মস্কো: ইউক্রেনে অত্যাধুনিক ‘লেজার অস্ত্র’ ব্যবহার করতে চলেছে রাশিয়া। এই অস্ত্র পরীক্ষায় তারা সফল হয়েছে বলে, বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিসভ। তিনি জানিয়েছেন, এই ‘জাদিরা’ নামে এই লেজার ভিত্তিক অস্ত্র ব্যবস্থা, পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকা কৃত্রিম উপগ্রহের নজরদারি বন্ধ করে দিতে পারে। সেই সঙ্গে, প্রায় ৫ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত, ড্রোনকে ধ্বংস করতে পারে এই অস্ত্র। গত মঙ্গলবার এই পরীক্ষা করেছে ক্রেমলিন। তাদের দাবি, ইতিমধ্যেই ইউক্রেনে মোতায়েন রুশ ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এই নয়া অস্ত্র।
তবে, রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রী তাঁর দাবির সপক্ষে, কোনও প্রমাণ গেখাতে পারেননি। যা নিয়ে মস্কোকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি ইউক্রেনিয় প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি, এই নয়া রুশ অস্ত্রকে নাৎসি জার্মানির ‘ওয়ান্ডার ওয়েপন’ বা ‘বিস্ময় অস্ত্র’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। জেলেনস্কি বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাদের যুদ্ধে জয় পাওয়া সম্ভব নয় বুঝেই তাদের হাতে এক বিস্ময় আছে বলে প্রচার করেছিল নাৎসি বাহিনী। যতই হার প্রতীয়মান হয়েছে, ততই এই মিথ্যা প্রচারের ঝাঁঝ বেড়েছিল। কিন্তু, তাদের হাতে সেরকম কোনও অস্ত্র ছিল না। রাশিয়াও ‘লেজার অস্ত্রে’র মধ্যে সেই ‘বিস্ময় অস্ত্রর’ খোঁজ করছে, আদতে যার কোনও অস্তিত্বই নেই। এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান পুরোপুরি ব্যর্থ।
Russian Peresvet high energy laser weapon system pic.twitter.com/PO755AYMQX
— Caesar (@Ninja998998) December 7, 2018
২০১৮ সালে রাশিয়া তাদের প্রথম লেজার ভিত্তিক অস্ত্র ব্যবস্থা ‘পেরেসভেট সিস্টেম’ সামনে এনেছিল। তবে, সেই সময় ওই অস্ত্রের বিষয়ে কোনও বিশদ তথ্য দেয়নি মস্কো। বৃহস্পতিবার বরিসভ দাবি করেছেন, ‘পেরেসভেট সিস্টেম’এর থেকেও শক্তিশালী লেজার-ভিত্তিক অস্ত্র ব্যবস্থা তৈরি করেছে রাশিয়া। সেটাই হল ‘জাদিরা’। রুশ সরকারি টেলিভিশনে বরিসভ বলেন, ‘পেরেসভেট অন্ধ করে দিত, নতুন প্রজন্মের লেজার-ভিত্তিক অস্ত্রগুলি লক্ষ্যবস্তুকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। তাপ সৃষ্টি করে পুড়িয়ে দেয়। গত মঙ্গলবারের পরীক্ষায় মাত্র ৫ সেকেন্ডে, ৫ কিলোমিটার দূরে থাকা একটি ড্রোন পুড়িয়ে দিয়েছে ‘জাদিরা’।
বস্তুত, বহু দেশই এই মুহূর্তে লেজার-ভিত্তিক অস্ত্র ব্যবস্থা বিকাশ করতে চাইছে। তবে, অধিকাংশ দেশের অস্ত্র ব্যবস্থাই এখনও প্রোটোটাইপ স্তরে রয়েছে। গত মাসেই, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট জানিয়েছিলেন, তাদের সেনা বাহিনী ‘আয়রন বিম’ নামে একটি লেজার ভিত্তিক অস্ত্র ব্যবস্থা তৈরি করেছে। গত বছর যুক্তরাজ্যও লেজার ভিত্তিক অস্ত্র ব্যবস্থা বিকাশে জন্য সামরিক বাজেট নির্ধারণ করেছিল। এর মধ্যে রাশিয়া সত্য়িই এই বিষয়ে দৌড়ে এগিয়ে গেল কিনা, তাই নিয়ে সন্দেহ দেখা গিয়েছে। মস্কোর সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল সিকিওরিটির দাবি, রাশিয়া ‘জাদিরা লেজার সিস্টেম’ যদি তৈরি করেও থাকে, তাদের উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বাড়াতে হবে। নাহলে, হাতে জাদিরা থাকলেও, যুদ্ধে এই অস্ত্রের কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে না।