ব্যাঙ্কক: ২০১৫ সালে একটি খবর শিহরিত হয়েছিল গোটা কলকাতা। জানা গিয়েছিল, ৩ নং রবিনসন স্ট্রিটের বাড়িতে দীর্ঘ ৬ মাস ধরে বোনের মৃতদেহের সঙ্গে বাস করছিলেন পার্থ দে এবং তাঁর বাবা। তারপর থেকে অনেকগুলো দিন কেটে গিয়েছে। এবার সেই ঘটনাকেও ছাপিয়ে গেল থাইল্যান্ডের এক বৃদ্ধের কাহিনি। স্ত্রীর মৃত্যুর পর দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে স্ত্রীর মৃতদেহের সঙ্গেই বাস করছিলেন ৭২ বছরের চার্ন জনওয়াটকাকাল। তবে, সম্প্রতি স্ত্রী-এর যথাযথ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন তিনি। আর তাতেই সামনে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা।
জানা গিয়েছে ব্যাঙ্ককের ব্যাং খেন জেলায় বাড়ি চার্ন জনওয়াটকাকালের। একসময় তিনি ছিলেন রয়্যাল থাই আর্মির একজন ডাক্তার। আর তাঁর স্ত্রী ছিলেন জনস্বাস্থ্য দফতরের এক কর্মী। ২০০১ সালে এক জন্মগত রোগে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। কিন্তু, স্ত্রীকে তখনই বিদায় জানাতে প্রস্তুত ছিলেন না চার্ন। তাই, বাড়িতেই একটি কফিনে স্ত্রীর মৃতদেহ রেখে দিয়েছিলেন তিনি। কফিনবন্দি স্ত্রীর দেহের সঙ্গে নিয়মিত কথাও বলতেন তিনি, যেন স্ত্রী বেঁচেই রয়েছে। স্ত্রীর রফিনের পাশেই ঘুমাতেন। আর এভাবেই কেটে গিয়েছে ২১টা বছর। স্ত্রীকে শেষ বিদায় আর জানানো হয়নি। তবে, স্ত্রীর মৃত্যুর নিবন্ধিকরণ করিয়েছিলেন। তাই কোনও আইনি জটিলতা ছিল না।
সম্প্রতি অবশ্য অন্য ভাবনা ভিড় করেছিল চার্ন জনওয়াটকাকালের মাথায়। তাঁর মৃত্যু হলে, স্ত্রীর দেহের যথাযথ সৎকার হবে না, এই চিন্তা থেকেই বৃদ্ধ অবশেষে স্ত্রীকে শেষ বিদায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর জন্য তিনি ফেট কাসেম ব্যাঙ্কক ফাউন্ডেশন নামে এক দাতব্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তাদের সাহায্য চান। ওই সংস্থাই তাঁর স্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বন্দোবস্ত করে। ওই সংস্থার কর্মীরাই চার্নের বাড়ি গিয়ে প্রায় পচে যাওয়া কফিনটি উদ্ধার করে। সেই ঘটনার একটি ভিডিয়ো, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, তাদের ছোট্ট ঘরটি খুবই নোংরা অবস্থায় ছিল। রাশি রাশি প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং অন্যান্য আবর্জনা পড়েছিল কফিনটির পাশে।
পরে, দাতব্য সংস্থার কর্মীরা পচা কফিনটি থেকে চার্নের স্ত্রীর কালো হয়ে যাওয়া কঙ্কালটি তুলে, সাদা কাপড়ে জড়িয়ে একটি নতুন কফিনে স্থানান্তরিত করেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, স্ত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে গিয়ে আবেগে বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন ৭২ বছরের বৃদ্ধ। স্ত্রীর কঙ্কাল ছুঁয়ে সজল চোখে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি কয়েক দিনের জন্যই দূরে যাচ্ছ। আবার ঘরে ফিরে আসবে। বেশি দেরি হবে না, কথা দিলাম।’
জানা গিয়েছে, জনওয়াটকাকাল দম্পতির দুই পুত্রসন্তান রয়েছে। মায়ের মৃতদেহের সঙ্গে বাবার বসবাস করার বিষয়টি তাঁরা জানতেন। বাবাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু এই নিয়ে একমত হতে না পারায় দুজনেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। স্থানীয় স্তরেও অনেকেই জানতেন বিষয়টি। তবে, বিষয়টি তাঁরা মেনে নিয়েছিলেন। বিষয়টিকে জনওয়াটকাকাল দম্পতির অনন্ত প্রেমের প্রকাশ হিসাবেই দেখতেন তাঁরা।