লন্ডন: জীবনের ৯৫টি বসন্ত কেটে গিয়েছে তাঁর। এতগুলো বছরের মধ্যে মনের মতো জীবনসঙ্গী পাননি। অবশেষে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে, প্রথমবারের জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন যুক্তরাজ্যের কার্ডিফের বাসিন্দা জুলিয়ান মোয়েল। অথচ, ২৩ বছর আগেই এই বিয়ে হতে পারত। সেই সময়ই, ক্যালভেরি ব্যাপটিস্ট গির্জায় তাঁর সঙ্গে প্রথমবার দেখা হয়েছিল ভ্যালেরি উইলিয়াম্স-এর। তবে, তখন ভ্যালেরি-কে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়নি জুলিয়ানের। অবশেষে, সেই প্রস্তাব আসে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। ১৯ মে, ওই একই গির্জায় ৮৪ বছরের ভ্য়ালেরি-র সঙ্গে বিবাহ হল এই নবতিপর বৃদ্ধের। উপস্থিত ছিলেন জনা চল্লিশেক বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-পরিজন। ৯৫ বছর বয়সী বৃদ্ধের এই বিয়ে সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছে।
এই অভিনব বিবাহের অনুষ্ঠানে ভ্যালেরি সম্পর্কে জুলিয়ান বলেন, ‘ও খুবই দয়ালু এবং সকলকে ভালবাসতে পারে’। তারপর, সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর দিকে ফিরে তিনি বলেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে থাকার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি’। জুলিয়ান আরও বলেন, তাঁর জীবনে যেন অসময়ে নতুন বছর এসে হাজির হয়েছে। নিজেকে তিনি গ্রিক দেবতা ‘জানুসের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। প্রসঙ্গত, ‘জানুসের’ দুটি মুখ রয়েছে – একটি সামনে এবং একটি পিছনে। এর ফলে তিনি একইসঙ্গে ভবিষ্যত এবং অতীত দেখতে পান বলে কথিত রয়েছে। ৯৫ বছর বয়সে বিয়ে করে, একদিকে যেমন জুলিয়ানের অতীতের কথা মনে পড়ছে। অন্যদিকে, স্ত্রীর সঙ্গে ভবিষ্যৎ জীবন কাটানোর স্বপ্নে বিভোর তিনি।
একইরকম আবেগে ভেসেছেন ভ্যালেরিও। স্বামী সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘ওর মতো ভদ্রলোক হয় না’। তিনি আরও বলেছেন, ‘আমার এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না’। জুলিয়ানের সঙ্গে একসঙ্গে জীবন কাটানোর জন্য তিনিও মুখিয়ে রয়েছে। ৯৫ বছরের বর এবং ৮৪ বছরের স্ত্রী বলে মধুচন্দ্রিমা হবে না, তা তো হয় না। বর্তমানে কার্ডিফে থাকলেও, জুলিয়ান মোয়েল আদতে অস্ট্রেলিয়ার মানুষ। মধুচন্দ্রিমায় এই দম্পতি অস্ট্রেলিয়াতেই যাবেন বলে ঠিক করেছেন। ১৯৫৪ সালে জুলিয়ান অস্ট্রেলিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অপেরা মঞ্চ কাঁপিয়েছিলেন তিনি। তিনিই ছিলেন ওয়েলশ ন্যাশনাল অপেরার প্রথম একক গায়ক। বিয়েতে তাই অপেরা সঙ্গীতের ছোঁয়াও ছিল। এক অপেরা গায়ক, সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন তাঁদের বিবাহের অনুষ্ঠানে।
এই প্রথম কোনও নবতিপর ব্যক্তি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন, এমনটা নয়। ২০২১ সালেই আমেরিকার নিউ ইয়র্কে ৯৫ বছর বয়সী জন শল্টস জুনিয়র এবং জয় মরো-নল্টনের বিবাহ হয়েছিল। ২০১৬ সালে মায়ামিতে ৯৫ বছর বয়সী কার্লোস সুয়ারেজকে বিবাহ করেছিলেন ৮০ বছরের মারিয়া টেরেসা কোবার। ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে উত্তরপ্রদেশের রামপুরে ৯০ বছরের সফি আহমেদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ৭৫ বছরের আয়েশা বিবির। তবে, এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই পাত্র-পাত্রী দুই পক্ষেরই দ্বিতীয় বিবাহ ছিল। কিন্তু, ৯৫ বছর বয়সে এসে জীবনের প্রথম বিবাহ, সম্ভবত এই বিষয়ে নজির গড়লেন জুলিয়ান মোয়েল।