জেনেভা: ওমিক্রন (Omicron Variant) নিয়ে সতর্ক থাকলেও, আতঙ্কিত নয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization)। গোটা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্য়ারিয়েন্ট ওমিক্রন। প্রাথমিক তথ্যে জানা গিয়েছে, যারা আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের যেমন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনই আবার টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে স্বস্তি একটাই, ওমিক্রনে সংক্রামিত হলে বাকি ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় কম অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, বুধবার এমনটাই জানাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেয়াসিস (Tedros Adhanom Ghebreyesus) বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। তবে বেশ কিছু এমন প্রমাণও মিলেছে, যাতে দেখা গিয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রনে আক্রান্তরা কম অসুস্থ হয়েছেন।”
তবে এখনই ওমিক্রন নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছিলেন হু প্রধান। নতুন ভ্যারিয়েন্ট হওয়ায়, এর চারিত্রিক গঠন, বৈশিষ্ঠ্যও বাকি ভ্য়ারিয়েন্টের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। তাই এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে ভালভাবে জানতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে এই মুহূর্তে যাতে সমস্ত দেশই তাদের কড়া নজরদারি জারি রাখে, তার অনুরোধ করেন গেব্রেয়াসিস। এরফলে ওমিক্রনের সংক্রমণ সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট চিত্র উঠে আসবে বলেই তিনি জানান।
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তরা গুরুতর অসুস্থ না হলেও, নজরদারিতে সামান্য খামতিও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। তিনি বলেন, “এই সময়ে যো কোনও খামতিরই মাশুল দিতে হতে পারে প্রাণ দিয়ে, তাই অতি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এমার্জেন্সি ডিরেক্টর মাইকেল রায়ানও গ্রেবেয়াসিসের সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, “এখনও অবধি যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তার উপর ভিত্তি করে বলা যায়, দ্রুত এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়ি্য়ে পড়ছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের থেকেও এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট অধিক সংক্রামক বলে মনে করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “অধিক সংক্রামক হওয়ার অর্থ এই নয় যে, ভাইরাসকে আটকানো সম্ভব নয়, তবে এটা বলাই যেতে পারে মানবদেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম এই ভাইরাস। এই কারণেই আমাদের নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে, যাবতীয় বিধিনিষেধ অনুসরণ করে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে হবে। যদি আগের ভ্যারিয়েন্টগুলির তুলনায় ওমিক্রন কম ভয়ঙ্কর হিসাবে প্রমাণিত হয়, তবুও ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। দ্রুতগতিতে এই সংক্রমণ ছড়ানোয় অধিক সংখ্যক মানুষ অসুস্থ হবেন। এরফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে এবং মানুষ ফের মৃত্যুর মুখেই চলে যেতে পারেন।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা টিকাকরণের উপরও বিশেষ জোর দিয়েছেন। তাদের মতে, ওমিক্রনের বিরুদ্ধে করোনা টিকা কম কার্যকর হলেও, তা গুরুতর অসুস্থ হওয়া থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথনও টিকাকরণ নিয়ে একটি গবেষণায় প্রাথমিক তথ্য উল্লেখ করে জানিয়েছেন, ফাইজডার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। সেই কারণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের উপরও বিশেষ জোর দিয়েছেন তিনি।