Most Dangerous Jail: খামেনেই পর্যন্ত কয়েদ ছিলেন, কতটা ভয়ঙ্কর ইরানের সবচেয়ে ‘খতরনাক’ জেল?
Ali Khamenei: ইরানের কুখ্যাত জেল! এই জেলে বন্দী থেকেছেন ইরানের সুপ্রিম লিডারও। কতটা ভয়ঙ্কর ছিল তাঁর জেলে কাটানো দিনগুলি? অবশ্য দিন না বলে রাত বলাই ভাল। কারণ, এই জেলের কুঠুরিতে আলো প্রবেশ করেনি কোনওদিন।

তেহরান: এবরাত! শুধু নাম শুনলেই এক সময় আচ্ছা-আচ্ছা লোকেদের ভয়ে বুক কেঁপে যেত। এক সময় তেহরানের সবচেয়ে কুখ্যাত জেল। এখন অবশ্য মিউজিয়াম। সেই জেলের অন্দরে জমে রয়েছে কত বন্দীর দমচাপা কান্না! কতরকম অত্যাচারই না চলেছে এই জেলে বন্দীদের উপরে। শুধু ইরানের কয়েদীরাই তো নয়, বিদেশি নাগরিকদেরও এই জেলে বন্দী করে রেখে অকথ্য নির্যাতন চলেছে বলে বারবার দাবি করেছে নানা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। আজ সেই জেলের অন্দরমহলে নজর রাখব। বলব, কীভাবে অত্যাচার হত এই জেলে।
কয়েক বছর আগে মিউজিয়াম হওয়ার পর এই জেলের কিছু পুরনো ছবি প্রকাশ্যে আনে ইরানের কয়েকটি সংবাদ সংস্থা। ছবির প্রদর্শনী করে প্রথমবার দিনের আলোয় আনা হয় কুখ্যাত এই জেলের অন্দরমহলের ছবি। সেই ছবি দেখলে সত্যি শিউরে উঠতে হয়। ইরানের আজকের সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেই, তিনি নিজেও তো জেলে বহুবার বন্দী থেকেছেন। হ্যাঁ ঠিক-ই পড়লেন। যে দোর্দণ্ডপ্রতাপ ধর্মীয় নেতা খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করেন, তাঁকেও এই জেলে বন্দী থাকতে হয়েছে। সেটা অবশ্য ১৯৭৯-এর আগে। তখন ইরানের মসনদে শাহ রেজা পহলভি। একবার তো একটানা আটমাস তাঁকে এই বন্দী করে রাখা হয়েছিল। ওই আটমাসকে জীবনের অন্ধকারতম বলেন খোদ খামেনেই-ও। এই জেলে খামেনেই-এর মতো আরও বহু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকে বন্দী করে রেখে তাঁদের উপর অত্যাচার চলেছে।
ইরানে ইসলামিক আন্দোলনের যোগ ও নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে ১৯৬০ থেকে ১৯৭০-এর মধ্যে একাধিকবার খামেনেইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবরাতে রেখে তাঁর উপরে অত্যাচার চালাত শাহের জমানার ইরানি সিক্রেট পুলিশ ফোর্স- ‘সাভাক’। পহলভি আমলে সাভাকের বিরুদ্ধে বন্দীদের উপর গুরুতর নির্যাতনের সব অভিযোগ উঠেছিল। ১৯৫৭-তে প্রতিষ্ঠিত এই সিক্রেট ফোর্সের কাজই ছিল, শাহের বিরুদ্ধে কেউ আঙুল তুললে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করে জেলে পুরে দেওয়া ও টর্চার চালানো। জেনারেল নেমাতোল্লাহ নাসিসির আমলে বিরোধী শিবিরের ত্রাস হয়ে গেছিল ‘সাভাক’। এই সাভাক-ই খামেনেই-কে নয়নয় করে হলেও ছ’বার জেলে পুরেছে। জেল বলতে তখন এবরাত! নাম অবশ্য — ‘জয়েন্ট কমিটি এগেনস্ট সাবোতাজ’ জেল।

