নয়া দিল্লি : আজ থেকে শুরু হল বাজেট অধিবেশন। মঙ্গলে ২০২২-২৩ আর্থিক বর্ষের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তার আগে আজ সংসদে পেশ করলেন আর্থিক সমীক্ষা। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের ভাষণের পর লোকসভায় ২০২১-২২ আর্থিক বর্ষের হিসেব নিকেশ পেশ করলেন নির্মলা। প্রাক বাজেট এই আর্থিক সমীক্ষায় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং কিছু পলিসি বাস্তবায়নের পরামর্শ তুলে ধরা হয়।
২০২২-২৩ ফিসক্যাল বর্ষের (এপ্রিল ২০২২ থেকে মার্চ ২০২৩) জন্য দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ৮-৮.৫ শতাংশ থাকবে বলে এই সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে। গত ফিসক্যাল বর্ষে (এপ্রিল ২০২১ থেকে মার্চ ২০২২) এই হার ছিল ৯.২ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এই বছর দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার হার কম রাখা হয়েছে। মহামারী সত্ত্বেও ভারত চলতি অর্থবছরে (২০২১-২০২২) ৯.২ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। বিশ্বের দ্রুততম অর্থনীতি হিসাবে বৃদ্ধি পেতে চলেছে ভারত। ২০২২ এর আর্থিক বর্ষে কৃষি খাত ৩.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। গত বছরের ৮.৪ শতাংশ সংকোচনের পরে এই অর্থবছরে পরিষেবা খাত ৮.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। উল্লেখ্য, আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশের আগে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্থা একটি সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির হারের ধারণা দিয়েছিল। যেমন, বিশ্ব ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৮.৭ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ভারতের। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের (এনএসও) অগ্রিম অনুমান অনুসারে, ভারতীয় অর্থনীতি চলতি অর্থবছরে ৯.২ শতাংশ বৃদ্ধির রেকর্ড গড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমান, ৯.৫ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম হতে পারে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার। এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষার অনুমান অনুযায়ী, ২০২১-২২ আর্থিক বছরে ভারতে ১১ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে। তবে এই সব অনুমান ধূলিসাৎ করে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৮-৮.৫ শতাংশের কাছেই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই সমীক্ষা রিপোর্টে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরের অবস্থার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে এবং সেই সেক্টরে বৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সংস্কারের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। এই সমীক্ষা ভারতীয় অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে সরবরাহ সংক্রান্ত সমস্যাগুলির উপর নজর দেয়। অর্থনৈতিক সমীক্ষায় সবথেকে বেশি যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হল আগামী অর্থ বছরের জিডিপির অনুমান। মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা (CEA) এর নেতৃত্বে একটি দল এই সমীক্ষাটি লিখিতভাবে তৈরি করে। প্রসঙ্গত, ভি অনন্ত নাগেশ্বরনকে গত শুক্রবারই দেশের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করে কেন্দ্র। তবে মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরন দায়িত্ব নেওয়ার আগে ডিসেম্বরেই তৈরি হয়েছে আর্থিক সমীক্ষার এই রিপোর্টটি। প্রাক্তন মুখ্য উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রামানিয়ামের নেতৃত্বে অর্থ মন্ত্রকের আধিকারিকরা ২০২১-২২ অর্থবর্ষের সমীক্ষার রিপোর্ট তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছেন।
আর্থিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ২০২০-২১ আর্থিক বর্ষে দেশের অর্থনীতি ৭.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। যেখানে ২০২০ সালের কোভিড-১৯ অতিমারীর কিছু মাস আগে প্রকাশিত সমীক্ষায় জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল ৬-৬.৫ শতাংশ। ২০২০ সালের মার্চের শেষের দিকে সংক্রমণ ঠেকাতে দেশ লকডাউনের পথে হাঁটায় বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজকর্ম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। তবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছিল অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার জন্য।
আরও পড়ুন : Budget 2022: ‘ভোট তো চলতেই থাকবে’, সাংসদদের খোলা মনে বাজেট নিয়ে আলোচনার বার্তা প্রধানমন্ত্রীর