কলম্বো : বিদেশি মুদ্রার ঘাটতির জেরে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ধসে পড়েছে। মূল্যস্ফীতির জেরে লঙ্কার জনসাধাণের পেটের ভাত জুটছে না। এই আবহে শ্রীলঙ্কার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখায় সেদেশের বহু মানুষ। শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবনের সামনে কলম্বোবাসীদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এরপর কলম্বোয় জারি করা হয়েছিল কার্ফু। এরপর জরুরি অবস্থা জারি হয় দ্বীপরাষ্ট্রে। লকডাউনের ঘোষণা করা হয়। এরই মাঝে এবার শ্রীলঙ্কায় সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর সেই নিয়ে এবার মুখ খুললেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপক্ষের বড় ছেলে তথা লঙ্কা মন্ত্রিসভার সদস্য নমল রাজাপক্ষে। তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা ‘কোনও কাজের নয়।’
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কার সরকারের তরফে ‘মিথ্যাচার’ এবং ‘ভুয়ো খবর’ রুখতে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইউটিউব সহ যাবতীয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে টুইটারকে বেছে নেন নমল রাজাপক্ষে। রাষ্ট্রপতি গোতাবায়ার ভাইপো টুইট করে লেখেন, ‘আমি কখনই সোশ্যাল মিডিয়া ব্লক করার বিষয়টিকে ক্ষমা করব না। ভিপিএন ব্যবহার করেই মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারে। ঠিক যেমন আমি এখন ব্যবহার করছি। এই ধরনের নিষেধাজ্ঞাগুলি কোনও কাজের নয়। আমি কর্তৃপক্ষকে আরও প্রগতিশীলভাবে চিন্তাভাবনা করার এবং এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই।’
প্রসঙ্গত, অত্যাবশ্যকীয় সরবরাহের ঘাটতি, তীব্র মূল্যস্ফীতি এবং বিদ্যুতের ব্ল্যাকআউটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে শ্রীলঙ্কাবাসী। মূলত রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধেই এই প্রতিবাদ প্রদর্শন করেন সাধারণ মানুষ। এই বিক্ষোভের পরই সোমবার পর্যন্ত দেশে ৩৬ ঘণ্টার কার্ফু জারি করা হয়। সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। এরই মাঝে #GoHomeRajapaksas, #GotaGoHome হ্যাশট্যাগে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকার বিরোধী পোস্ট করতে থাকে মানুষ। শয়ে শয়ে মানুষ কার্ফু ভেঙে রাস্তায় নামে।
এদিকে রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষে বলেন, জনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবা বজায় রাখার জন্য জরুরি অবস্থার প্রয়োজন ছিল। যদিও এই জরুরি অবস্থা জারির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এদিকে শ্রীলঙ্কার এই দুরবস্থার মাঝে ভারতের তরফে পাঁচ দফায় ২ লক্ষ মেট্রিক টন ডিজেল পাঠানো হয়েছে। এদিকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল পাঠানারও তোড়জোড় চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড, চিন ও সরকারি অব্যবস্থার জেরেই এই দুর্ভোগে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে এই বছরই শ্রীলঙ্কাকে ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ মেটাতে হবে। যদিও শ্রীলঙ্কার কাছে বৈদশিক মুদ্রা বাবদ মাত্র ২.৩১ বিলিয়ন রয়েছে। এই কারণেই সাধারণ মানুষ সুর চড়িয়েছে রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন : Pakistan Assembly : আচমকাই সমীকরণে বদল, অনাস্থা প্রস্তাব খারিজে এ যাত্রায় বেঁচে গেলেন ইমরান