রটারডাম (নেদারল্যান্ডস) : করোনা ফের দাঁত নখ বের করা শুরু করতেই আবারও কড়াকড়ি শুরু হয়েছে ইউরোপের একাধিক শহরে। বিশেষ করে নেদারল্যান্ডসের বেশ কিছু শহরে এই করোনা নিয়ে কড়াকড়ি মেনে নিচ্ছেন না সেখানকার নাগরিকরা। প্রায় লকডাউনের মতো যে কড়াকড়ি জারি করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সেখানকার আম জনতার একাংশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করে রটারডাম শহরে। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালাতে বাধ্য হন পুলিশকর্মীরা।
রটারডামের মেয়র আহমেদ আবউতালেব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “সেই সময় ওখানে পরিস্থিতি যা হয়ে গিয়েছিল, তাতে পুলিশকর্মী আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালানো ছাড়া আর কোনও উপায় পাননি। এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
যে ভয়ঙ্কর ছবি রটারডাম শহরজুড়ে দেখা গিয়েছে, তাকে এককথায়”সহিংসতার বেলেল্লাপনা” হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন সেখানকার মেয়র আহমেদ আবউতালেব। পরে তিনি আরও জানান, পুলিশ আধিকারিকরা বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি করার পর কয়েকজন জখম হয়েছে। যদিও ওই বিক্ষোভকারীদের জখম কতটা গুরুতর সেই সম্পর্কে কোনও তথ্য দিতে পারেননি মেয়র।
সংঘর্ষে কমপক্ষে সাতজন জখম হয়েছে বলে, রটারডাম পুলিশের তরফে টুইটারে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী ও আধিকারিকও জখম হয়েছেন বলে খবর। এই হিংসার জেরে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নেদারল্যান্ডসে গ্রীষ্মের পর থেকেই করোনার প্রকোপ ফের বাড়তে শুরু করেছিল। আর তার জেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথম পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে ফের আংশিক লকডাউন জারি করা হয়েছিল। আর এর পরেই আমজনতার মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার এক দিনে ২৩ হাজার নতুন সংক্রমণের হদিশ পাওয়া গিয়েছে নেদারল্যান্ডসে।
করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে তিন সপ্তাহ ব্যাপী লকডাউন জারি করা হয়েছে নেদারল্যান্ডসে। রেস্তরাঁ, বার এবং অত্যাবশ্যক পণ্যের দোকানগুলি রাত ৮ টার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন খুচরা দোকান এবং পরিষেবাগুলি সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। বাড়িতে কোনও ঘরোয়া সামাজিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও চারজনের বেশি অতিথি থাকতে পারবে না।
আর শুধু নেদারল্যান্ডসই নয়, একাধিক দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অস্ট্রিয়ায় সম্পূর্ণ লকডাউন জারি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করতে নতুন নিয়ম আনা হচ্ছে সে দেশে। আর এরই প্রতিবাদে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় পথে নেমেছিল হাজার হাজার মানুষ। পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না বেরিয়ে যায়, তার জন্য ১৩০০ পুলিশ আধিকারিককে মোতায়েন করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি ফ্রান্সেও ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চালু করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
এদিকে করোনা টিকাকরণ বাধ্যতামূলক করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়াতেও। মেলবোর্ন, সিডনি, অ্যাডিলেড, ব্রিসবেনের মতো বড় শহরগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভের আঁচ। ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করার প্রতিবাদে সিডনির পথে নামেন প্রায় হাজার দশেক বিক্ষোভকারী।
আরও পড়ুন : Covid in Bangladesh: ২০ মাস পর করোনায় মৃত্যুহীন দিন দেখল বাংলাদেশ