ওয়াশিংটন: ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রেক্ষিতে, বিভিন্নভাবে মস্কোকে একঘরে করার চেষ্টা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমী দেশগুলি। তবে, এখনও পর্যন্ত সরাসরি রাশিয়ার বিরোধিতা করেনি ভারত সরকার। এমনকি রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও রাশিয়ার বিপক্ষে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে নয়া দিল্লি। এর অন্যতম কারণ, সমরাস্ত্র ও সামরিক সাজ-সরঞ্জামের বিষয়ে মস্কোর উপর নয়াদিল্লির নির্ভরতা। এমনটাই মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে ভারতের মস্কো-নির্ভরতা কমাতে নয়া উদ্যোগ নিচ্ছে ওয়াশিংটন ডিসি। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যোগ আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি সামরিক সহায়তা প্যাকেজ তৈরি করছে জো বাইডেন প্রশাসন।
স্বাধীনতার পর থেকেই, সামরিক ক্ষেত্রে রুশ অস্ত্রশস্ত্রের উপর নির্ভরশীল ভারত। গত কয়েক বছরে আমেরিকা-ফ্রান্সের কাছ থেকে ভারত বেশ কিছু যুদ্ধবিমান বা সামরিক কপ্টার কিনেছে। তবে, এখনও বিশ্বের মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র আমদানীতে সবার আগে আছে ভারতই। সারা বিশ্বের অস্ত্রশস্ত্র কেনাবেচার হিসাব রাখে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট। তাদের তথ্য অনুযায়ী গত ১০ বছরে আমেরিকার কাছ থেকে ভারত ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্রশস্ত্র কিনেছে। অন্যদিকে একই সময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের অস্ত্র আমদানীর পরিমাণ, ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমেরিকা মনে করছে, মোদী সরকার যেখানে ইতিমধ্যেই রাশিয়ার উপর তাদের সামরিক নির্ভরতা কমাতে চাইছে, ভারতের সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এটাই সেরা সময়।
এই অবস্থায় ভারতের রুশ নির্ভরতা আরও কমাতে ফ্রান্সের মতো বিভিন্ন দেশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতের পাশে দাঁড়াতে চাইছে ওয়াশিংটন ডিসি। এক মার্কিন প্রশাসনিক কর্তা দাবি করেছেন, বাইডেন আমেরিকাকে সামরিক ক্ষেত্রে ভারতের দীর্ঘস্থায়ী ও বিশ্বস্ত অংশিদার হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন। এই আর্থিক প্যাকেজের বিশদ বিবরণ এখনও জানা না গেলেও, এর আগে একমাত্র ইসরাইল এবং মিশর ছাড়া আর কোনও দেশকে এত বড় মাপের মার্কিন বিদেশি সামরিক সহায়তা প্যাকেজ আর কোনও দেশকে দেওয়া হয়নি।
বিশেষ করে এশিয়ায় চিনা হুমকির মুখে, যুদ্ধবিমান, রণতরী, সামরিক ট্যাঙ্কের মতো সমরাস্ত্র তুলে দিতে চাইছে আমেরিকা। তবে, এই সকল দুর্মূল্য যুদ্ধাস্ত্র ভারতের হাতে কীভাবে তুলে দেওয়া যাবে, সেই বিষয়ে এখনও কোনো স্পষ্টতা নেই মার্কিন প্রশাসনের কাছে। বর্তমানে যে আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার কথা চলছে, তা দিয়ে এই সকল সামরিক সাজ-সরঞ্জাম কেনা সম্ভব নয়। কয়েক বিলিয়ন দাম হয় এই একেকটি যুদ্ধবিমান, রণতরী বা ট্যাঙ্কগুলির। তবে, এই আর্থিক প্যাকেজ দান ভারতের প্রতি মার্কিন সমর্থনের অনন্য নিদর্শন হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। পরের সপ্তাহেই দক্ষিণ কোরিয়ায় কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী মোদীর। সেখানেই সম্ভবত এই আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করা হবে।