সিঙ্গাপুর: ২০২১ সালের মে মাসে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন ৩০ বছরের শিন মিন এবং তাঁর প্রেমিক। সিঙ্গাপুরের হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের তৈরি এক পাবলিক হাউজিং-এর ফ্ল্যাট ছিল সেটি। ওই বছরের জুনে এক জমকালো পার্টি দিয়ে বাড়িওয়ালা তাঁদের স্বাগত জানিয়েছিলেন। অথচ সেই রাতেই শিন মিন ঘুমিয়ে পড়ার পর তাঁর শরীরে লেগেছিল ‘ভৌতিক স্পর্শ’। তাঁর বুকে, পায়ের ফাঁকে, সারা শরীরে অশ্লীল স্পর্শ করছিল সে। এমনকি, করেছিল চুম্বনও। ঘুম ভেঙে গিয়েছিল শিন মিনের। অন্ধকারে স্রেফ একটা ‘ছায়া’কে সরে যেতে দেখেছিলেন তিনি। এই ঘটনা আরও বেশ কয়েকবার ঘটে। শেষে, চলতি বছরের অগস্টে সেই ‘অশরীরী’কে আদালতে হাজির করে ছেড়েছেন শিন মিন এবং তাঁর প্রেমিক। ঠিক কী ঘটেছিল? আসুন জেনে নেওয়া যাক –
বাড়িওয়ালা যে পার্টিতে শিন মিনদের ওই ফ্ল্যাটে স্বাগত জানিয়েছিলেন, সেই পার্টিতে মদ পরিবেশন করা হয়েছিল। কিছু সময় পর বেশ কিছুটা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাই শাওয়ারের জলে স্নান করে শুতে চলে গিয়েছিলেন। শিন মিন এবং তাঁর প্রেমিক, দুজনেরই রাতে নগ্ন হয়ে ঘুমোনোর অভ্যাস ছিল। সেদিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু, গভীর রাতে আচমকা ঘুম ভেঙে গিয়েছিল শিনের। তিনি অনুভব করেছিলেন, কেউ তাঁর ঠোঁটে চুমু খাচ্ছে। তাঁর নগ্ন শরীরে হাত বোলাচ্ছে।
তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন তাঁর প্রেমিক। মুখ ঘুরিয়ে অন্ধকারের মধ্যে শুধুমাত্র একজনের ‘ছায়া’ দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁর প্রেমিকের মাথায় টাক রয়েছে। কিন্তু, যে ‘ছায়া’ তাঁকে আদর করছিল তার মাথায় ছিল ঘন চুল। এরপরই তিনি শৌচাগারের দিকে তাকিয়ে দেখেছিলেন, তাঁর প্রেমিক সেখানে স্নান করছেন। ভয়ে আর কিছু বলতে পারেননি শিন। প্রেমিক শৌচাগার থেকে বেরিয়ে আসার আগে, প্রায় ১০ মিনিট ধরে সেই ‘অশরীরী’ তাঁর শ্লীলতাহানি করেছিল।
পুরো বিষয়টি প্রেমিককে বলেছিলেন শিন। বাড়িতে তাঁর প্রেমিক ছাড়া পুরুষ বলতে ছিলেন তাঁদের বাড়িওয়ালা। তাই তাঁদের প্রাথমিক সন্দেহ তার উপরই গিয়ে পড়েছিল। তবে, শুধুমাত্র একটি ছায়া দেখতে পাওয়ার তাঁরা ভাবতে বাধ্য হয়েছিলেন, ওই ছায়ামূর্তি কোনও ভূত নয়তো? শিন বলেছেন, “আমার বয়ফ্রেন্ড শুনেছিল যে বাড়িওয়ালা এবং তার স্ত্রী প্রায়ই থাইল্যান্ডে যান দেবতাদের কাছে প্রার্থনা করতে। তাই আমরা ভেবেছিলাম বাড়িটাতে বোধহয় ভূত আছে। সেই জন্যই তাঁরা প্রার্থনা করতে যান।” ভূতের সম্ভাবনাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেছিলেন তাঁরা দুজনেই। তাই প্রথমেই পুলিশে খবর দেননি। বদলে, শোয়ার ঘরে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছিলেন, আর নগ্ন হয়ে ঘুমানো বন্ধ করে দেন।
ওই বছর ১৪ অগস্ট আরও একটি পার্টি দিয়েছিলেন তাঁদের বাড়িওয়ালা। আবারও সেই পার্টিতে মদের বন্যা বয়েছিল। আবারও প্রেমিকের আগে শুতে চলে গিয়েছিলেন শিন মিন। এরপরেই ঘটনা ধরা পড়েছিল সিসিটিভি ক্যামেরায়। রাত ১২টা বেজে ৫৬ মিনিটে রেকর্ড হওয়া ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যায়, জনৈক ব্যক্তির হাত শোয়ার ঘরের দরজাটা সামান্য ফাঁক করে ঘরের আলো নিভিয়ে দিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা নাইট ভিশনে চলে গিয়েছিল। নাইট ভিশনে ধরা পড়ে, সেই অশরীরী আর কেউ নয়, তাঁদের বাড়িওয়ালা। ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বাড়িওয়ালা ঘরে ঢুকে শিন মিনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অশ্লীলভাবে স্পর্শ করছেন। তবে, সেই রাতে শিন মিন ঘুমাননি, ঘুমের ভান করেছিলেন মাত্র। তাই বাড়িওয়ালা অসভ্যতা শুরু করতেই তিনি জেগে ওঠেন। থতমত খাওয়া বাড়িওয়ালা শুধু বলেছিলেন “আপনার প্রেমিক স্নান করছেন। আপনি ঠিক আছেন তো?” তারপর শিন মিনকে আর কিছু বলতে না দিয়ে চলে গিয়েছিলেন।
তবে, তিনি ছাড় পাননি। ৩৮ বছর বয়সী ওই বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে এরপরই শ্লীলতাহানির মামলা করেন শিন মিন। পরে ওই সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করেছে সিঙ্গাপুরের পুলিশ। গত ২৯ অগস্ট সিঙ্গাপুরের এক আদালতে, শিন তাঁর এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কতা বর্ণনা করেছেন। যদিও বাড়িওয়ালা শ্লীলতাহানির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।