ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কো যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরই যুদ্ধবিরতি নিয়ে রাশিয়ার অবস্থান জানাবেন পুতিন। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গী বেলারুশ। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোকে সঙ্গে নিয়েই সাংবাদিক বৈঠক করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। জানালেন, ৩০ দিনের জন্য সংঘর্ষবিরতিতে তিনিও রাজি। তবে, তাঁর কিছু শর্ত আছে। প্রশ্ন আছে। সেইগুলো আগে স্পষ্ট হওয়া দরকার। ফলে, খাতায়-কলমে যুদ্ধবিরতি হলেও বাস্তবে কতটা কী হবে তা নিয়ে একটা সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার নীতিগত অবস্থানে একটা বড় ফারাক আছে। ইউক্রেন চায় প্রথমে লড়াই বন্ধ হোক। তারপর লং রান সলিউশনের খোঁজে আলোচনা আরম্ভ হোক। রাশিয়া চায় সলিউশন ও ট্রুস, দুটো নিয়েই একইসঙ্গে কথা চলুক। এবং একটাই চুক্তিতে দুটো বিষয় থাকুক। এই জায়গা থেকেই পুতিন বেশ কয়েকটা
প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায় যুদ্ধের কারণগুলো দূর করে দীর্ঘমেয়াদী শান্তির রাস্তা খুঁজতে হবে। সে রাস্তার দেখা মিললে তবেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্টের প্রশ্ন, যুদ্ধবিরতির এই ৩০ দিনে ইউক্রেন নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে ফের আক্রমণ শুরু করবে না, এই গ্যারান্টি কে দেবে। ২ হাজার কিলোমিটার এলাকায় কে কখন যুদ্ধবিরতি ভাঙছে, সেটা মনিটর করবে কে। রাশিয়া তার কুর্স্ক এলাকা ইউক্রেনের হাত থেকে পুনর্দখল করেছে। তবে সেখানে ইউক্রেনের কিছু সেনা এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ কে দেবে।
পুতিন জানান, এই বিষয়গুলোর নিষ্পত্তির জন্য তিনি দরকারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলবেন। এগুলো শুনে আবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মন্তব্য করেছেন, যুদ্ধ থামাব না। এই কথাটা ট্রাম্পের মুখের ওপর সরাসরি বলতে পারছেন না পুতিন। তাই তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অজুহাত খুঁজতে এসব বলছেন। এতো প্রশ্ন তুললে তো লড়াইটাই থামবে না। সবার আগে যেটা হওয়া দরকার। পুতিন অবশ্য যুদ্ধ থামাতে সদর্থক ভূমিকা নেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। সাংবাদিক বৈঠকে ধন্যবাদ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদীকেও। বলেছেন, যুদ্ধ থামাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, চিন, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট যতটা সময় ব্যয় করেছেন, যেরকম উদ্যোগ নিয়েছেন, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। তবে আমার মনে হয়, রুশ প্রেসিডেন্ট প্রেসকে যে কথাগুলো বলেননি, সেগুলো বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রিমিয়া নিয়ে কেউ ভবিষ্যতে প্রশ্ন তুলবে না। ইউক্রেনের যে জমি রাশিয়া দখল করেছে, তার ওপর রাশিয়ার অধিকারকেই স্বীকৃতি দিতে হবে। অফিসিয়ালি বলতে হবে ন্যাটো ইউক্রেনকে নেবে না। ইউক্রেনের মাটিতে অন্য কোনও দেশের সেনা পা রাখবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এই চারটে বিষয়ে গ্যারান্টি চাইছেন পুতিন। সেই গ্যারান্টি মিললে তবেই তিনি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে যাবেন। তার আগে নয়। আর রাশিয়ার পরমাণু শক্তিই সমঝোতা-টেবিলে পুতিনকে সুবিধাজনক জায়গায় রাখছে।