Valentine’s Day: এই কবরস্থানে পড়ে রয়েছে বহু প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়…

Feb 14, 2024 | 7:29 PM

Valentine's Day Havana's Colon cemetery: স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক, প্রখ্যাত লেখক, সঙ্গীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী এবং চিকিৎসকদের সমাধী রয়েছে এই কবরস্থানে। তবে, এই কবরস্থান বেশি পরিচিত প্রেমের কারণে। এই কবরস্থানে অমর হয়ে গিয়েছে অনেক প্রেমের কাহিনি। এই কাহিনিগুলির বেশ কিছু ছিল, চমকে দেওয়া, বেশ কিছু ছিল গোপন প্রেম। আবার বেশ কিছু প্রেম ছিল, যেগুলি সফল হয়নি।

Valentines Day: এই কবরস্থানে পড়ে রয়েছে বহু প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়...
হাবানার কোলন কবরস্থানের প্রবেশদ্বার
Image Credit source: Twitter

Follow Us

হাভানা: নুর জাহানের স্মৃতি সৌধ হিসেবে তাজমহল তৈরি করিয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান। ধারে ভারে তাজমহলের সঙ্গে কোনও তুলনায় না আসলেও, প্রেমিকার সমাধিকে স্মরণীয় করে রাখতে খরচ কম করেননি কিউবার অন্যতম বড় চিনি ব্যবসায়ী, হুয়ান পেদ্রো বারো। হাভানার কোলন কবরস্থানে রয়েছে বারোর প্রেমিকা, ক্যাটালিন লাসার মার্বেলের তৈরি বিশাল সমাধি। বিস্তৃত ভাস্কর্য এবং স্থাপত্যের কারণে, হাভানা শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই কবরস্থানকে বলা হয় এক উন্মুক্ত জাদুঘর। এখানে কিউবা স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক, প্রখ্যাত লেখক, সঙ্গীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী এবং চিকিৎসকদের সমাধী রয়েছে। তবে, এই কবরস্থান বেশি পরিচিত প্রেমের কারণে। এই কবরস্থানে অমর হয়ে গিয়েছে অনেক প্রেমের কাহিনি। এই কাহিনিগুলির বেশ কিছু ছিল, চমকে দেওয়া, বেশ কিছু ছিল গোপন প্রেম। আবার বেশ কিছু প্রেম ছিল, যেগুলি সফল হয়নি। প্রেম দিবসে, আসুন জেনে নেওয়া যাক কিউবার এই কবরস্থান সম্পর্কে, যেখানে তাঁজের হৃদয় রেখে গিয়েছেন বহু প্রেমিক –

‘কোলন কবরস্থান’ সম্পর্কে বেশ কিছু বই লিখেছেন, ৬৬ বছর বয়সী গায়ক-গীতিকার মারিও দারিয়াস। তিনি জানয়েছেন, ১৮৭৬ সালে এই কবরস্থানটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। প্রায় ১২০ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে এই কবরস্থান। মারিও জানিয়েছেন, প্রথম থেকেই একের পর এক প্রেমের কাহিনি জড়িয়ে গিয়েছে এই কবরস্থানটির সঙ্গে। এর মধ্যে সবথেকে বেশি পরিচিত হুয়ান পেদ্রো বারো এবং ক্যাটালিন লাসার বিবাহ বহির্ভুত প্রেম। দুজনেই ছিলেন সমাজের উচ্চ অংশের প্রতিনিধি। তাঁদের এই ব্যভিচার সেই সময় সমাজে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। দুজনকে ছিছিক্কার করেছিল অভিজাত সমাজ।

হুয়ান পেদ্রো বারো এবং ক্যাটালিন লাসা

ক্যাটরিন লাসার সৌন্দর্যের কথা গোটা কিউবার মানুষ জানত। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, কিউবার তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্টের ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। বিবাহিত অবস্থাতেই তাঁর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল বারোর। ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। উচ্চ সমাজে তাঁধের এই প্রেম অত্যন্ত ধিকৃত বিষয় ছিল। দুজনকেই প্রায় একঘরে করে দেওয়া হয়েছিল। এই অবস্থায়, বারো-লাসা পালিয়েছিলেন প্যারিসে। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন তাঁরা। এরপর, পোপ পঞ্চদশ বেনেডিক্ট, বিয়ে বাতিলের জন্য লাসার অনুরোধ মঞ্জুর করেন। দুজনে ফিরে এসেছিলেন হাভানায়। কিন্তু, তাঁদের সুসময় বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৩০ সালে অসুস্থতার কারণে মৃত্যুহয় লাসার। সেই সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।

