কাবুল: “যুদ্ধ শেষ!”, বার্তা তালিবানিদের। রবিবারই আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করেছিল তালিবানরা, বাধ্য হয়ে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দেন আসরাফ ঘানি। “শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের” জন্য গতকালই রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরে জড়ো হয়েছিল তালিবান বাহিনী। এ দিন সকালে পুরোপুরিভাবে রাষ্ট্রপতি ভবনের দখল নেওয়ার পরই তালিবানদের তরফে জানানো হল, আফগানিস্তানের যুদ্ধ শেষ।
রবিবারই ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট আসরাফ ঘানি। বিপদের মুহূর্তে দেশবাসীকে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন আফগানবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনই তালিবানরা একে বড় জয় হিসাবেই দেখছে। যদিও সদ্য প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের দাবি, দেশে রক্তগঙ্গা যাতে না বয়, সেই কারণেই তিনি দেশ ছেড়ে চলে এসেছেন।
এ দিন তালিবানের রাজনৈতিক মুখপাত্র মহম্মদ নাইম বলেন, “আজকের দিনটি আফগানবাসী ও মুজাহিদ্দিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত ২০ বছর ধরে তারা যে আত্মত্যাগ ও প্ররিশ্রম করেছেন, তার ফল মিলল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে দেশের যুদ্ধ শেষ হল।” আফগানিস্তানে কবে নতুন সরকার গঠন হবে, এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নাইম জানান, শীঘ্রই গোটা বিষয়টি সকলকে জানানো হবে। তালিবানরা বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে চায় না, শান্তিপূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী আমরা।
নাইমের দাবি, “আমরা যা চেয়েছিলাম, তা পেয়ে গিয়েছি। আমাদের দেশের ও সাধারণ মানুষের স্বাধীনতাই চেয়েছিলাম আমরা, আর কাউকে নিশানা বানাতে দেব না আমাদের দেশকে। আমরা কারোর ক্ষতি করতে চাই না।”
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার তরফে প্রকাশিত ভিডিয়োয় দেখা যায়, তালিবান কম্য়ান্ডার ও সশস্ত্র বাহিনী রাষ্ট্রপতি ভবনে উল্লাস করছে। এ দিকে, আমেরিকার তরফেও জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দূতাবাসের সমস্ত কর্মীকে কাবুল বিমানবন্দরে আনা হয়েছে। দূতাবাস থেকে ২০ বছর পর এই প্রথম মার্কিন পতাকাও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ দিকে, কাবুল বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় কাবুল এয়ারস্পেস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাতিল হয়ে গিয়েছে সমস্ত অসামরিক বিমান। যে বিমানগুলি আফগানিস্তানের উপর দিয়ে আসার কথা ছিল, তার রুটও পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই মার্কিন সেনার সঙ্গে গুলির লড়াই চলছে তালিবান বাহিনীর।
বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, চিলি, কলোম্বিয়া, জাপান, ইটালি, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, কোস্টা রিকা, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, ব্রিটেন, ইউক্রেন, ইয়েমেন, উগান্ডা সহ মোট ৬৫টি দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আমরা সকলেই আফগানিস্তানের নাগরিক ও আফগানিস্তানে বসবাসকারী অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সুরক্ষার দাবি জানাচ্ছি। যারা দেশ ছাড়ছেন, তাদের যেন কোনওরূপ শাস্তির মুখে না পড়তে না হয় এবং বিনা বাধায় তাদের যেতে দেওয়া হয়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে যারা ক্ষমতায় রয়েছেন, তাদের কাছে নাগরিক সুরক্ষার আবেদন জানানো হচ্ছে। আরও পড়ুন: বন্ধ কাবুল এয়ারস্পেস, বাতিল হল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানও, কীভাবে দেশে ফিরবেন আটকে পড়া ভারতীয়রা?