বেজিং: ফের দেখা দিতে পারে এক নয়া করোনাভাইরাস মহামারি। সতর্কতা এল কোভিড-১৯ মহামারির আঁতুড়ঘর চিনের উহান থেকে। সতর্ক করলেন চিনের উহানের ‘ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি’র প্রধান ভাইরোলজিস্ট শি ঝেংলি। বাদুড় থেকে উদ্ভূত ভাইরাসগুলি নিয়েই গবেষণা করেন তিনি। এই বিষয়ে বিশ্বে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাদুড় নিয়ে বিস্তৃত গবেষণার জেরে তাঁকে অনেকেই ‘ব্যাটওম্যান’ বা ‘বাদুরমানবী’ বলে ডাকেন। এই চিনা বাদুড়মানবীই সম্প্রতি নয়া করোনাভাইরাস মহামারির উত্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে শি দাবি করেছেন, আরেকটি করোনাভাইরাস ঘটিত মহামারির আবির্ভাব ঘটা প্রায় নিশ্চিত। তিনি বলেছেন, ‘সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল’। এর আগে ২০০৩ সালে একটি করোনাভাইরাস সিভিয়ার অ্যাক্যুট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা সার্স (SARS) মহামারি ঘটিয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রাদুর্ভাব ঘটিয়েছিল কোভিড-১৯ মহামারীর, যার প্রকোপ এখনও জারি রয়েছে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে শি এবং তাঁর দল ৪০টি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির করোনভাইরাসের মূল্যায়ন করেছেন। মানুষের মধ্যে ভাইরাসগুলি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কতটা, তার বিচার করেছেন তাঁরা। জনসংখ্যা, জিনগত বৈচিত্র্য, বাহক কারা হতে পারে, এবং জুনোটিক সংক্রমণের ইতিহাস, অর্থাৎ, প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হওয়ার ইতিহাস বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। ফল যা এসেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গবেষকরা দেখেছেন, ৪০টি প্রজাতির করোনাভাইরাসের মধ্যে অর্ধেকই ‘অত্যন্ত বিপজ্জন’, মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ‘অত্যন্ত ঝুঁকি’ রয়েছে। এর মধ্যে, ছয়টি করোনাভাইরাস ইতিমধ্যেই মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়েছে। আর অন্যান্য তিনটি করোনাভাইরাস, এর আগে অন্যান্য প্রাণীর দেহে সংক্রামিত হয়েছে। বিস্তৃত গবেষণার শেষে উহানের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ‘ভবিষ্যতে অন্যান্য করোনাভাইরাস থেকে রোগের উদ্ভব প্রায় নিশ্চিত। আরেকটি করোনভাইরাস-সম্পর্কিত মহামারির সম্ভাবনা প্রবল।’
ভাইরোলজিস্ট হিসেবে শি ঝেংলির মত দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তি পৃথিবীতে হাতে গোনা। তবে, তাঁর গবেষণা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমী দেশের একাংশের রাজনীতিবিদ ও গবেষকদের সন্দেহ, উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকেই ফাঁস হয়েছিল সার্স-কোভ-২ ভাইরাস। গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল কোভিড-১৯। আসলে মনে করা হয়, ভাইরাসটি বাদুড় বা প্যাঙ্গোলিনের মতো কোনও বাহকের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছিল। উহানের গবেষণাগারে বাদুড় থেকে উদ্ভূত ভাইরাসগুলি নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করা হয়। এটা কোনও গোপন তথ্যও নয়। তবে, এই গবেষণাগার থেকে ভাইরাস ফাঁস হওয়া তত্ত্ব এখনও পর্যন্ত কেউ প্রমাণ করতে পারেননি। চলতি বছরের জুনে মার্কিন গোয়েন্দারা জানিয়েছিলেন, ‘এই তত্ত্বকে সমর্থন করার মতো কোনও অকাট্য প্রমাণ না পাওয়া গেলেও, নিশ্চিতভাবে এই তত্ত্বকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’