Canada: কানাডা দেশই থাকবে না আর? তলে তলে কি রাস্তা তৈরি করে ফেলেছেন ট্রাম্প?
USA-Canada: একবার নয়, অন্তত তিনবার সে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। এবং সেই প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়েও গিয়েছিল। প্রথম মার্কিন সংবিধানে কানাডাকে আমেরিকার অংশ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আর সেই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু ব্যাপারটা বেশিদূর এগোয়নি।
ওটায়া: নিজের দেশে এখন ট্রুডোর মুণ্ডপাত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে গুচ্ছ, গুচ্ছ বিলো-দ্য-বেল্ট মন্তব্য ভেসে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশের মানুষের থেকে এহেন হেনস্থা এর আগে ট্রুডোকে ফেস করতে হয়নি। আসলে ট্রুডো যেভাবে দেশের নাম ডুবিয়েছেন, কানাডিয়ানরা সেটাই হজম করতে পারছেন না। কী এমন করলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী? তেমন কিচ্ছু না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সপাটে একটা থাপ্পড় খেয়েছেন। এমন থাপ্পড়, যেটা চোখে দেখা যায় না। কিন্তু দাগটা থেকে যায়। অপমানের দাগ।
দু-দিন আগে ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের পেন্টহাউসে গিয়েছিলেন ট্রুডো। একটা আর্জি নিয়েই গিয়েছিলেন। কী আর্জি? না, মিঃ ট্রাম্প, আপনি কানাডার উপর ২৫ শতাংশ ট্যাক্স বসানোর কথা বলেছেন বটে। কিন্তু এটা করতে যাবেন না প্লিজ। করলে, আমাদের বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। ট্রাম্প উত্তরটা বেশ মজার। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ইন ওয়েটিং বলে দেন, বাড়তি ট্যাক্স তো বসবেই। ট্যাক্স দিতে না পারলে আমেরিকার সঙ্গে জুড়ে যান। আমেরিকার একান্নতম রাজ্য হিসাবে কানাডাকে স্বাগত জানাতে আমরা তৈরি।
ট্রাম্প কথাটা মজার করে বলেছেন, বা অপমান করার জন্য, তা জানা নেই। কানাডার প্রধানমন্ত্রী কী প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন, তাও জানা নেই। কিন্তু কানাডার বেশিরভাগ মানুষ এই মন্তব্যকে সপাট থাপ্পড় হিসাবেই দেখছেন। কানাডার বিরোধী দল, রাজনৈতিক সংগঠন এমনকী সাধারণ মানুষও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন।
তাঁদের অভিযোগ, বিদেশি কোনও দেশের নেতা এই ধরণের মন্তব্য করার পর চুপ করে থাকার অর্থ অপমান হজম করা। ট্রুডো ঠিক সেটাই করেছেন ও দেশের মুখে চুনকালি দিয়েছেন। পরে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেন ট্রাম্প। কানাডার পতাকার পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকার হবু প্রেসিডেন্ট। উপরে লেখা ‘ওহ কানাডা’। এতে ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
ইতিহাসের গতি একটু অন্য দিকে বইলে কানাডা, হয়ত আমেরিকারই একটা প্রদেশ হতো। একবার নয়, অন্তত তিনবার সে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। এবং সেই প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়েও গিয়েছিল। প্রথম মার্কিন সংবিধানে কানাডাকে আমেরিকার অংশ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আর সেই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু ব্যাপারটা বেশিদূর এগোয়নি।
১৯৮৮ সালে ফের আমেরিকার সঙ্গে সংযুক্তির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয় কানাডার পার্লামেন্টে। সেই সময় কানাডিয়ান লিবারালদের নেতা জন টার্নার একটা ঐতিহাসিক স্পিচ দিয়েছিলেন। টার্নার বলেছিলেন, আমরা কানাডার স্বাধীনতাকে বন্ধক রাখিনি। কানাডা সহযোগী, লেজুড় নয়।
আসলে কানাডা নিয়ে অনেকের মনে বহু ভুল ধারণা আছে। আমেরিকাকে বাদ দিলে কানাডা একটা মাঝারিমানের দেশ ছাড়া আর কিছুই নয়। কানাডার প্রতিরক্ষা, আমদানি-রফতানি এমনকি বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারও অতিরিক্ত আমেরিকা নির্ভর। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, কানাডার রফতানির ৭৫ শতাংশ শুধু আমেরিকায় রফতানি হয়। কানাডার বিদেশনীতিও কার্যত আমেরিকার কপি-ক্যাট এডিশন। সবচেয়ে বড় কথা, দু-দেশের মধ্যে ৮ হাজার ৮৯১ কিমির বর্ডার। ভারতের সঙ্গে চিন ও পাকিস্তানের বর্ডারের থেকেও অনেকটা দীর্ঘ। আর এই ৮ হাজার ৮৯১ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ৩০০ কিলোমিটারে মানুষের বসবাস। প্রবল ঠাণ্ডার জন্য কয়েক হাজার কিলোমিটারের মানুষের বসবাস সম্ভবই নয়। কানাডার একার পক্ষে এই বর্ডার সামলানো সম্ভব নয় – তাই আমেরিকার সঙ্গে মিশে যাওয়াই ভাল। এমনও একটা প্রস্তাব ১৯৬২ সালে উঠেছিল কানাডার পার্লামেন্টে।