নয়া দিল্লি: দীর্ঘ ছয় বছর পর এক ছাদের তলায় দেখা যাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে উজবেকিস্তানের সমরকন্দে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বার্ষিক সম্মেলনে মুখোমুখি হবেন দুই রাষ্ট্রনেতা। এক উচ্চপদস্থ কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, এই রাষ্ট্রগোষ্ঠীর শীর্ষ বৈঠক চলাকালীন ভারত-পাক শীর্ষ স্তরের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন পর দুই দেশের শীর্ষনেতারা একই প্রাঙ্গণে থাকবেন। কাজেই তাঁদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
শুক্রবারই (২২ জুলাই), তিন দিনের পাকিস্তান সফরে আসছেন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন বা এসসিও গোষ্ঠীর সেক্রেটারি জেনারেল ঝাং মিং। সফরকালে উজবেকিস্তানের সমরকন্দে এসসিও-র বার্ষিক সম্মেলনে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকে আমন্ত্রণ জানাবেন তিনি। আগামী ১৫ এবং ১৬ সেপ্টেম্বর এই বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বলেই নির্ধারিত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ৬ বছর পর ফের এক ছাদের নিচে থাকবেন ভারত ও পাকিস্তান – দুই দেশের দুই প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সংস্থা আইএএনএস জানিয়েছে, ভারতের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। ইসলামাবাদ থেকেও কোনও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রস্তাব এসেছে বলে জানায়নি সাউথ ব্লক। তবে এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে আইএএনএস বলেছে, “ভারত এখনও কোনও বৈঠকের অনুরোধ না করায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কোনও কাঠামো এখনও তৈরি করা হয়নি। যদি এমন অনুরোধ করা হয়, তাহলে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক হবে।’
সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের মধ্যে এই বৈঠককে আনুষ্ঠানিক রূপ দিতে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাক চ্যানেল আলোচনা চলছে। ওই সূত্রের আরও দাবি, দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে সেষ পর্যন্ত এই বৈঠক হলে, তারপর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন শেহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের কাটাস রাজ মন্দিরে সফরে যেতে পারেন নরেন্দ্র মোদী। চলতি বছরের শুরুতে, শেহবাজ শরীফ পাক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দুই প্রধানমন্ত্রীই টুইটারে শুভেচ্ছাবার্তা বিনিময় করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের শরিফ পরিবারের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক বরাবরই ভাল। ২০১৪ সালে তাঁর প্রথমবর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণের সময়, সেই অনুষ্ঠানে পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের দাদা কথা প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদী। ২০১৫ সালে, প্রধানমন্ত্রী মোদী লাহোরে একটি আচমকা নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করতেও গিয়েছিলেন। তবে, ২০১৬ সালের পাঠানকোট সন্ত্রাসবাদী হামলার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে যাবতীয় আলোচনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর একটিও বৈঠক হয়নি।
চিন, পাকিস্তান, রাশিয়া, ভারত, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান এবং কাজাখস্তান – এই আটটি দেশ সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন গোষ্ঠীর পূর্ণ সদস্য। চলতি বছরের একেবারে প্রথম দিনে তিন বছরের মেয়াদে এই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর নতুন সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হয়েছেন ঝাং মিং। তিনি ইতিমধ্যেই তাঁর অগ্রাধিকার ও কাজের রূপরেখা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সংগঠনের সম্ভাবনা ও কর্তৃত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা সুনিশ্চিত করা, দারিদ্র্য হ্রাস এবং খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।