অসলো: গোটা বিশ্ব তাঁকে চেনে ‘অহিংসার প্রতীক’ হিসেবে। কিন্তু কখনও নোবেল শান্তি পুরস্কার পাননি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। অথচ, বেশ কয়েকবার এই পুরস্কার পাওয়ার খুব কাছাকাছি এসেছিলেন তিনি। ১৯৩৭, ১৯৩৮, ১৯৩৯, ১৯৪৭ এবং ১৯৪৮ – পাঁচবার মনোনীত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, একবারও পুরস্কার দেওয়া হয়নি তাঁকে। কিন্তু কেন? নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয় নরওয়ের নোবেল পুরস্কার প্যানেল। মহাত্মা গান্ধীর ১৫৪তম জন্মবার্ষিকীতে, কেন তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়নি, তার কারণ ব্যাখ্যা করল তারা।
১৯৩৭ সালে, প্রথমবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রাপক হিসেবে মহাত্মা গান্ধীকে মনোনীত করেছিলেন নরওয়ের সাংসদ ওলে কোলবজর্নসেন। সেই বছরের তেরো জন মনোনীত প্রার্থীর একজন ছিলেন মহাত্মা। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত পুরস্কার পেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের চেলউডের লর্ড সিসিল। ১৯৩৮ এবং ১৯৩৯-এও কলবজর্নসেন আরও দুবর গান্ধীর নাম মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু, মহাত্মাকে পুরস্কার দেওয়া হয়নি। কিন্তু কেন?
নরওয়ের নোবেল পুরস্কার প্যানেল জানিয়েছে, গান্ধী শান্তির পক্ষে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু এই বিষয়ে তাঁর ধারাবাহিকতার অভাব ছিল। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাঁর বেশ কিছু অহিংস প্রচার, কালক্রমে হিংসা ও সন্ত্রাসবাদে পরিণত হয়েছিল। যেমন, ১৯২০-২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময়, উত্তেজিত জনতা বহু পুলিশ কর্মী-অধিকারিককে হত্যা করেছিল। ব্রিটিশ ভারতের যুক্ত প্রদেশের (উত্তর প্রদেশ) গোরখপুর জেলার চৌরি চৌরায় একটি থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, প্যানেলের একাংশের মতে, তাঁর আদর্শগুলি প্রাথমিকভাবে সর্বজনীন নয়, বরং বড় বেশি ভারত ভিত্তিক। নোবেল কমিটির উপদেষ্টা জ্যাকব এস ওয়ার্ম-মুলার বলেছেন, “দক্ষিণ আফ্রিকায় তার সংগ্রাম শুধুমাত্র ভারতীয়দের পক্ষে ছিল। অথচ, সেখানকার কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনযাত্রার অবস্থা আরও খারাপ ছিল। তাঁদের জন্য গান্ধী কোনও লড়ই করেননি।” তাছাড়া, ১৯৬০ পর্যন্ত, নোবেল শান্তি পুরস্কার একচেটিয়াভাবে ইউরোপীয় এবং মার্কিনীদেরই দেওয়া হয়েছে।
নোবেল প্যানেল আরও বলেছে, মহাত্মা গান্ধী সেই সময়ের অন্যান্য শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের থেকে অনেকটাই আলাদা ছিলেন। তাঁকে আন্তর্জাতিক আইনের প্রবক্তা বলা যাবে না। তিনি কোনও মানবতাকামী সমাজকর্মীও ছিলেন না। আন্তর্জাতিক শান্তি কংগ্রেসের সংগঠকও ছিলেন না।
“There are many causes that I am prepared to die for but no causes that I am prepared to kill for.”
Remembering Mahatma Gandhi the evening before his 154th birthday. Gandhi was nominated for the #NobelPeacePrize on 12 occasions.
Read more: https://t.co/Q3cniIiZG9 pic.twitter.com/bwu4CnOP72
— The Nobel Prize (@NobelPrize) October 1, 2023
১৯৩৯-এর প্রায় এক দশক পর, ১৯৪৭ সালে ফের সম্ভাব্য নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী। সেই বছর সংক্ষিপ্ত তালিকায় মহাত্মা গান্ধী-সহ ছয়জনের নাম ছিল। তবে, ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের মধ্যে সেই বছর গান্ধীকে পুরস্কার দিতে প্রবল অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন সেই সময়ের নোবেল কমিটির পাঁচ সদস্যের তিনজন।
১৯৪৮ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখের মাত্র দুই দিন আগে, ৩০ জানুয়ারি হত্যা করা হয়েছিল মহাত্মা গান্ধীকে। নোবেল ফাউন্ডেশনের বিধি অনুসারে, কখনও কাউকে মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়া হয়নি। নরওয়েইয়ান নোবেল ইনস্টিটিউটের তৎকালীন ডিরেক্টর, অগস্ট শোউ, গান্ধীকে মরনোত্তর পুরস্কার প্রদানের বিষয়ে সুইডিশ নোবেল কমিটির মতামত জানতে চেয়েছিলেন। উত্তর এসেছিল নেচিবাচক। সুইডিশ নোবেল কমিটি জানিয়েছিল, গান্ধীকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করার পর যদি তাঁর মৃত্যু হত, তাহলে তাঁকে মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়া যেত। শেষ পর্যন্ত উপযুক্ত জীবিত প্রার্থীর অভাবে সেই বছর কাউকেই নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়নি নরওয়েইয়ান নোবেল কমিটি।