নিউ ইয়র্ক: ব্রিটেনের মসনদ থেকে সরে গিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক। এবার কি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে দেখা যাবে আরও এক ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে? যত দিন যাচ্ছে, ততই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে দর পড়ছে জো বাইডেনের। চাপ বাড়ছে তাঁকে সরিয়ে অন্য কোনও নেতাকে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী করার। আর এই দৌড়ে সবার আগে রয়েছে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নাম। দলের হেভিওয়েট নেতারা তাঁর পক্ষে রয়েছেন। ডেমোক্র্যাটদের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের স্বাভাবিক উত্তরসূরি হলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারাতে বাইডেনের থেকে ভাল বাজি কমলাই বলে মনে করছেন, দলের দাতা, কর্মী এবং কর্মকর্তারা। বিশেষ করে গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে তাঁর নিরন্তর লড়াই তরুণ ভোটারদের মধ্যে তাঁকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে। সত্যিই কি তাই?
ভোটের আগে আমেরিকায় এখন নমত সমীক্ষার পর্ব চলছে। সাম্প্রতিক সমীক্ষাগুলিও বলছে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেনের থেকে ভাল প্রার্থী হবেন কমলা হ্যারিস। তবে, তাঁকে কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে। ২ জুলাই তাদের জনমত সমীক্ষার ফল প্রকাশ করেছিল সিএনএন। তাতে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছেন বাইডেন। যেখানে ট্রাম্পকে ফের প্রেসিডেন্ট চাইছেন ৪৯ শতাংশ মানুষ। বাইডেনের পক্ষে রয়েছেন ৪৩ শতাংশ। ট্রাম্পের বিরুধে পিছিয়ে কমলা হ্যারিসও। তবে ব্যবধান অনেকটাই কম। এই ক্ষেত্রে ট্রাম্পকে চেয়েছেন ৪৭ শতাংশ মানুষ, আর কমলাকে ৪৫ শতাংশ।
যাদের রিপাব্লিকান বা ডেমোক্র্যাট কারও সঙ্গেই টিকি বাঁধা নেই, তাঁরা আবার ট্রাম্পের থেকে কমলা হ্যারিসকেই এগিয়ে রেখেছেন। তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ মানুষ কমলাকে চেয়েছেন, ৪০ শতাংশ ট্রাম্পকে। আর রিপাব্লিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যপন্থী ভোটার যারা, অর্থাৎ, যারা এই দুই দলের কড়া সমর্থক নয়, তাদের মধ্যেও ট্রাম্পের তুলনায় কমলাই বেশি জনপ্রিয়। এই ভোটারদের ৫১ শতাংশ তাঁকে চেয়েছেন। আর ৩৯ শতাংশ ট্রাম্পকে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প এবং বাইডেনের মধ্যে টেলিভিশন বিতর্ক হওয়ার পর, বূাইডেনের তুলনায় কমলা হ্যারিসের দর আরও বেড়েছে। রয়টার্স/ইপসোসের জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে অত্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই রয়েছে। ৪২ শতাংশ কমলাকে চেয়েছেন, ৪৩ শতাংশ ট্রাম্পকে। বাইডেনের প্রচার দলের অবশ্য দাবি, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেনের মতো একই প্রতিকূল অবস্থায় আছেন কমলা। তাদের সমীক্ষা বলছে, ৪৫ শতাংশ ভোটার বলেছেন যে তাঁরা কমলাকে ভোট দেবেন। আর ৪৮ শতাংশ বলেছেন ট্রাম্পকে ভোট দেবেন।
প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট নেতারা সকলেই বলছেন, যদি বাইডেন প্রেসিডেন্টের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ান, তাহলে তাঁর সেরা বিকল্প হবেন কমলা হ্যারিসই। শুধুমাত্র প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি, মিশেল ওবামা বাইডেনের সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে কমলার আগে আছেন। তবে, তিনি এই পদের দৌড়ে নামতে আগ্রহী নন। তবে শুধু ডেমোক্র্যাটরাই নন, রিপাবলিকানরাও কমলা হ্যারিসকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন। রয়টার্সকে দুই রিপাব্লিকান নেতা বলেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কমলার বদলে বাইডেন লড়লেই তারা খুশি হবেন। কারণ, বাইডেন নিজেকে ‘অযোগ্য’ বলে প্রমাণ করেছেন।
২০২২-এ মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট মহিলাদের গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। তারপর থেকে গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের প্রধান কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন কমলা হ্যারিস। এবারের নির্বাচনে এই বিষয়টিকে কিন্তু অন্যতম নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে তুলে ধরছে ডেমোক্র্যাটরা। তাদের মতে, কালো ভোটার, তরুণ ভোটার এবং গাজাপন্থী যে সকল ভোট ব্যাঙ্কের বাইডেনের প্রতি উত্সাহ ম্লান হয়ে গিয়েছে, তাদের ভোট টানতে পারেন কমলা বলে মনে করছে তাঁর দল।