দুবাই: পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের জন্য যে অনুকূল সবরকম পরিবেশ রয়েছে, শুক্রবার দুবাইয়ের বাণিজ্য সম্মেলনে তা বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় লগ্নির ক্ষেত্রে শিল্পপতিরা কী কী সুবিধা পান, সেকথাও সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর উদ্যোগপতিদের কাছে তুলে ধরেন তিনি। আজকের বাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বৈদেশিক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী হানি বিন আহমেদ আল জ়েউদি। বাণিজ্য সম্মেলনে এক মঞ্চে বক্তব্য রাখার পাশাপাশি উভয়ে আলাদা বৈঠক করেন। সেখানেই বাংলার সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বাণিজ্য বিষয়ক বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে আলোচনা হয় দুই মন্ত্রীর। কেন বাংলায় বিনিয়োগ করবেন শিল্পপতিরা? কী কী সুবিধা পাবেন তাঁরা? সেকথাও এদিন দুবাইয়ের বাণিজ্য সম্মেলনে নিজেই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাণিজ্য সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুবাইয়ের শিল্পপতিদের কাছে তুলে ধরলেন বাংলার উৎকর্ষতার কথা। ইউনেসকো বাংলাকে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সেরা টুরিজ়ম ডেস্টিনেশন হিসেবে ঘোষণা করার কথা, কন্যাসন্তানদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলা রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রথম পুরস্কার পাওয়ার কথা এদিন ভিন দেশের শিল্পপতিদের জানালেন মমতা। একইসঙ্গে স্কিল ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে দেশের মধ্যে বাংলার প্রথম স্থানে থাকার কথাও বাণিজ্য সম্মেলনে বললেন মুখ্যমন্ত্রী। জানালেন, ‘বাংলার কৃষকদের আয় অন্য যে কোনও রাজ্যের থেকে বেশি। এখানে শ্রমিকদের জন্যও সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প রয়েছে।’ বাংলায় যে প্রচুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে সে কথাও জানালেন তিনি। বললেন, ‘আমাদের এখানে এত প্রতিভা রয়েছে, তা গোটা বিশ্বের কাছে বেঞ্চমার্ক।’
চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্য গোটা বিশ্ব দেখেছে। সেই কর্মযজ্ঞেও যে বাংলার থেকে ৪০ জন বিজ্ঞানীর অবদান রয়েছে, সে কথাও এদিন দুবাইয়ের বাণিজ্য সম্মেলনে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার পড়ুয়াদের মেধার কথা ব্যাখ্যা করার সময় মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা হার্ভার্ড থেকে কেমব্রিজ সর্বত্র রয়েছেন। আমাদের এখানে দক্ষ কর্মীও অনেক। আমরা ৩০০-র বেশি আইটিআই ও পলিটেকনিক তৈরি করেছি। অনেক ডাক্তার রয়েছে। নার্সিং ট্রেনিং কলেজ রয়েছে।’
বাংলায় বিনিয়োগ করা মানে যে শুধু বাংলা নয়, আশপাশের প্রতিবেশী দেশ ও রাজ্যগুলিতেও ব্যবসার সুযোগ তৈরি হবে, তাও এদিন দুবাইয়ের বাণিজ্য সম্মেলনে বোঝালেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ হল বাংলাদেশের গেটওয়ে। বাংলাদেশের লোকসংখ্যা যোগ করলে, আমাদের ভাষায় কথা বলা লোকের সংখ্যা সারা বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম এবং এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। এখানে যে বাজার ও চাহিদা রয়েছে, তা একটা হিউম্যান ব্যাঙ্কের মতো। বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বন্দর, বিমানবন্দর, সড়কপথে ও রেলপথের মাধ্যমে যুক্ত। বাংলার ঠিক পাশেই। পাঁচ মিনিটের দূরত্বে। বিমানে মাত্র আধ ঘণ্টা। নেপাল-ভূটানও আধ ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে যেতে সময় লাগবে আধ ঘণ্টা। বাংলার থেকে দুবাইয়ের দূরত্বও বেশি নয়, মাত্র চার ঘণ্টা।’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, যদি বাংলায় ব্যবসা করেন, তাহলে সংস্থাগুলি উত্তর পূর্বের বাজারের চাহিদাকেও ব্যবহার করার সুবিধা পাবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গেও যে পশ্চিমবঙ্গের যথেষ্ট সুসম্পর্ক রয়েছে, সেকথাও তুলে ধরেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, বাংলায় বিনিয়োগ ও লগ্নির জন্য সবরকম অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। দুবাইয়ের উদ্যোগপতিদের উদ্দেশে বললেন, ‘বাংলায় আমাদের পরিকাঠামো পুরো তৈরি। ২০০ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক রয়েছে। জমি রয়েছে। জমি নীতি রয়েছে। জমি ম্যাপ রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমি লিজ দেওয়ার বদলে ফ্রি হোল্ড রাইটস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের পর্যটন নীতিও রয়েছে। আমাদের এখানে দার্জিলিং, কালিম্পং রয়েছে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আছে, গভীর জঙ্গল রয়েছে। গভীর সমুদ্র রয়েছে। কী নেই? সব আছে।’