কাবুল: সাংবাদিকদের বুম গুলি ধরা সামনে, জবাব দিচ্ছেন একের পর এক প্রশ্নের। তবে তিনি কে, সেটা বোঝাই দায়, কারণ মাথা থেকে পা অবধি সর্বাঙ্গই কালো কাপড়ে ঢাকা তাঁর। তালিবান রাজে এভাবেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে দেখা গেল এক আফগান মহিলাকে (Afghan Women)। ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সেই ছবি (Viral Picture)। প্রশ্ন উঠছে নারী স্বাধীনতা বলতে কি এর কথাই বুঝিয়েছিল তালিবানরা (Taliban)।
৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালিবান শাসনকালে জারি ছিল শরিয়া আইন (Sharia Law)। সেই আইনে নারীদের শিক্ষা বা চাকরি করার অধিকার ছিল না। বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য স্বামী বা রক্তের সম্পর্কযুক্ত কোনও পুরুষসঙ্গীকে সবসময় সঙ্গে নিতে হত। উচু স্বরে কথা বলা বা পায়ের আওয়াজ শুনতে যাতে না পাওয়া যায়, তা নিয়েও কড়া নির্দেশিকা ছিল। মহিলাদের সর্বদা হিজাব বা বুরখা পড়ে থাকতে হত সেই সময়ে।
২০০১ সালে মার্কিন বাহিনী তালিবানের হাত থেকে আফগানিস্তানের শাসনক্ষমতা কেড়ে নেয়। কিন্তু সময়ের খেলায় ২০ বছর পর ফের আফগানিস্তানের মসনদেই বসেছে তালিবানরা। তবে এ বার তাদের দাবি, আগের তুলনায় অনেক বদলে গিয়েছে তারা। নারী শিক্ষা ও কাজ করার স্বাধীনতা দেবে তারা, তবে তা শরিয়া আইন মেনে। যদিও বাস্তবে ঘটছে ভিন্ন ঘটনাই।
দীর্ঘ সময় ধরে আফগানিস্তানে মহিলাদের হিজাব বা বুরখা পরার উপর কোনও কড়াকড়ি ছিল না। স্বেচ্ছায় পরতেন অনেকে, তবে না পরলেও কোনও শাস্তির মুখে পড়তে হত না। তালিবান ক্ষমতা দখলের পরই জানিয়ে দিয়েছিল, সর্বদা বুরখা পরার প্রয়োজন নেই, হিজাব পরলেই যথেষ্ট। এ দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য হিজাবের পাশাপাশি নিকাব পরার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহেই তালিবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের ডেপুটি প্রধান আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক ঘোষণা করেন, “মহিলাদের খেলাধুলোর কোনও প্রয়োজন নেই। এতে শরীর প্রদর্শন হয়, যা আইন বিরুদ্ধ।”
মহিলাদের শিক্ষাব্য়বস্থা নিয়েও নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে তালিবান। ফতেয়ায় বলা হয়েছে, মহিলারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারলেও তারা ছাত্রদের সঙ্গে একই কক্ষে বসতে পারবেন না। আলাদা ক্লাসরুমের ব্যবস্থা না করা গেলে ১৫ জনের বেশি পড়ুয়া থাকলেও মাঝখানে পর্দা টাঙিয়ে দিতে হবে। মহিলাদের ক্লাসও ৫ মিনিট আগে শেষ করতে হবে, যাতে বেরনোর সময় পুরুষদের সঙ্গে দেখা না হয়। শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে, একমাত্র মহিলা শিক্ষিকারাই ছাত্রীদের পড়াতে পারবেন। একান্তই যদি শিক্ষিকা না পাওয়া যায়, তবে ভাল চরিত্রের কোনও বয়স্ক শিক্ষককে নিয়োগ করা হবে।
This is not her choice! This has been chosen for her. pic.twitter.com/hjc3wq8oHY
— Shabnam Khan Dawran (@shabnamdawran) September 11, 2021
এই ধরনের বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়ার পরই মাথা থেকে পা অবধি কালো কাপড়ের আস্তরণে ওই মহিলার ছবি প্রকাশ পেতেই তালিবানি আতঙ্কের টের পাওয়া গিয়েছে। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “এটা তাঁর পছন্দ নয়, তাঁর জন্য এটা বেছে নেওয়া হয়েছে”। এই দুটি বাক্যই অনেক অর্থ বুঝিয়ে দেয়।
ছবিটি শেয়ার করেছেন শবনম খান দাওরান, যিনি নিজেও সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন তালিবানি শাসন শুরু হওয়ার পরই। আফগানিস্তানের একটি সংবাদমাধ্যমের সংবাদ পাঠিকা শবনম তালিবানি শাসন শুরু হওয়ার পরই অফিস গেলে তার জন্য আর দরজা খোলেনি। তাঁকে বলা হয়েছিল, “নতুন সরকার এসেছে, তোমার আর প্রয়োজন নেই, বাড়ি যাও।”
আরও পড়ুন: Afghanistan: ২০২২-এর মধ্যেই কী পরিণতি ৯৭ শতাংশ আফগানের? বিপদের বার্তা রাষ্ট্রপুঞ্জের