বেজিং: জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আগে মানচিত্র নিয়ে জোর বিতর্ক উসকে দিয়েছে চিন। গত সোমবার, বেজিং-এর পক্ষ থেকে একটি সরকারি মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে। এই মানচিত্রে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ এবং আকসাই চিন-সহ আরও বিভিন্ন দেশের অংশকে তারা নিজেদের এলাকা বলে দাবি করেছে। আগেই ভারতের পক্ষ থেকে চিনের এই সম্প্রসারণবাদী পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করা হয়েছিল। এবার, ভারতের দেখানো পথে হাঁটল ফিলিপাইন্স, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম এবং তাইওয়ানের সরকারও। বৃহস্পতিবার, এই চার দেশের সরকারই চিনের এই নয়া মানচিত্রকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বেজিং যেভাবে এই দেশগুলির এলাকাকে তাদের নিজ এলাকা বলে দাবি করেছে, তার প্রতিবাদ করে কড়া বার্তা জারি করেছে তারা।
চিন এই মানচিত্রটি প্রকাশ করার পরদিনই, অর্থাৎ মঙ্গলবার, ভারত চিনের এই মানচিত্র পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে সরকারিভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে। নয়া দিল্লি সাফ জানিয়েছে, এই ধরনের পদক্ষেপে সীমান্ত নিয়ে জটিলতা আরও বাড়বে। চিনের এই দাবির কোনও ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, “অযৌক্তিক দাবি করলেই অন্যদের এলাকা আপনার হয়ে যায় না।”
বৃহস্পতিবার, ভারতের পথেই হেঁটে ফিলিপাইন্স সরকারও চিনের এই ‘স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপের’ কড়া নিন্দা করেছে। এই মানচিত্রে পশ্চিম ফিলিপাইন সাগরের বেশ কিছু অংশকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা ফিলিপাইন্সের এলাকা বলেই পরিচিত। সেই দেশের বিদেশ বিষয়ক মুখপাত্র মা তেরেসিতা দাজা বলেছেন, “ফিলিপাইন্সের সামুদ্রিক অঞ্চলগুলির উপর চিন তার দখলকে বৈধতা দিতে চাইছে। আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে সমুদ্রের আইন সম্পর্কিত ১৯৮২ সালের রাষ্ট্রপুঞ্জের কনভেনশন অনুযায়ী, এর কোনও ভিত্তি নেই।” চিনকে এই কনভেনশনের অধীনে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে ফিলিপাইন্স। এর আগে ২০১৩ সালে, আরও এক মানচিত্রে ফিলিপাইন্সের কালায়ান দ্বীপ এবং স্প্র্যাটলিসের কিছু অংশও তাদের বলে দেখিয়েছিল চিন। সেই সময়ও প্রতিবাদ জানিয়েছিল ফিলিপাইন্স।
এদিকে, মালয়েশিয়ার সরকারও জানিয়েছে, চিন যেভাবে তাদের মানচিত্রে দক্ষিণ চিন সাগরের এলাকাগুলি নিজেদের বলে অন্তর্ভুক্ত করেছে, সরকারিভাবে তার প্রতিবাদ জানাবে তারা। কারণ, তার মধ্যে মালয়েশীয় সামুদ্রিক অঞ্চলগুলিও রয়েছে। সেই দেশের বিদেশমন্ত্রী ডা. জাম্বরি আব্দুল কাদির বলেছেন, “এই জাতীয় সমস্যাগুলির মোকাবিলা করা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা একটি প্রতিবাদ চিঠি পাঠাবো বেজিংকে।” এর আগেই মালয়েশিয়া জানিয়েছিল, মানচিত্রটির কোনও প্রভাব পড়বে না মালয়েশিয়ার উপর।
ভিয়েতনাম সরকারও চিনের এই ‘উস্কানিমূলক পদক্ষেপে’র সমালোচনা করেছে। দক্ষিণ চিন সাগরের হোয়াং সা এবং ট্রুং সা ভিয়েতনামের এলাকা হলেও, চিন দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকাগুলি তাদের অংশ বলে দাবি করে। নয়া মানচিত্রে এই এলাকাগুলিও স্থান পেয়েছে। এই সামুদ্রিক এলাকাগুলির উপর চিনের সমস্ত দাবিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ভিয়েতনামের বিদেশ মন্ত্রক। বিদেশমন্ত্রী ফাম থু হ্যাং বলেছেন, নয়া মানচিত্র প্রকাশ করে ভিয়েতনামের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে চিন। তিনিও ১৯৮২ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের কনভেনশনে তৈরি সমুদ্র আইনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, চিনের এই দাবিগুলির কোনও কার্যকারিতা নেই।
তাইওয়ানের পুরো দ্বীপটিই তাদের অংশ বলে দাবি করে চিন। মানচিত্রেও সম্পূর্ণ দ্বীপটি তাদের বলেই, দেখিয়েছে বেজিং। বুধবার, তাইওয়ানের বিদেশ মন্ত্রক সাফ জানিয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী চিন কখনই তাইওয়ান শাসন করেনি। তাইওয়ানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জেফ লিউ বলেছেন, “তাইওয়ান, একটি সার্বভৌম এবং স্বাধীন দেশ। গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের অধীনস্থ নয়। গণপ্রজাতন্ত্রী চিন কখনই তাইওয়ানকে শাসন করেনি। এটা সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত সত্য এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও একে মান্যতা দিয়েছে।” এই আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বেজিং কী করে, এখন সেটাই দেখার।