পরিবর্তন, অচিরাচরিত শক্তি, খেলাধুলো, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের যে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে, সেই কথাও বলেন তিনি।
মোদী জানান, গত কয়েক বছরে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী ভারতীয়র সংখ্যাও অনেকটা বেড়েছে। উল্লেখ্য, হিরোশিমায় জি-৭ সম্মেলেনর সাইডলাইনে মোদীর সঙ্গে আলবানিজ়ের বৈঠক হয়েছিল। দুই দেশই যে নিজেদের দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে আগ্রহী তা মোদীর এই অস্ট্রেলিয়া সফর থেকেই স্পষ্ট। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পিছিয়ে আসার পর কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য মোদী অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছেন।
মোদী বলেন, ‘ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, সন্ত্রাসবাদ, জলদস্যুদের সমস্যা ও বেআইনিভাবে মাছ ধরার মতো বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। ভারত মনে করে, একমাত্র দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যাগুলির সমাধান হতে পারে।’
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক অতীতে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া বেশ কিছু যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মালাবার জয়েন্ট নেভাল এক্সারসাইজ়। সেখানে এক যৌথ সামরিক মহড়ায় ভারত, অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানও অংশগ্রহণ করেছিল। মোদী বললেন, ‘দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস থেকেই প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা জনিত ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করার এই পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমাদের নৌ সেনা যৌথ মহড়ায় অংশ নিচ্ছে।’
যদিও পারমাণবিক শক্তি-সমৃদ্ধ সাবমেরিনের বিষয়ে AUKUS চুক্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান নিয়ে সেভাবে কিছু বলতে চাননি মোদী। তাঁর বক্তব্য, ‘এটি পুরোপুরি অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্ত। কী কারণে, তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা কী ভাবছে, সেই বিষয়ে আমাদের জানিয়েছে।’ এর পাশাপাশি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের অবস্থান দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করছেন তিনি। বললেন, ‘ভাল বন্ধু হওয়ার একটা সুফল হল, আমরা খোলামেলা আলোচনা করতে পারি এবং একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে পারি। ভারতের অবস্থান অস্ট্রেলিয়া খুব ভালভাবে বোঝে এবং এতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না।’