লাসার মৃত্যুর পর, সাদা মার্বেল এবং কালো গ্রানাইট দিয়ে তাঁর এক অপূর্ব সুন্দর সমাধিসৌধ তৈরি করিয়েছিলেন বারো। ফরাসি কাচের ভাস্কর রেনে লালিককে দিয়ে কাচের গোলাপ তৈরি করিয়েছিলন। সেই গোলাপ আজও রয়েছে লাসার সমাধির উপর। ১৯৪৫ সাল মৃত্যু হয় বারোর। তার আগে পর্যন্ত লাসার সমাধীকে অমর করে রাখতে এতটুকু কার্পণ্য করেননি বারো। আজও বহু মানুষ, লাসার সমাধির সামনে এসে তাঁদের প্রেম কাহিনিকে স্মরণ করেন।

কোলন কবরস্থানে ক্যাটলিন লাসার বিশাল সমাধিসৌধ

রয়েছে, আরও এক ‘কলঙ্কিত’ প্রেমিক-প্রেমিকার সমাধি। মোডেস্টো ক্যান্টোর ছাত্রী ছিলেন মার্গারিটা পাচেকো। তাঁদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান ছিল প্রায় ৩০ বছরের। এই অসমবয়সী শিক্ষক-ছাত্রীর প্রেমে ভ্রু কুঁচকেছিল তৎকালীন সমাজ। বহু মানুষ তাঁদের সম্পর্কের বিরোধিতা করেছিলেন। মার্গারিটাকে সাবধান করে সবাই বলেছিল, এই বিয়ে করলে খুব শিগগিরই তাঁকে বিধবা হতে হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে, শিক্ষকের আগে মৃত্যু হয় ৩০ বছরের ছোট ছাত্রীরই। ১৯৫৯ সালে, মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মারা যান মার্গারিটা। তাঁর মৃত্যুর পর, আরও ১৮ বথর বেঁচেছিলেন মোডেস্টো ক্যান্টো। এই দুই প্রেমিক-প্রেমিকার জোড়া সমাধিতে রয়েছে তাঁদের আবক্ষ মূর্তি। নীচে লেখা আছে, ‘অনন্ত প্রেমে একত্রিত।’

একটু পাশেই রয়েছে অ্যামেলিয়া গয়রির সমাধি। ১৯০১ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছিল অ্যামেলিয়ার। সই সময় তিনি আট মাসের গর্ভবতী ছিলেন। মৃত্যুর পর, প্রথা মেনে তাঁর পায়ের উপরে তাঁর শিশুর দেহ রেখে তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল। গর্ভবতী স্ত্রীর মৃত্যুর পর, তাঁর শোকাহত স্বামী প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। প্রতিদিন স্ত্রীর সমাধির সামনে গিয়ে এমনভাবে কান্নাকাটি করতেন, যা কোলন কবরস্থানে আসা অন্যান্য ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছিল। অ্য়ামেলিয়াকে যাঁরা চিনতেন না, তাঁরাও তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেছিলেন। পরে, সমাধিতে অ্যামেলিয়ার একটি দুই মিটার দীর্ঘ সাদা মার্বেল মূর্তিও স্থাপন করা হয়েছিল। তবে, ১৯১৪ সালে এই সমাধিকে কেন্দ্র করে এক অতিলৌকিক কাহিনীর জন্ম হয়। সেই বছর, সমাধিটি খোলা হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, অ্যামেলিয়ার শরীর অক্ষত রয়েছে, পচেনি। আর তাঁর কোলে পাওয়া গিয়েছিল তাঁর সন্তানকে।

এর থেকেই তৈরি হয়েছিল সমাধিটির ডাকনাম, ‘লা মিলাগ্রোসা’। বাংলায় য়ার অর্থ, ‘অলৌকিক’। সেই থেকে বহু মানুষ এই সমাধিতে আসেন তাঁদের মনস্কামনা নিয়ে। কেউ চান, গর্ভধারণ করতে। কেউ আসেন, সন্তান-সন্ততির অসুস্থতা সাড়াতে, বা তাদের স্কুলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করার বাসনা নিয়ে। মজার বিষয় হল, অ্যামেলিয়ার মূর্তিটির দিকে তাদের বাসনা জানিয়ে, কেউ মুখ ফিরিয়ে যান না। মূর্তিটির দিকে তাকিয়েই, পিছনের দিকে হেঁটে সমাধিস্থল ত্যাগ করেন। আসলে, অ্যামেলিয়া গয়রির স্বামী, চার দশক ধরে নিয়মিত স্ত্রী সমাধি ঘুরে ফেরার সময়, এইভাবেই ফিরতেন। স্ত্রীর দিক থেকে মুখ না ফিরিয়ে।

হুয়ান পেদ্রো বারো-ক্যাটালিন লাসা, মোডেস্টো ক্যান্টো-মার্গারিটা পাচেকো বা অ্যামেলিয়া গয়রির মতো আরও বহু প্রেমিক-প্রেমিকা তাঁদের হৃদয় রেখে গিয়েছেন এই কবরস্থানে। অমর হয়ে রয়েছে তাঁদের কাহিনি। যা, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রেমিক-প্রেমিকাদের উদ্বুদ্ধ করে চলেছে।

Next Article