কেমন ছিল সেই জেল? জেলে অজস্র ছোট ছোট কুঠুরি। এমনই ছোট, যে খামেনেই-এর মতো সাধারণ উচ্চতার মানুষকেও ঝুঁকে দাঁড়াতে হবে। মানে ২৪ ঘণ্টাই ঝুঁকে থাকতে হবে বা বসে থাকতে হবে। নিদেনপক্ষে দাঁড়িয়ে থাকারও জায়গা থাকত না। প্রদর্শনীর ছবিতে দেখা যাচ্ছে খামেনেই-কে। কুঠুরিগুলি অন্ধকার, ভেজা-স্যাঁতস্যাঁতে। কারণ, সূর্যের আলোর মুখ কোনওদিন দেখেনি কুঠুরিগুলি। জানলে অবাক হবে, ইরানে সে সময় মহিলাদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ ছিল। শুধুমাত্র হিজাব পরার অপরাধে শাহ রেজা পহেলভি বহু মহিলাকেও এই জেলে বন্দী করেন। ইতিহাসের কালো অধ্যায় বলে পরিচিত এই জেলে এমন কোনও মানবতা-বিরোধী কুকীর্তি নেই যা করা হত না। জেলের গঠন এমনই মজবুত যে ভূমিকম্পেও অটুট থাকবে। ফলে এই জেল থেকে যে পালানোর কোনও পথ নেই, সে কথা তো সহজেই অনুমেয়। জেলের ভিতরে অন্ধকার কুঠুরির চেয়েও বেশি ভয়ানক ছিল আলাদা ‘টর্চার রুম’। এখানে পশুদের খাঁচায় বন্দীদের রাখা হত। বাইরে থেকে লোহার রড গরম করে ছ্যাঁকা দেওয়া হত অপরাধীদের। মানে শাহের চোখে যারা অপরাধী। যেমন সে সময় খামেনেই। কয়েকবছর আগেই খোদ খামেনেইয়েরই একমাত্র জেলবন্দী একটি ছবি প্রকাশ্যে আনে ইরান সরকার। দেশের জনগণকে এটা দেখাতে, ফারাক বোঝাতে, যে খামানেই আমলে দেশবাসী কতটা ‘সুখে’ আছেন। এই জেলে অন্তত কয়েক হাজার শাহ-বিরোধী মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে। মহিলাদেরও রেয়াত করা হয়নি।

শাহ দেশছাড়া হওয়ার কয়েকবছর পর এই জেলও বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেটাকে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়। মোমের মূর্তির মাধ্যমে আজ দর্শকদের দেখানো হয় কীভাবে বন্দীদের উপর থ্যাচার চলত। কখনও বুকের উপরে লোহার খাটের কাঠামো চাপিয়ে, কখনও উল্টো করে ঝুলিয়ে ততক্ষণ মারা হত যতক্ষণ না বন্দী মারা যাচ্ছে। বন্দীকে খাঁচার ভিতরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে বিদ্যুতের মাধ্যমে খাঁচাটিকে এমন গরম করে দেওয়া হত যাতে ভিতরে থাকা বন্দী পুড়ে ছটফট করতে থাকে। তাঁর চিৎকার যাতে বাকিরাও শুনতে পায়, সেই ব্যবস্থাও রাখা হত। এটাকে বলা হত ‘হট সেল টর্চার’। এরকম জেলের ভিতরে মাসের পর মাস বন্দী থেকেছেন খামেনেই। পরে অবশ্য খামেনেই বলেছেন, জেলের ভিতরে নির্যাতন তাঁকে মজবুত করেছে দেশে ইসলামিক আন্দোলনকে আরও মজবুত করতে। আজ, দেশ বিদেশের পর্যটকরা এই জেলে এসে ঘুরে দেখতে পারেন। এই জেল আক্ষরিক অর্থেই ইরানের সিক্রেট পুলিশ সার্ভিসের অন্ধকারতম অধ্যায়ের সাক্ষী। ১৯৭৯-এর পর শাহের পতনের সঙ্গেই সাভাক-এরও বিলুপ্তি ঘটে।

